ঢাকা মঙ্গলবার, ৬ই মে ২০২৫, ২৪শে বৈশাখ ১৪৩২


রামপালে আতঙ্কে নির্যাতনের শিকার গৃহবধুর পরিবার


২২ মার্চ ২০২৪ ১৬:৩৪

ছবি : নতুন সময়

বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার ভোজপাতিয়া ইউনিয়নের চ্যাটারজিখালী গ্রাম। এই গ্রামের একটি মৎস্য ঘেরে কাজ করেন আল আমিন ও স্ত্রী পান্না বেগম। দিনমজুর এই পরিবারটি গত ৪ মাস ধরে বসবাস করছে এখানে।

এরই মধ্যে গত (১৫ ফেব্রুয়ারি) গভীর রাতে এই পরিবারটির সাথে ঘটে যায় এক নির্মম ঘটনা। চার সন্তানের জননী পান্না বেগম নিজ সন্তানদের সামনে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন একই এলাকার এক লম্পট দ্বারা। এর পর থেকে হতদরিদ্র এই পরিবারটি হয়রানী ও মামলা তুলে নিতে হুমকী-ধামকির শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

গৃহবধু পান্না বেগম বলেন, ঘটনার পর থেকে সন্তানদের মুখের দিকে তাকাতে পারি না। মরে যেতে ইচ্ছা হয়। ঘটনার দিন রাত প্রায় ১২টার দিকে আমার স্বামী মোবাইলে চার্জ দিতে স্থানীয় ডাকরা বাজারে যায়। আমি তখন ছেলে-মেয়ের নিয়ে ঘরে ঘুমিয়ে ছিলাম। এরই মধ্যে এক ব্যাক্তি আমার ঘরে প্রবেশ করে।

এসময় আমার মুখে কাপড় গুজে দিয়ে নির্যাতন করতে থাকে। ঘরে অন্ধকার থাকায় ও ওই ব্যাক্তির মুখ কাপড় থাকায় আমি তখন চিনতে পারিনি। কিন্তু পরবর্তিতে আমি মুখের কাপড় সড়িয়ে ডাক-চিৎকার দিলে আমার ছেলে-মেয়েরা ঘুম থেকে উঠে যায় এবং ডাক-চিৎকার দিতে থাকে।

এসময় নির্যাতনকারী ওই ব্যাক্তিকে বাইরে থেকে কিছু লোক বলতে থাকে, মুকুল দ্রুত চলে আয়। এরপর ৯৯৯ এ ফোন পেয়ে পুলিশ আসে। আমিসহ পরিবারের সবাইকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। থানায় আমি, আমার স্বামী ও ছেলে-মেয়েদের আলাদা আলাদা রুমে রাখা হয়।

এমন ভাষায় আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, সে কথা মনে হলে কান্না আসে। এরপর হাসপাতালে নেয়া হয়। নির্যাতনের শিকার হয়েও পদে পদে হয়রানীর শিকার হতে হয়েছে। এরপর মামলা হলেও কোন আসামী গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। উল্টো মুকুল ও তার লোকজন প্রকাশ্যে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। আমি এর বিচার চাই।

গৃহবধুর স্বামী আল আমিন বলেন, ঘটনার দিন স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে ডাকরা বাজার থেকে ছুটে এসে দেখি আমার স্ত্রী অজ্ঞান অবস্থায় পরে আছে। তখন ৯৯৯ এ ফোন দিলে পুলিশ আসে। পুলিশের জিজ্ঞাবাদে হয়রানী করা হয়েছে। আমাকে বলা হযেছে আমরা মিথ্যা কথা বলছি, নাটক সাজিয়েছি। আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, মামলা তুলে নিতে হুমকী দিচ্ছে। পরিবার নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে দিনপার করছি।

রামপাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোমেন দাস বলেন, মামলায় আসামী করা হয়েছে অজ্ঞাত। এছাড়া মামলা বাদী ভিকটিমের স্বামী, ভিকটিম ও স্বাক্ষীদের বক্তব্যে মিল পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা তদন্ত করছি।

ভিকটিম মুকুল শেখ নামের এক ব্যাক্তির কথা বলছে ও তার পরিবার হুমকীর শিকার হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি আমরা দেখবো, এছাড়া ভিকটিম বা তার পরিবার কারও দ্বারা হুমকী পেলে আমাদের কাছে অভিযোগ দিলে সেটাও দেখা হবে।

এদিকে, নির্যাতিত এই পরিবারটির পাশে দাড়িয়েছে স্থানীয় গ্রামবাসী। তারা ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।

নতুনসময়/এএম


বাগেরহাট, রামপাল, মৎস্য, দিনমজুর, আতঙ্ক, নির্যাতন, গৃহবধু