ঢাকা শনিবার, ৪ঠা মে ২০২৪, ২১শে বৈশাখ ১৪৩১


সিরাজগঞ্জে আধুনিক আলু সংরক্ষণাগার, কৃষকের মুখে হাসি


৪ মার্চ ২০২৪ ১৬:৩৪

সংগৃহীত

আলু সংরক্ষণের জন্য সাধারণত হিমাগার ব্যবহার করে থাকেন চাষিরা। তবে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় দেশীয় পদ্ধতিতে আধুনিক আলু সংরক্ষণার তৈরী করেছে কৃষি বিভাগ।

এই আধুনিক আলু সংরক্ষণাগারটি উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের মাহমুদপুর গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলামের বাড়িতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে এমন ব্যতিক্রমী স্থাপনা করা হয়েছে। যা ইতোমধ্যে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়েছে।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলু চাষ হয় উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের মাহমুদপুর ভাটবেড়াসহ আশে পাশের কয়েকটি গ্রামে। চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ১ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। আলু তোলার পর তা দীর্ঘদিন সংরক্ষণ সুবিধা না থাকায় বাধ্য হয়ে অল্পদামে বিক্রি করে দেন কৃষকেরা। অনেক কৃষকের আলু পঁচে ক্ষতির সন্মুখিন হন।

ফলে এখানকার উর্বর জমিতে আলুর বাম্পার ফলনেও কৃষকরা তেমন একটা লাভবান হতে পারেন না। কৃষকদের সমস্যার কথা চিন্তা করে কন্দাল জাতীয় ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রস্থের বাঁশ, কাঠ, লোহার ফ্রেমে তৈরী করা হয়েছে এই আধুনিক আলু সংরক্ষণাগারটি।

চারদিকে বাঁশের চাটাই দিয়ে দেয়া হয়েছে বেড়া। বাহির থেকে দেখলে কারো বোঝার উপায় নেই এটি একটি সংরক্ষণাগার। যার ভিতর কাঠের তৈরি একাধিক ডয়ারে সংরক্ষণ করা হয়েছে ৬ টন আলু। কোন প্রকার খরচ ছাড়াই কৃষকরা সহজেই এখানে প্রায় ৪ মাস সময় আলু রাখতে পারবে। এতে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করে লাভবান হতে পারবে। আলুর গুনগত মান ঠিকই থাকবে।

আধুনিক আলু সংরক্ষণাগারটি তৈরি হয়েছে ২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রস্থের ঘরের মেঝে পাকা, চারদিকে বাঁশের চাটায়ের বেড়া। লোহার ষ্টিলের ফ্রেমের উপর টিনের ছাউনিতে চারদিকে পর্যাপ্ত আলো বাতাস প্রবেশের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভিতরে একটি সাধারণ বাল্ব আর ফ্যান ছাড়া কিছুই নেই।

ঘরের ভিতর কাঠের তৈরি তাকে ২৪ টি ডয়ার তৈরি করা হয়েছে। যার একেকটির ভিতর ১০ মন করে আলু সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রতিটি ডয়ারের উপর আলু রাখা কৃষকের নাম পরিচয় লিখে রাখা হয়েছে। এভাবে আলু তোলার পর থেকে চার মাস পর্যন্ত সংরক্ষণে রাখে।

পরর্বতী সুবিধা মতো সময়ে কৃষকরা তা বাড়তি দামে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে। এখানে আলু রাখলে তা পঁচা বা নষ্ট হয় না। এমন পদ্ধতি ব্যবহারে কৃষকদের কোন প্রকার খরচই হচ্ছে না। শুধু আলু নয়।

কন্দাল জাতীয় ফসল যেমন- পেঁয়াজ, রসুন, আলু, আদা, হলুদ, মরিচসহ বিভিন্ন পণ্যও সংরক্ষণ করে বছর জুড়ে রেখে কৃষকরা বিক্রি করে লাভবান হতে পারবে। ইতোমধ্যে ব্যতিক্রমী এই আলু সংরক্ষণাগার ব্যবহার করে কৃষকরা লাভবান হওয়ায় উপজেলাজুড়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। অনেক এলাকার কৃষক এটি দেখতে আসছেন। তারাও ব্যক্তি উদ্যোগে এমন সংরক্ষণাগার তৈরির আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

মাহমুদপুর গ্রামের আলু চাষি শফিকুল ইসলাম ও আব্দুল বারী জানান, কৃষকদের সমস্যার সমাধানের জন্য উপজেলা কৃষি বিভাগ গত বছর ৩০ জন কৃষককে কন্দাল জাতীয় ফসল উন্নয়ন প্রকল্পে আলু চাষাবাদ, সংরক্ষণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন। আলু চাষীদের নিয়ে একটি সমিতি গঠন করেন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে একটি প্রাকৃতিক আলু সংরক্ষণাগার তৈরি করা হয়েছে।

ভাটবেড়া গ্রামের কৃষক মোতালেব আকন্দ, আবেদ আলী, কুদ্দুস শেখ আফজাল হোসেন জানান, এই আলু সংরক্ষণাগারটি আমাদের উপকারে এসেছে। আলু তোলার পর আমরা ঘরে রাখতে পারতাম না। পঁচে যেত। হয় অল্প দামে বিক্রি করতাম। এখন নিজের বাড়ির সংরক্ষণাগার নিশ্চিন্তে আলু রেখে বাজার দেখে বেশি দামে বিক্রি করতে পারছি। এ ধরনের সংরক্ষণাগার প্রতিটি এলাকায় দিলে কৃষকদের সমস্যা দুর হবে।

উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকতা কৃষিবিদ সুর্বণা ইয়াসমিন সুমি জানান, মৌসুমের সময় আলুসহ কন্দাল জাতীয় ফসলের দাম কম থাকে। সংরক্ষণের অভাবে যেগুলো পঁচে যায়। এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হতো। কৃষদের কথা চিন্তা করে কন্দাল জাতীয় ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এই আলু সংরক্ষণাগার তৈরি করে দেয়া হয়েছে। যা ব্যবহার করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।

প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি এই সংরক্ষণাগার একদিকে যেমন ফসল পঁচা থেকে রক্ষা পাবে, তেমনি এর মাধ্যমে বছর জুড়ে বাজারে মিলবে আলুসহ কান্দাল ফসল। কৃষকরা প্রতিটি এলাকায় এমন ষ্টোর স্থাপনে কৃষি বিভাগের সুদৃষ্টি কামনা করেন। তাদের আগ্রহের কথা বিবেচনা করে আমরা প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের কাছে এমন আরো সংরক্ষণাগার তৈরির জন্য সুপারিশ করেছি বলে জানিয়েছেন তিনি।

নতুনসময়/এএম


আলু, সংরক্ষণ, হিমাগার, চাষি, সিরাজগঞ্জ, উল্লাপাড়া, কৃষি