ঢাকা শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


কুমিল্লায় চাহিদার দ্বিগুণ মাছ উৎপাদন


১৫ জানুয়ারী ২০২০ ২১:২১

সংগৃহিত

সামগ্রিক চাহিদার দ্বিগুণ মাছ উৎপাদন হচ্ছে কুমিল্লায়। এক সময় ‘মাছের অভয়ারণ্য’ খ্যাত কুমিল্লায় এ বছর চাহিদা ও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে উৎপাদন হয়েছে দুই লাখ ১০ হাজার ৬৪২ মেট্রিক টন। জেলার মোট চাহিদা ৯৯ হাজার ৫০০ মেট্রিকটন। চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল দেড় লাখ টন। চাহিদার তুলনায় এক লাখ ১১ হাজার ১৪২ টন মাছ বেশি উৎপাদন হয় কুমিল্লায় যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬০ হাজার টনেরও বেশি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রাকৃতিক উৎস ছাড়াও কুমিল্লায় মাছের চাহিদা পূরণ ও অধিক উৎপাদনের মূল কারণ হচ্ছে প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষ। উৎপাদিত মাছের অর্ধেকের বেশি জোগান দিচ্ছে জেলার দাউদকান্দি, মেঘনা, হোমনা, মুরাদনগর ও তিতাস উপজেলার প্লাবন ভূমির মাছ। ভরা মৌসুমে দাউদকান্দির প্লাবন ভূমি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইলিয়টগঞ্জ, আদমপুর, পুটিয়া, রায়পুরসহ বিভিন্ন গ্রামে চারদিকে মাছ চাষের উৎসব। জেলে ও কৃষকের পাশাপাশি ওই এলাকার শিক্ষিত তরুণরাও মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। কুমিল্লার বিভিন্ন প্লাবন ভূমি ছাড়াও নদী, পুকুর ও জলাশয়ে উৎপাদিত মাছ জেলার চাহিদা মিটিয়ে জোগান দিচ্ছে দেশের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রায়ও। ফলে বিশ্বের অন্য দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চাষকৃত মাছ উৎপাদনে চীন ও ভারতের পরই পঞ্চম স্থানে বাংলাদেশ। আর প্রাকৃতিক ও চাষের মাছ মিলিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল কুদ্দুস আখন্দ বলেন, কুমিল্লা জেলায় মোট পুকুরের সংখ্যা ৮৪ হাজার ৪২৪টি, যার আয়তন ২২ হাজার ৪৬৪ হেক্টর। নদী রয়েছে ১৩টি, যার আয়তন চার হাজার ৮৩২ হেক্টর। বিল ও প্লাবনভূমি রয়েছে ২৪৫টি, যার আয়তন ২২ হাজার ৪৬২ হেক্টর। কুমিল্লায় মোট ৪৯ হাজার ৭৫৮ হেক্টর পুকুর, নদী ও জলাভূমিতে মাছ উৎপাদন করা হয়।

কুমিল্লায় প্রথম প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষ শুরু হয় দাউদকান্দি উপজেলায় যা সারা দেশের মধ্যে মডেল। ১৯৮৬ সালে এ উপজেলায় প্রথম প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষ শুরু করেন ধনুয়াখোলা গ্রামের সুনীল কুমার রায়। তার দেখাদেখি অন্যরাও এগিয়ে আসেন। আর এখন প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দাউদকান্দি ছাড়াও কুমিল্লার মেঘনা, হোমনা, মুরাদনগর, তিতাস উপজেলায়ও প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষ হচ্ছে। এসব উপজেলার লক্ষাধিক পরিবার চলছে মাছ চাষের আয় দিয়ে। স্থানীয়রা জানায়, এসব এলাকায় একসময় খাল-বিলে প্রচুর পরিমাণে মাছ পাওয়া যেতো। কিন্তু মানুষ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে চাহিদা, শুরু হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে মাছ নিধন। ফলে জলাশয়ে দেখা দেয় মাছের সংকট। এরপরই মূলত শুরু হয় মাছ চাষ। তাছাড়া জলাবদ্ধতার কারণে এসব এলাকায় এক ফসলের বেশি হয় না। এ জলাবদ্ধতা কাজে লাগিয়ে শিক্ষিত তরুণ, কৃষক ও জেলেরা শুরু করে মাছ চাষ। পরবর্তীতে তাদের মুখে ছড়িয়ে পড়েছে রুপালি মাছের হাসি।

স্থানীয় মৎস্য চাষি ফজলু মিয়া বলেন, প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষের ফলে দাউদকান্দি ও আশপাশের জলাঞ্চলের মানুষের অভাব ঘুচেছে। হাসি ফুটেছে তাদের মুখে, সুখ ফিরেছে সংসারে। তাঁর মতে, শিক্ষিত তরুণরাই এখন এ পেশায় বেশি ঝুঁকছে। ফলে কমেছে বেকারত্বও। তাদের দেখাদেখি আশপাশের এলাকার মানুষও এখন প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে বলে জানান ফজলু মিয়া। দাউদকান্দি উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা নাজমা আক্তার বলেন, দাউদকান্দিতে তিন হাজার হেক্টর প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষ হয়। এ উপজেলার শিক্ষিত তরুণরা মাছ চাষে সম্পৃক্ত হওয়ায় বেকারত্ব দূর হয়েছে। সেই সঙ্গে মাছের উৎপাদনও বাড়ছে। তাছাড়া মাছের চাষ ও রোগ প্রতিরোধে মৎস্য বিভাগ চাষিদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিচ্ছে বলেও জানান তিনি।