ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


ঝুঁকি নিয়ে জীবন-জীবিকার সন্ধানে এলাকা ছাড়ছে হাজারো শ্রমিক


১৮ এপ্রিল ২০২১ ১৮:৩৩

ছবি-নতুনসময়

বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি এখন বিপদজনক ভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর্যায়ে রয়েছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।এ জন্য দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষনা করেছেন সরকার। এদিক থেকে “দিন এনে-দিন খাওয়া’ অসহায় মানুষের জীবন-জীবিকা এখন হুমকির মুখে পড়েছে। তাই স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়েও মানুষ ছুটছে কাজের সন্ধ্যানে। এমনটি লক্ষ করা গেছে রাজশাহীর সীমান্তবর্তী বাঘা উপজেলায়।

সূত্র মতে, সারা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশেও হানা দিয়েছে মরণব্যাধী করোনা ভাইরাস। এই ভাইরাসের সংক্রমণরোধে সরকার ঘোষিত ছুটি এবং লকডাউনে স্থবির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ বিভিন্ন কলকারখানা,ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং পরিবহন খাত। এদিক থেকে শহরমুখি শ্রমিকরা স্বাস্থ্য ঝুকি নিয়ে এলাকায় ফিরলেও পেটের ক্ষুদা নিবারণের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজের সন্ধানে ছুটছে গ্রামাঞ্চলের শ্রমজীবি মানুষ। এর মধ্যে গত তিন দিনে রাজশাহীর সীমান্তবর্তী বাঘা উপজেলা থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ধান কাটার উদ্দেশ্যে চলে গেছে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার শ্রমিক। এরা অধিকাংশজনই চরাঞ্চল ও নদীতীরবর্তী পাকুড়িয়া উইনিয়নের বাসিন্দা।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নাটোর, শিংড়া, নওগাঁ, জয়পুরহাট, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, আত্রাই জেলার বিভিন্ন উপজেলার গ্রামে-গ্রামে বর্তমানে বোরো ধান পাকা শুরু হয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে পুরোপুরি ধান কাটা শুরু হবে। বর্তমানে অত্র অঞ্চলে তেমন কোন কাজ না থাকায় বেকার অবস্থায় সময় কাটাচ্ছেন এই এলাকার শ্রমিকরা। বিশেষ করে মরণ ব্যাধী করোনার কারনে এখন পুরোপুরি লকডাউনের মধ্যে দিয়ে সময় পার করছে তারা। তার পরেও পেটের ক্ষুধা নিবারণের জন্য তারা ছুঁটতে শুরু করেছেন দেশের এক প্রান্ত থেকে অরেক প্রান্তে। তাঁদের দেয়া তথ্য মতে, গত বছর এ সময় প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক নিজ উপজেলা থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ধান কাটার কাজে যাওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশান করেছিল। যার ব্যাতিক্রম ঘটবে না এবারও ।

এলাকার সুধীজনদের মতে,সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় স্বল্প পরিসরে সরকারের যে উদ্যোগগুলো আছে, সেখান থেকেও ঠিকমতো সুবিধা পান না শ্রমজীবিরা। কিংবা পেতে হলেও জনপ্রতিনিধিদের খুশি রাখতে হয়।এদিক থেকে দেশব্যাপী করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ অসহায় শ্রমজীবীদের সুরক্ষা দিতে এখন পর্যন্ত-সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা নেই সরকার প্রধানের। ফলে দেশের কোটি কোটি মানুষ যারা ‘দিন আনে -দিন খায়’ তারা এখন সবচেয়ে বেশি বিপদে আছেন।
বাঘা পৌর মেয়র আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে লকডাউন দেয়ার পর এখন বন্ধ প্রায় সকল ব্যবসা-বাণিজ্য এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা। তার পরেও শত ঝুকি নিয়ে ছোট-খাট যানবাহন-সহ কাঁচা মালামাল টানা পরিবহনে ঢাকা-সহ বিভিন্ন শহর থেকে গ্রামে ছুটছেন শ্রমজীবিরা। তবে গ্রাম থাকা শ্রমজীবিদের আকাংখা বিপরিদ মুখি। তারা পেটের ক্ষুধা এবং জীবন-জীবিকার সন্ধানে এখন নিজ এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় চলে যাচ্ছে ধান কাটার কাজে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী বাঘা উপজেলার অধিকাংশ শ্রমিকরা এখন দল গঠন করে ধান কাটতে চলে যাচ্ছেন ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, দেশের সব অঞ্চলে সব ফসল হয়না। কিছু এলাকায় ইতোমধ্যে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। এ দিক থেকে বাঘা আমের জন্য বিখ্যাত। এ অঞ্চলে আগামি ১-দেড় মাস পর আম পাকা শুরু হবে। তখন বাইরে থাকা সকল শ্রমিক নিজ এলাকায় ফিরে আসবে। তিনি আরো বলেন, সরকার কৃষি কাজে কোন বাধা সৃষ্টি করেননি। কারণ কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। সে লক্ষে বাঘার হাজার-হাজার শ্রমিক এবং ক্ষুদ্র কৃষকরা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের নিকট হতে প্রত্যায়ন পত্র অত:পর আমি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার যৌথ স্বাক্ষরকৃত সুপারিশ নিয়ে তারা ধান কাটার কাজে পর্যায় ক্রমে এলাকার বাইরে চলে যাচ্ছেন।



বাঘা উপজেলার চক ছাতারী গ্রামের কৃষি শ্রমিক হারান আলী, রেজাউল করিম ও মখলেসুর রহমান এবং চকরাঞ্চলের রহমত আলী, আলামিন হোসেন, আলতাফ হোসেন ও পাকুড়িয়া এলাকার সাজাজান আলী ও আসাদুল বলেন, গরিবরা দেশ নিয়ে ভাবেনা। গরিবরা ভাবে তাদের থাকন,খাওয়ন-পরান নিয়ে। আমরা গরিব মানুষ এ ভাবে আর কতদিন ঘরে বন্ধি থাকবো স্যার, এখনত আমাদের এলাকায় কোন কাজ নেই,তাই আমরা আমাদের চেয়ারম্যানের কথা মতো- কৃষি কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী স্যারের সই নিয়ে অন্য এলাকায় ধান কাটতে যাচ্ছি।


বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পাপিয়া সুলতানা জানান, কৃষি কাজে সরকারী ভাবে কোন বাধা-নিষেদ নেই। ইতিমধ্যে ধান কাটার কাজে নিয়োজিত এলাকার অসংখ্য শ্রমিক বাঘা থেকে অন্য এলাকায় যাওয়ার জন্য আমি সহ কৃষি কর্মকর্তার যৌথ সুপারিশ নিয়েছে। আবার অনেকেই নিতে আসছে। আমরা তাদের সার্বিক সহযোগিতা দিচ্ছি।