গত ১০ মাসে মব সৃষ্টি করে ১৭২ জনকে হত্যা

গত ১০ মাসে বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে মব সৃষ্টি করে ১৭২ জনকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। সংস্থাটির তথ্য বলছে, কোথাও চোর-ছিনতাইকারী-চাঁদাবাজ এবং কোথাও ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সহযোগী ও দোসর অপবাদ দিয়ে মব সৃষ্টি করে এসব মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে কোনো মামলাও ছিল না।
সম্প্রতি দেশের জাতীয় দৈনিক আজকের পত্রিকা এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর বরাতে জানানো হয়েছে, গত আগস্ট থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ১৭২ জনকে আট বিভাগে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৮০ জন, চট্টগ্রামে ২৮ জন, বরিশাল ও রাজশাহীতে ১৬ জন করে, খুলনায় ১৪ জন, রংপুরে ৭ জন, ময়মনসিংহে ৬ জন এবং সিলেটে ৫ জনকে হত্যা করা হয়। মবের সৃষ্টি করে সবচেয়ে বেশি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে গত বছরের সেপ্টেম্বরে। ওই মাসে ২৮ জনকে হত্যা করা হয়।
মব সৃষ্টি করে মানুষ মারা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড এবং গুরুতর অপরাধ বলে উল্লেখ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান। তিনি বলেন, এটি পরিকল্পিত ও ইচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ড। আর যারা এতে অংশ নেয়, তারা সবাই সমানভাবে দায়ী থাকে। বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা অনুযায়ী ইচ্ছাকৃত হত্যা—শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কী করছে আইন নিজের হাতে না তুলে নিতে পুলিশ ও সরকারের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ করা হলেও মব ও গণপিটুনি প্রতিরোধ করতে পারছে না। তবে এবার কঠোর হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সেনাবাহিনী। সম্প্রতি কিছু ঘটনা প্রতিহত করেছে পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনী। গত ১৬ মে ধানমন্ডিতে একজন প্রকাশককে ধরতে মব সৃষ্টি করেন কিছু যুবক। তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশকে চাপ দেয় তারা, তবে ধানমন্ডি থানার ওসি ক্যশৈন্যু মারমার দৃঢ়তায় সেই মব প্রতিরোধ করা হয়। এ ছাড়া সম্প্রতি ঢাকা, রংপুর, সিলেট ও চট্টগ্রামেও কিছু মব প্রতিরোধ করে পুলিশ ও সেনাবাহিনী।
এদিকে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে মব সৃষ্টি না করার জন্য হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। কোনো ব্যক্তি অন্যায় বা অপরাধ করলে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ অথবা নিকটস্থ থানায় যোগাযোগ করতে বলেছে পুলিশ সদর দপ্তর। পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি ইনামুল হক সাগর বলেন, যেকোনো মবের বিরুদ্ধে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া আছে। কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারবে না।
রণদা প্রসাদ সাহা (আর পি সাহা) বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও মানবাধিকার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী লতিফুর রেজা বলেন, ‘কোনো সভ্য সমাজে বিচারব্যবস্থার বাইরে গিয়ে কাউকে হত্যা করা ন্যায়সংগত হতে পারে না। এটা আমাদের মানবিক মূল্যবোধকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।’
কাজী লতিফুর রেজা গণপিটুনির ঘটনা বন্ধ করার প্রক্রিয়ার বিষয়ে উল্লেখ করে বলেন, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, গুজব রোধে দ্রুত তথ্য যাচাই ও ছড়িয়ে দেওয়া, কড়া আইন প্রয়োগ, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া নিশ্চিত করতে হবে।