ঢাকা সোমবার, ২০শে মে ২০২৪, ৭ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


চলন্ত বাসে ধর্ষণ, যা বললেন সেই ধর্ষণকারী!


৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৯:৩৬

টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্তের বাসস্ট্যান্ডে পরিবহন শ্রমিক কর্তৃক ধর্ষণের শিকার প্রতিবন্ধী নারী বাস যাত্রীর পরিচয় পাওয়া গেছে।

স্বজনরা টাঙ্গাইল কারাগারে এসে নিরাপত্তা হেফাজতে তার সঙ্গে রোববার (২ সেপ্টেম্বর) সকালে দেখা করেছেন। তাকে নিজেদের হেফাজতে নেয়ার জন্য আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছেন স্বজনরা।

ওই নারীর ভাই ও বড় ভগ্নিপতি জানান, ঈদের ২০ দিন আগে ধর্ষিতা কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় তার বোনের বাসায় বেড়াতে যান। ঈদের পর দিন কাউকে না বলে বোনের বাসা থেকে চলে যান। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও না পেয়ে পরে তার বোন ঢাকার সবুজবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

শনিবার (১ সেপ্টেম্বর) টাঙ্গাইল থেকে পুলিশের বার্তা পেয়ে কুষ্টিয়ার মিরপুর থানার পুলিশ তাদের বাড়িতে খবর দেয়। খবর পেয়ে শনিবার রাতেই তারা বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানায় চলে আসেন। সেখানে ছবি দেখে ওই নারীকে শনাক্ত করেন। পরে রোববার সকালে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারের নিরাপত্তা হেফাজতে গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

ঢাকার একটি হাউজিং কোম্পানিতে নিরাপত্তা প্রহরী পদে চাকরিরত ওই নারীর ভাই জানান, তিনি তার বোনকে নিরাপত্তা হেফাজত থেকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে যাবেন। এজন্য আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। সেই সঙ্গে বোনের ধর্ষকদের উপযুক্ত শাস্তির জন্য আইনি লড়াই করবেন।

তাদের আইনজীবী শাহিন সিদ্দিকী জানান, ওই নারীকে তার ভাইয়ের হেফাজতে দেয়ার জন্য সোমবার টাঙ্গাইল বিচারিক হাকিম আদালতে আবেদন জানানো হবে। এজন্য সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্তে টহলরত পুলিশের একটি দল ওই এলাকার নৈশপ্রহরীর মাধ্যমে জানতে পারে, বাসস্ট্যান্ডে একটি বাসের ভেতর নারীর কান্না শোনা যাচ্ছে। এ খবর পেয়ে ওই টহল দল বাসটিতে গিয়ে প্রতিবন্ধী এক নারীকে উদ্ধার করে।

এ সময় ওই নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে পুলিশকে জানায়। পরে পুলিশ ওই বাসের চালকের সহকারী নাজমুলকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরদিন উপ-পরিদর্শক নুরে আলম বাদী হয়ে বাসের চালক আলম খন্দকার ও আটক নাজমুলকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। মামলায় চালক আলম খন্দকারের বিরুদ্ধে ওই নারীকে ধর্ষণ এবং সহকারী নাজমুলের বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহায়তা করার অভিযোগ আনা হয়।

শুক্রবার সন্ধ্যায় নাজমুলকে ওই মামলায় টাঙ্গাইল বিচারিক হাকিম আদালতে পাঠানো হয়। এ সময় তিনি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দেন। সিনিয়র বিচারিক হাকিম মো: আশিকুজ্জামান তার জবানবন্দি লিপিবদ্ধ শেষে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন।

জবানবন্দিতে নাজমুল জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পর ওই নারী টাঙ্গাইল নতুন বাস টার্মিনাল থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুগামী বাসটিতে ওঠেন। পথিমধ্যে বিভিন্ন স্থানে অন্য সব যাত্রীরা নেমে যায়। সেতুর পূর্ব প্রান্তের বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছার পর ওই নারীকে একা পেয়ে চালক আলম খন্দকার ধর্ষণ করেন।

এ সময় নাজমুল বাসের দরজায় দাঁড়িয়ে থেকে পাহারা দেন। শনিবার ধর্ষণের শিকার ওই নারীকে আদালতে হাজির করে সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানোর আবেদন করা হয়। আদালত তাকে গাজীপুরের পুবাইলে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেন।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (৩০ আগস্ট) রাতে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু সেতু থানা পুলিশ। এ ঘটনায় হেলপার নাজমুল (২২) কে গ্রেফতার করা হয়েছে। সুপারভাইজার বিষু ও ড্রাইভার আলম পালিয়ে যায়।

কেআই