ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ৯ই মে ২০২৪, ২৭শে বৈশাখ ১৪৩১


ওড়িশায় তাণ্ডব শেষে‘ফণী’পশ্চিমবঙ্গে


৩ মে ২০১৯ ২৩:২৫

ছবি সংগৃহিত

ভারতের স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে ঘূর্ণিঝড় ফণী তীর্থ নগরী পুরীর ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণপশ্চিমে গোপালপুর আর চাঁদবালির মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে ওড়িশা উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে। প্রায় ৩০০ কিলোমিটার ব্যাসের ঘূর্ণিঝড় ফণীর চোখ পুরোপুরি উপকূলে উঠে আসতে সময় লাগে পুরো দুই ঘণ্টা।

উপূকলে আঘাত হানার সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৭৫ থেকে ১৮৫ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৯৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। ভারতীয় আবহাওয়া অফিস বলছে, বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমশ দুর্বল হতে থাকবে ফণী। দুপুর নাগাদ বাতাসের গতিবেগ নেমে আসতে পারে ঘণ্টায় ১১৮ কিলোমিটারের নিচে। ওড়িশা উপকূল অতিক্রম করার পর উত্তর-উত্তরপূর্বে পশ্চিমবঙ্গের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল ফণী। বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টায় অবস্থান করছিল মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৫৮০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৩০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে এবং চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আরও উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে শুক্রবার মধ্যরাত নাগাদ ফণী খুলনাসহ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পৌঁছাতে পারে। এরপর রাজশাহী, রংপুর এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহের ওপর দিয়ে দেশের উত্তরাংশ পেরিয়ে যেতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় ফণী বাংলাদেশের স্থলভাগ পার হওয়ার সময় ঘণ্টায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বাংলাদেশের মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলা এবং সংলগ্ন দ্বীপ ও চরগুলো ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং নিকটবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

আর কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে আগের মতই ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অফিস বলছে, ঘূর্ণিঝড় ও অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরাঞ্চল স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

ফণীর প্রভাবে ভারতের অন্ধ্র ও ওড়িশা উপকূলে চলছে প্রবল বৃষ্টি, সেই সঙ্গে ঘূর্ণিবাতাসের তাণ্ডব। ঝড়ের অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলেও সকালে বাতাসের গতি বেড়েছে। ঢাকাসহ কোথাও কোথাও বৃষ্টিও হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের স্থলভাগ পার হওয়ার সময় চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলায় ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।সাগর উত্তাল থাকায় বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা, ট্রলার এবং সমুদ্রগামী জাহাজকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হবে। ওড়িশা ও পুরীতে ফণীর ঘূর্ণিবাতাসের তাণ্ডবের ছবি ও ভিডিও আসতে শুরু করেছে সোশাল মিডিয়ায়। তবে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র স্পষ্ট হতে আরও সময় লাগবে।

বাংলাদেশের ১৯ জেলার ১৪৭টি উপজেলার ১৩ হাজার ৫০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা উপকূলীয় এলাকা হিসেবে চিহ্নিত; সেখানে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষের বসবাস।এ ১৯ জেলায় তিন হাজার ৮৬৮টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। বেশিরভাগ আশ্রয় কেন্দ্রই প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

আজ শুক্রবার সকাল থেকে বিভিন্ন জেলার ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া শুরু হয়েছে। দুপুর পর্যন্ত ৪ লাখ ৪ হাজার ২৫০ জনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্রে। ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবী এসব এলাকায় কাজ করছেন।ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক করতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সাগর তীরের এলাকাগুলোতে মাইকিং করা হচ্ছে। মজুদ করা হয়েছে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি। ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকিতে থাকা এলাকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাপ্তাহিক ছুটি এবং অন্যান্য ছুটি বাতিল করে তাদেরকে কর্মস্থলে উপস্থিত থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সম্ভাব্য জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর সব চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। প্রতিটি জেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে মেডিকেল টিম; খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।বিপদ সংকেত আসার পর বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে অবস্থানরত বড় জাহাজগুলোতে পণ্য ওঠানামার কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে সারা দেশে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রেখেছে বিআইডব্লিউটিএ।

ভারত মহাসাগরে সুমাত্রার পশ্চিমে বিষুবরেখার কাছাকাছি এলাকায় লঘুচাপ গত ২৬ এপ্রিল নিম্নচাপে পরিণত হয়। এরপর তা পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে হতে দুই দিনের মাথায় পরিণত হয় মৌসুমের প্রথম ঘূর্ণিঝড়ে।
এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগর তীরের আট দেশের আবহাওয়া দপ্তর ও বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্যানেলের তালিকা থেকে ক্রম অনুসারে ওই ঝড়ের নাম ঠিক হয় ফণী। এর অর্থ সাপ, নামটি প্রস্তাব করেছিল বাংলাদেশ।

অস্থির গতিপথ ধরে অত্যন্ত ধীর গতিতে এগোতে থাকা এ ঘূর্ণিঝড় দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করতে থাকে। ২৯ এপ্রিল ফণী পরিণত হয় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে। এরপরদিনই ভারতীয় আবহাওয়াবিদরা একে চিহ্নিত করেন অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে।
নতুনসময়/আল-এম