ঢাকা বুধবার, ১২ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১লা ফাল্গুন ১৪৩১


দেশে সার সংকট আর বিএডিসির চেয়ারম্যান ও সদস্য পরিচালকের পরিবারসহ বিদেশ ভ্রমন


২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮:৪১

ফাইল ছবি

দেশের মোট নন-ইউরিয়া সার আমদানিতে ৭০/৭৫ ভাগ দায়িত্ব বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল ডেভলেপমেন্ট কর্পোরেশন (বিএডিসি) এর যা বিগত সময়ে ৩০/৪০ ভাগ ছিলো। দুই থেকে তিন বছর আগে দেশে কোন সার সংকট ছিলো না। কিন্তু বর্তমানে বিএডিসি কতৃক সার আমদানির দায়িত্ব বেশি নেওয়ায় দেশে সার সংকট দেখা দিচ্ছে অন্যদিকে বিএডিসি এর সার আত্মসাতের ঘটনাও বেড়ে যাচ্ছে। এদিকে কৃষক সঠিক সময়ে সার পাচ্ছে না ফলে দেশে খাদ্য উৎপাদন হ্রাস পাবে অন্যদিকে সরকারের উচ্চ মূল্যে আমদানিকৃত সার পরিবহন ঠিকাদার কতৃক আত্মসাতের ঘটনা বেড়েই চলছে। বিগত বছরগুলোতে বিএডিসি এর ৩-৩.৫ লক্ষ মেঃ টন সার পরিবহন ঠিকাদার কতৃক আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। দেশের উত্তর বঙ্গের বিভিন্ন জেলাতে রবি মৌসূমে সারের সংকট দেখা দিয়েছে আগামি জানুয়ারিতে শুরু হতে যাচ্ছে বোরো মৌসূম, সেখানেও সার সংকটের আশংকা রয়েছে।

দেশের এমন টালমাটাল পরিস্থিতিতে বিএডিসি চেয়ারম্যান মো: রুহুল আমিন খান ও যুগ্ন সচিব পদমর্দাযা বিএডিসির সদস্য পরিচালক সার ব্যবস্থাপনা্ মো: আশরাফুজ্জামান সপরিবারে বিদেশ ভ্রমনে ব্যস্ত। এর আগে বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে আসছে বিভিন্ন সময়ে বিএডিসির সিন্ডিকেটের সার কেলেংকারি। তখনকার সিন্ডিকেট সদস্যগন হলেন বিএডিসির সাবেক কর্মকর্তা। একজন সাবেক পরিচালক সদস্য আব্দুস সামাদ এবং সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ, সদ্য বিদায়ি ড. নুরুননাহার চৌধুরী এনডিসির অতিরিক্ত সচবি সার ব্যবস্হাপনা ও উপকরন। যারা অদক্ষ আর ব্যাংক গ্যারান্টি ছাড়াই এসব প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়েছেন। লট অনুযায়ী সার বুঝে নেয়ার নিয়মও তুলে দেয় তারা।এদের মদমপুষ্ট প্রতিষ্ঠান বংঙ্গ ট্রেডার্স, প্যাসিফিক কনজ্যুমার গুডস ও স্বদেশ শিপিং।

বিএডিসি এর ১২৫টি গুদামের মধ্যে ৭০ শতাশং গুদামে কোন সার নেই। বিএডিসি এর গুদাম সমূহে সার না থাকায় চলমান রবি ও বোরো মৌসূমে বিএডিসি এর সার ডিলারদেরকে ডিসেম্বর ২০২৪ মাসের বরাদ্দের সার সময়মত দিতে পারছেনা ফলে মাঠ পর্যায়ে দেখা দিচ্ছে চরম সার সংকট। বিএডিসি’র বিভিন্ন সারের গুদাম সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায় কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, আটঘরিয়া, নাটোর, রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, লালমনিরহাট, শেরপুর, জামালপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, কুমিল্লা, ফেনী, কক্সবাজার, বরিশাল, বরগুনা এ সকল গুদামের অধিকাংশ জায়গা ফাকা সার নেই। গুদাম সমূহে শীপ ব্রোকার পরিবহন ঠিকাদারা দৈনিক যে সার গুদামে সরবরাহ করছে সেখান থেকে কিছু কিছু ডিলারকে সীমিত পরিমানে সার সরবরাহ করা হচ্ছে এবং তাদেরকে বলা হচ্ছে যে পরবর্তিতে সার আসলে সরবরাহ করা হবে।

বিএডিসির সার ডিলারদের মাঝে ডিসেম্বর ২০২৪ মাসে সারের বরাদ্দ ছিলো ডিএপি সার ১৮৩২৫৬ মেঃটন, টিএসপি সার ১৯৩৬৪৬ মেঃটন ও এমওপি সার ১২৮৭৯৬ মেঃটন । ডিসেম্বর ২০২৪ মাসে বিএডিসি এর অধিকাংশ গুদামে সারের মজুদ ছিলো খুবই সামান্য।

ময়মনসিংহ জেলাতে ডিসেম্বর ২০২৪ মাসে ডিএপি সার ৬৪৫৪ মেঃটন ও টিএসপি সার ৩২৬৬ মেঃটন সারের বরাদ্দের বিপরীতে মজুদ ছিলো মাত্র ডিএপি সার ৮৩৫ মেঃটন ও টিএসপি সার ৯১৬ মেঃটন, উল্লেখ থাকে যে নভেম্বর ২০২৪ সালে বরাদ্দকৃত টিএসপি সার ডিলারদের সরবরাহ করতে পারেনি।

নেত্রকোনা জেলাতে ডিসেম্বর ২০২৪ মাসে ৬৯৭১ মেঃটন ডিএপি সার বরাদ্দের বিপরীতে ডিএপি সারের মজুদ আছে মাত্র ২২০০ মেঃটন এবং ২৪০০ মেঃটন টিএসপি সার বরাদ্দের বিপরীতে টিএসপি সারের কোন মজুদ ছিলোনা।

লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারি, গাইবান্ধা ও রংপুর জেলাতে ডিসেম্বর ২০২৪ মাসে সারের বরাদ্দ ১৮৪৩৫ মেঃ টন কিন্তু অত্র অঞ্চলের গুদাম সমূহে ডিলারদের সরবরাহের জন্য কোন ডিএপি সারের মজুদ নেই।

এছাড়া রাজশাহি, নাটোর, নওগা ও চাপাইনবাবগঞ্জ জেলাগুলোতে ডিসেম্বর ২০২৪ মাসে ডিএপি সারের বরাদ্দ ১৯৯৭৯ মেঃ টন কিন্তু অত্র অঞ্চলের গুদামসমূহে ডিলারদের সরবরাহের জন্য ডিএপি সারের মজুদ আছে মাত্র ৬৫০০ মেঃ টন।