ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১


বিলুপ্ত চিনাধান স্বপ্ন দেখাচ্ছে পদ্মার চরাঞ্চলের কৃষকদের


২০ জুন ২০২০ ০৩:৪৪

সংগৃহিত

রাজশাহীর পদ্মা নদীর চরাঞ্চলজুড়ে চিনা ধান চাষ বেড়েছে। ফলন ভালো ও বাজারে দাম থাকায় বিলুপ্ত হওয়া এ ধান চাষে কৃষকদের মধ্যে নতুন করে আগ্রহ দেখা দিয়েছে।

রাজশাহী, গোদাগাড়ী, চারঘাট ও বাঘা উপজেলার মধ্যে দিয়ে পদ্মা নদী প্রবাহ। প্রতিবছর শীতকালে এ নদীর কয়েক হাজার হেক্টর চর জেগে উঠে। আর জেগে উঠা চরে নদী পাড়ে কৃষকেরা বাদাম, গম, পেয়াঁজ, আদা, রসুনসহ নানা সবজি চাষাবাদ করে থাকেন। তার মধ্যে অন্যতম চিনাধান চাষ। আর এ ধান চাষেই স্বপ্ন দেখছেন এখানকার কৃষকরা।

চিনাধান চাষ করতে কোন খরচ নাই বললেই চলে। বিনা খরচে এ ধান চাষ হয় বলে লাভও ভাল হয় চরঞ্চলের কৃষকদের। ছোট আকারে ধান হওয়া বাজারে এর আতব ধানের মত চাহিদা। চলতি বছরেও চিনাধানের বাম্পার ফলন হবে বলে কৃষকেরা আশা করছেন। ফলে পদ্মা নদীর হতদরিদ্র কৃষকের মুখে আনন্দের হাসি ফুটে উঠেছে।

চলতি বছর চিনাধান চাষ জেলার মধ্যে গোদাগাড়ী উপজেলার মধ্যে বেশি হয়েছে। এর মধ্যে রেলগেট মাদারপুর গ্রামের কৃষক জিয়াউর রহমান এবার চরে সাত বিঘা চিনাধান চাষ করছেন।

কথা হয় কৃষক জিয়াউরের সাথে তিনি বলেন, চিনাধান চাষ করতে খরচ বেশি হয়না। চর জেগে উঠলে শুধু মাত্র বীজ বোপন করলেই ধান বেড়ে উঠে। মাঝে একবার সামান্য সার প্রয়োগ করতে হয়। কীটনাশক প্রয়োগের প্রয়োজন পড়েনা।

তিনি আরো বলেন, প্রতি বিঘাই ৫ থেকে ৬ মন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যাই। বাজারে এর দামও ভাল। প্রতিমণ ধানের মূল্য তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়।

পদ্মা চরঞ্চলের একাধিক কৃষক জানান, বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই চিনা ধান না চিনলেও এক সময় এ এলাকায় এর ব্যাপক আবাদ ছিল। দীর্ঘদিন ধরে এ এলাকায় এর কোনো আবাদ না হওয়ায় এটি এখন মানুষের মাঝে প্রায় অচেনা ধানে পরিণত হয়েছে। অথচ এই চিনা ধানটি হয়ে উঠতে পারে এ এলাকার অর্থনৈতিক আরেকটি ফসল। এ এলাকায় এ ধান চাষের খুবই সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, এ অঞ্চলে কৃষদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে চিনা চাষ করে থাকেন। তবুও উপজেলায় এবার প্রায় আড়াই থেকে ৩০০ বিঘা জমিতে চিনাধান চাষ হয়েছে। আগামীতে কিভাবে এর ব্যাপকতা বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে।

চিনাধান সম্পর্কে কৃষি কর্মকর্তা আরো জানান, এক সময় খরা মৌসুমে অন্য ফসল যখন রোদে পুড়ে যেত তখন এ চিনা ধান আবাদ করে মানুষ দুই বেলা খেয়ে বেঁচে থাকত। অথচ অল্প পরিশ্রম করেই এ ফসল ফলানো সম্ভব। এ ধান যে কোনো ধরনের মাটিতে চাষ করা যায়। বেলে মাটিতেও এর ভালো আবাদ হয়। তাই পদ্মা নদীর ধুধু বালুর চরে এ ধানের চাষের খুবই উজ্জ্বল সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। বাজারে দাম ও পাওয়া যাই। বিনা খরচে ধান চাষ হওয়াই কৃষকের লাভের পাল্লা ভারি থাকে।