ঢাকা শুক্রবার, ৩রা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১


পাবনায় রাতের অন্ধকারে ১৫ টি কঙ্কাল চুরি


২০ মার্চ ২০২৪ ১৭:২৯

ছবি : নতুন সময়

'তখন আমি ফজরের নামাজ পড়ে কোরআন তেলাওয়াত শেষে বাইরে বের হই। ভোরের আলো কেবল ফুটছে, আাধার কিছুটা ছিল। কিছুদিন আগে আমার ভাই মারা গেছে। তাই কবরস্থানের দিকে যাই। সেখানে কালো পোশাক পড়া, মুখ বাঁধা ৯ জন মানুষকে কবরস্থান থেকে বের হতে দেখি। তাদের কাঁধে ছিল ব্যাগ।'

এভাবেই মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) ভোরে নিজের চোখে দেখা ঘটনার বর্ণনা করছিলেন রেখা খাতুন। তার বাড়ি আমিনপুর থানার খাস আমিনপুর গ্রামে। তার স্বামীর নাম সেলিম মোল্লা। এদিন বিকেল চারটার দিকে খাস আমিনপুর কবরস্থানের পাশে দাঁড়িয়ে কথা হয় তাঁর সাথে।

রেখা খাতুন বলেন, 'কালো পোশাক পড়া মুখোশধারী ৯ জন দুই গ্রুপে প্রথমে ৩ জন পরে বাকি ৬ জন কবরস্থান থেকে বের হয়। এরপর একটি ট্রাকে চলে যায় তারা। পরে দোয়া দরুদ পড়ে বাড়িতে ফিরে ভাবি, না জানি কালো পোশাক পড়া ওই মানুষগুলো কি করছে। পরে সকালে আমার স্বামী বাজার থেকে ফিরে জানায় কঙ্কাল চুরির কথা। তখন আমি বলি তাহলে কালো পোশাক পড়া ওই লোকগুলো এই কাজ করেছে।'

পাবনা বেড়া উপজেলার আমিনপুর থানার খাস আমিনপুর কেন্দ্রীয় কবরস্থান থেকে রাতের অন্ধকারে ১৫টি মরদেহের কঙ্কাল চুরি হয়। মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) ভোররাতের দিকে এ ঘটনা ঘটে। সকালে বিষয়টি টের পান স্থানীয়রা। এরপর থেকেই কবরস্থানে স্বজনেরা ভিড় করতে থাকেন। কঙ্কাল চুরি নিয়ে মুহুর্তের মধ্যে জেলা জুড়ে দেখা দেয় চাঞ্চল্য। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করে পুলিশ।

মঙ্গলবার বিকেলে কবরস্থানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কবরস্থানে অনেক মানুষের ভিড়। কেউ বাইরে দাঁড়িয়ে দেখছেন। কেউবা কবরস্থানে নেমে ঘুরে ঘুরে কঙ্কাল চুরির বিষয়টি দেখছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কবরগুলোর বাঁশের চারাট উপরে তোলা। কবরের মাটি খুঁড়ে তোলা হয়েছে। এরকম ১৫টি কবরের একই চিত্র।

সেখানে কথা হয় উপজেলার জাতসাকিনী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আবুল কালাম মন্ডলের সাথে। তিনি বলেন, এখানে মোস্তাফিজুর রহমান নামের একজন ব্যাংকে চাকরি করেন। ৪০ দিনের ব্যবধানে তার বাবা-মা দু'জনেই মারা যায়। সকালে বাজারে এসে তার সাথে বসে চা খাচ্ছিলাম। তখন তিনি বলেন কবর খোড়া, কঙ্কাল নাই। তখন আমি কবরে গিয়ে সত্যতা পাই। পরে দেখি কবরের ভেতর থেকে মরদেহের মাথা নাই। প্রত্যেকটা কবর থেকে মাথা তুলে নিয়ে গেছে।'

খাস আমিনপুর কেন্দ্রীয় কবরস্থানের সভাপতি বাবুল উদ্দিন মন্ডল বলেন, 'আমরা জানার পরপরই দ্রুত থানায় জানাই। পুলিশ এসে দেখে গেছে। এটার তদন্ত হওয়া উচিত। এরকম ঘটনা আমাদের এলাকায় আগে কোনোদিন হয়নি। কারা, কি কারণে এটা করছে তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত।'

দাঁতিয়া গ্রামের অটোভ্যান চালক সেলিম বিশ্বাস বলেন, 'ভোরে এই কবরস্থানের পাশ দিয়ে বাজারে যাবার সময় দেখি অনেক লোকজন। পরে নেমে জানতে পারি কঙ্কাল চুরির ঘটনা। আসলে মানুষ মরেও শান্তি নাই। কবরে গিয়েও তার উপর অত্যাচার। এটি খুবই দু:খজনক ও কষ্টদায়ক ঘটনা।'

চুরি হওয়া এক লাশের স্বজন মাসুদ রানা বলেন, 'মহাসড়কের পাশে কবরস্থান থেকে কঙ্কাল চুরি কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। এর সাথে বড় কোনো একটি চক্র জড়িত। আমাদের দাবি পুলিশ দ্রুত এই ঘটনা উদঘাটন করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে।'

এ বিষয়ে আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশীদ বলেন,‌ 'কবর থেকে কঙ্কালগুলো চুরি হয়েছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। কোনো চক্র জড়িত আছে কিনা তদন্ত সাপেক্ষে বিস্তারিত বলা যাবে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'

নতুন সময়/এএম


পাবনা, আমিনপুর, কবরস্থান, মরদেহ, কঙ্কাল, চুরি