ঢাকা শনিবার, ৪ঠা মে ২০২৪, ২২শে বৈশাখ ১৪৩১


করোনা লাখপতি বানিয়েছে রাশেদাকে


২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০২:১১

ছবি- সংগৃহিত

করোনায় অনেকেই কর্মবিমুখ হয়ে অনিশ্চিত জীবিকায় ক্রান্তিকাল অতিক্রম করলেও তা দমিয়ে রাখতে পারেনি গ্রামীণ জনপদের রাশেদাকে। করোনার শুরুতেই বেসরকারি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সামান্য বেতনের চাকরি হারা লালমনিরহাটের রাশেদা মাত্র একশত টাকা পুঁজিতে শুধু মাক্স তৈরি ও ব্যবসা শুরু করে এখন লাখপতি। জীবন যুদ্ধে সংগ্রামী রাশেদা ঘুরে দাঁড়িয়েছে, খুলেছে তাঁর ভাগ্যের দ্বার। সে হতে চায় একজন সফল উদোক্তা।

লালমনিরহাট শহরের উপকন্ঠে নবীনগরের আশরাফ আলীর মেয়ে রাশেদা বেগম (৩৬)। তিন ভাই বোনের বড় রাশেদার বিয়ে হয় লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের ফারুক এর সঙ্গে ২০০২ সালে। স্বপ্নের সংসারে কোল জুড়ে আসে দুই পুত্র সন্তান। টানাপোড়নের সংসারে সন্তানদের ভভিষ্যত ও সুখের আশায় মা বাবার শেষ সম্বল জমিটুকু বিক্রি আর ধার দেনা করে স্বামী ফারুককে ২০১৬ সালে পাঠায় ইরাকে। দুর্ভাগ্য, বছর খানেক পরেই তার স্বামী ভুলে যায় স্ত্রী-সন্তানদের। স্বপ্ন যেন স্বপ্নই রয়ে যায়। শুরু হয় হতাশায় ভরা দুশ্চিন্তাময় জীবনের আরেক নতুন অধ্যায়ের।

এদিকে সামান্য বেতনে আয়ার চাকরির মাত্র দেড় মাসে করোনার কারণে বন্ধ হয়ে যায় বেতন। কোনও অবলম্বনও আর নেই তার। দুই সন্তানসহ একমুঠো খাবারের জোগান তো দুরের কথা, বেঁচে থাকাটাই কঠিন হয়ে পড়ে রাশেদার। তবুও ভেঙে পড়েনি সে। জানা ছিল হাতের কাজ, ছিল শেলাই এর প্রশিক্ষণ। করোনার শুরুতে সংক্রমণ রোধে মাক্স এর প্রচারণা ছিল তুঙ্গে। মাথায় আসে মাক্স তৈরি করে তা বিক্রি করে সংসার চালাবেন। কিন্তু হাতে নেই কোনও টাকা ছিল।

অবশেষে এক বন্ধুর কাছে ধার নেয়া ১০০ টাকা দিয়ে ৪০ টাকা গজের কাপড় কিনে শুরু করে মাক্স তৈরি ও বিক্রির কাজ। পরে আরও দুই গজ কাপড় কিনে ২০টি মাক্স বানিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে প্রতিটি ২০ টাকা দরে ৪০০ টাকার বিক্রি করেন। এভাবে বাড়তে থাকে মাক্স বানানো আর বেচাকেনা। বাড়তে থাকে কাজের পরিধি এবং লাভ ও পুঁজির পরিমাণ। শুধু তাই নয়, মা বাবার প্রতি রয়েছে তার গভীর শ্রদ্ধা আর প্রগাঢ় ভালোবাসা।

এরই মধ্যে লাভের টাকায় বাড়ির সঙ্গেই দিয়েছেন মুদির দোকান। ঘুরে দাঁড়িয়েছে রাশেদা, সাচ্ছন্দে চলছে তার জীবন ও জীবিকা।

রাশেদার কাপড়ের তৈরি করা মাক্সের ডিজাইন ও গুনগতমান নজর কাড়ে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ, জনপ্রতিনিধি ও সরকারি-বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তাগণের। তারা নগদে আবার অনেকেই অর্ডার ও আগাম টাকা দিয়ে মাক্স নেয়া শুরু করে। রাশেদার কর্ম উদ্যোগ আর সংগ্রামী জীবনের কথা জেনে জন প্রতিনিধিদের দুজন মিলে তাকে প্রদান করেন একটি শেলাই মেশিন। এখন চারটি মেশিনে মাক্স তৈরির কাজ চলে রাশেদার। কাজের পরিধি বাড়ায় এলাকার কাজ জানা নারীদের দিয়ে কাজ করান রাশেদা। যারা এখানে কাজ করছেন তাদেরও বেড়েছে উপার্জন আর স্বাবলম্বী হওয়ার উৎসাহ। তারাও হতে চান সংগ্রামী রাশেদা মতোই।

করোনাকালীন সময়ে মাক্স তৈরি আর বিক্রি করেই এখন স্বাবলম্বী রাশেদা হতে চান একজন সফল উদ্যোক্তা।