ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ৯ই মে ২০২৪, ২৭শে বৈশাখ ১৪৩১


ব্লু হোয়েল-মমো-গ্র্যানিতে পুলিশের নিষেধাজ্ঞা


৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:১৮

বাংলাদেশে প্রাণঘাতী ব্লু-হোয়েল, মোমো ও গ্র্যানি গেম খেলায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার বিভাগ কর্তৃপক্ষ। এই তিনটির যেকোন একটি গেম খেললেই খেলোয়ারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে ডিএমপি। জব্দ করা হবে তার মোবাইল ফোনসহ যাবতীয় ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পুলিশের সাইবার নিরাপত্তা ও অপরাধ দমন বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, এই অনলাইন গেমগুলো খেলোয়ার এবং তার পরিবারের জন্য হুমকিস্বরূপ। যেকোন সময় ঘটাতে পারে অনাঙ্খিত মৃত্যু। গেমগুলো তরুণ সমাজকে হতাশাগ্রস্ত ও মৃত্যুর দিকে ধাবিত করে। এই বিবেচনায় বাংলাদেশে গেমগুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সাইবার ক্রাইম ইউনিট। ভারত-পাকিস্তানেও এই ৩টি গেম নিষিদ্ধ রয়েছে।

এ গেম না খেলার অনুরোধ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এই ৩টি গেমের কোনো একটি খেলছে, এমন কাউকে যদি শনাক্ত করা হয় তাহলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। এছাড়া আমরা দেশবাসীকে অনুরোধ করছি- যদি তাদের আশেপাশের কেউ এই গেমটি খেলে তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে সাইবার ক্রাইম ইউনিটকে তাদের বিষয়ে তথ্য দিন।

তবে বাংলাদেশে প্রাণঘাতী এসব গেমের কোনো লিংক বা গেম খেলছে এমন কাউকে সনাক্ত করা যায়নি বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি।

ব্লেড দিয়ে হাত কেটে তিমি মাছ আঁকা আর আত্মহত্যার মতো পরিণতির গেম ব্লু হোয়েল ২০১৭ সালের শুরুর দিকে ভারত-চীনসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

ব্লু হোয়েল গেমে অনলাইনে একটি গ্রুপ তৈরি করে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এতে মোট ৫০টি ধাপ বা স্টেপ থাকে। ধাপগুলো খেলার জন্য ওই গ্রুপ বা পরিচালক খেলতে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ দিয়ে থাকে। প্রতিযোগী সে চ্যালেঞ্জ পূরণ করে তার ছবি আপলোড করে। শুরুতে মোটামুটি সহজ এবং কিছুটা চ্যালেঞ্জিং কাজ দেয়া হয়। যেমন- মধ্যরাতে ভূতের সিনেমা দেখা, খুব সকালে ছাদের কিনারা দিয়ে হাঁটা, ব্লেড দিয়ে হাতে তিমির ছবি আঁকা ইত্যাদি। ধাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কঠিন ও মারাত্মক সব চ্যালেঞ্জ দেয় পরিচালক। যেগুলো অত্যন্ত ভয়াবহ এবং সর্বশেষ ধাপ হলো আত্মহত্যা করা। অর্থাৎ গেম শেষ করতে হলে প্রতিযোগীকে অাত্মহত্যা করতে হবে।

শুরুতে তুলনামূলক সহজ এবং সাহস আছে কিনা- এমন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়ায় তরুণ-তরুণীরা আকৃষ্ট হয়। একবার এ খেলায় ঢুকে পড়লে বের হয়ে আসা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এমনকি খেলার মাঝপথে চলে আসতে চাইলে প্রতিযোগীকে ব্লাকমেইল করা হয়। এছাড়া তার আপনজনদের ক্ষতি করার হুমকিও দেয়া হয়। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক কথা হচ্ছে- গেমটি একবার মুঠোফোনে ব্যবহারের পর তা আর ডিলিট করা যায় না।

বাংলাদেশে এই গেম খেলে এমন দুজনকে সনাক্ত করে রিহ্যাবিলিটেশন করা হয়েছে। এর ভয়াবহতার বিষয়টি মাথায় রেখে বাংলাদেশে ব্লু হোয়েলের সব লিংক বন্ধের নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট।

পারিবারিক সচেতনতার মাধ্যমে বাংলাদেশকে ব্লু-হোয়েল মুক্ত করার সময় নতুন আরেক মরণফাঁদ তৈরি হলো। নতুন এই ফাঁদের নাম ‘মোমো চ্যালেঞ্জ সুইসাইড গেম’। এই গেম ছড়িয়ে পড়ছে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপে।

‘মোমো’ একটি মেয়ের ছবি। যার দু’টি চোখ কোটর থেকে ঠেলে বেরিয়ে আসছে। তার পা দু’টি পাখির মতো। পায়ের আঙুল ও নখগুলো বড় বড়। মুখ অসম্ভব রকমের চওড়া। মাথা লম্বা। চুল ঘন কালো। দুই কানের পাশ দিয়ে তা অনেক নিচু পর্যন্ত নেমেছে। মাথার ওপরের দিকটা দেখলে মনে হবে, টাক আছে। তারই মাঝে কিছুটা জায়গা ছেড়ে ছেড়ে রয়েছে চুল।

মোমোর এই ছবি এঁকেছিলেন জাপানি শিল্পী মিদোরি হায়াশি। তবে শিল্পী হায়াশি কোনোভাবেই এই আত্মহত্যায় প্ররোচণ দেয়া গেমের সঙ্গে জড়িত নন। ২০১৬ সালে টোকিওর ‘ভ্যানিলা গ্যালারি’তে একটি শিল্প প্রদর্শনীর জন্যই ওই ‘মোমো’র ছবি এঁকেছিলেন হায়াশি।

নতুন এই গেমের ফাঁদে পড়ে ইতোমধ্যে আর্জেন্টিনার ১২ বছরের এক কিশোরী আত্মহত্যা করেছে।

এ বছর ‘মোমো’কে নিষিদ্ধ ঘোষণা হয়েছে ল্যাটিন আমেরিকায়। তবে হোয়াটসঅ্যাপ-মেসেঞ্জারের মাধ্যমে এর মধ্যেই গেমটি পৌঁছে গেছে এশিয়া, আফ্রিকা আর ইউরোপে। ভারতে অনেকেই এই গেমে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কাছে গিয়েও ফিরে এসেছেন।

এমএ