ঢাকা সোমবার, ২০শে মে ২০২৪, ৭ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বদলে যাবে তালতলির চিত্র


৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২৩:৪১

বরগুনার তালতলিতে আইসো টেক গ্রুপ নির্মাণ করছে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। গত বছরের ১৩ জুলাই পাবলিক প্রাইভেট পার্টনিাশিপ (পিপিপি) আওতায় সরকারের সঙ্গে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন পায় দেশীয় এ প্রতিষ্ঠানটি। কেন্দ্র স্থাপনে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করছে চীন। ৩০৭ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন কেন্দ্রটি আগামী ২০২১ সালের মধ্যেই কাজ শেষ হবে বলে আশা করছে প্রতিষ্ঠানটি।

জাতীয় গ্রীডে বিদ্যুৎ যোগ হওয়ার পাশাপাশি তালতলি এলাকার ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন থেকে শুরু করে কর্মসংস্থান ও জীবনমান উন্নয়নের ব্যাপক ভুমিকা রাখবে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রটি নিমার্ণের জন্য চলতি বছরের ১২ এপ্রিল বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে পাওয়ার পার্চেস এ্যাগ্রিমেন্ট (পিপিএ) ও ইমপ্লিমেন্টেশন এ্যাগ্রিমেন্ট সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে চীনের পাওয়ার চায়না রিসোর্স লিমিটেড ও বাংলাদেশের আইসোটেক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আইসোটেক ইলেট্রিফিকেশন কোম্পানী লিমিটেড। প্রকল্প প্রতিষ্ঠানটির নাম বরিশাল ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানী লিমিটেড। ৩০০ একর জমির উপর নির্মিতব্য এ প্রকল্পটি ২৫ বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা (৫৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)।

নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির দুরত্ব টেংরাগীরি সংরক্ষিত বনাঞ্চল (ফাতরার চর) থেকে ন্যুনতম ৬.৩৮ কিলোমিটার এবং সুন্দরবন থেকে ন্যুনতম দুরত্ব ২১ কিলোমিটার। এছাড়া নির্মানাধীন প্রকল্প এলাকায় সরকারী কোন খাস জমি নেই মর্মে ভূমি অফিস থেকে এবং প্রকল্প এলাকায় বন বিভাগেরও কোন জমি নেই বলে বনবিভাগ ছাড়পত্র প্রদান করেছে।

এদিকে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মানের পাশাপাশি আইসোটেক গ্রুপ ইতিমধ্যে ওই এলাকার ভৌতা অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ বেশকিছু উন্নয়নমূলক কাজে হাত দিয়েছে। উন্নয়নমূলক কাজের মধ্যে রয়েছে ওই এলাকার রাস্তাঘাট নির্মাণ, স্কুল কলেজ নির্মাণ, মসজিদ নির্মাণসহ আরো কিছু সামাজিক কাজ।

প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এ প্রকল্পে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার লোক কাজ করবে। অর্থাৎ প্রায় ৪ বছর মেয়াদী এ কাজে স্থানীয় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার লোক এখানে কাজের সুযোগ পাচ্ছে। কাজের প্রতিটি শ্রমিকের নিরাপত্তার জন্য থাকছে ইন্সুরেন্স সুবিধা। বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ঘিরে এখানে বিপুল অর্থনৈতিক পরিবর্তনও আসবে। যাতে করে এ এলাকার মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে।

আইসোটেক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. মঈনুল আলম বলেন, সরকারের সকল নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। সরকারের সাথে চুক্তি অনুযায়ী পাওয়ার প্লান্টটির নির্মাণ কাজ ৪৫ মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে। সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, বিআইডাব্লিউটিএ ও স্থানীয় প্রশাসন প্রত্যক্ষভাবে সহোযোগীতা করে যাচ্ছে। এজন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

তিনি আরো বলেন, প্রকল্পটি সফলভাবে সমাপ্ত করতে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের জনগণও সাহায্য করছে। সবার সাহায্য সহযোগিতা না পেলে এত বড় কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করা সম্ভব নয়। আমরা আশা করছি সবার সহযোগীতা নিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের ন্যাশনাল গ্রীডে ৩০৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারবো।

এলাকাবাসী মনে করছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্র্রটি চালু হলে বরগুনার জনগণের ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা ও কৃষিসহ বিভিন্ন খাত এবং আর্থ-সামাজিক খাতে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

উল্লেখ্য, বর্তমান সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৮১৯ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৮৮টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২১ হাজার ৬৫৯ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১১৪টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি হয়েছে। বর্তমানে মোট ১৩ হাজার ৭৭১ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৪৭টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন। এ কেন্দ্রগুলো ২০১৮ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে চালু হবে। এ ছাড়া ৫ হাজার ৯২ মেগাওয়াটের ৩০টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের দরপত্র প্রক্রিয়াধীন। যেগুলো ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে চালু হবে।

আইএ/এসএ