ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ছাত্রলীগের ভাবনা
ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে ইতিবাচক ও নেতিবাচক ধারণা থাকলেও বর্তমান কমিটি দায়িত্ব গ্রহণের পর সংগঠনটিকে নেতিবাচক ধারা থেকে বের করে নিয়ে এসে ইতিবাচক ধারায় যাত্রা শুরু করেছে বলে দাবি করেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। ডাকসু নির্বাচন, রাজনীতিতে পরিবারের ভূমিকা,আসন্ন নির্বাচন নিয়ে ছাত্রলীগের ভূমিকা, ছাত্রলীগে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন, গুজব প্রতিহত করতে ছাত্রলীগের পরিকল্পনাসহ সাম্প্রতিক গুরুত্বপূর্ণ সার্বিক প্রসঙ্গ নিয়ে “নতুন সময়.কম” এর প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।
প্রথমে জানতে চাইবো রাজনীতিতে আপনার পরিবারের ভূমিকা?
রাব্বানী: আমার রাজনীতি করার ক্ষেত্রে পরিবারের অবদান অনেক বেশি। সব চেয়ে বেশি অবদান আমার মায়ের। তিনি ছাত্রলীগ নেত্রী ছিলেন। সব সময় আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন। আমার মাতামহ যিনি বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য একজন কর্মী ছিলেন। আমার নানার মুখ থেকে বঙ্গবন্ধুর গৌরবোজ্জ্বল ছাত্রলীগের কথা শুনেছি। সেখান থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতি করার অনুপ্রেরণা পেয়েছি। সুতরাং আমার পরিবারের ভূমিকা অনেক।
আপনার মা নিজ হাতে বঙ্গবন্ধুর যে ছবি এঁকেছিলেন সেটা দেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি বলেছিলেন?
রাব্বানী: আপা যখন ১৯৮৪ সালে আমাদের এলাকায় গিয়েছিলেন তখন সারাদিন আপা আর আমার আম্মু একসাথে ছিলেন। রাতেও একসাথে ছিলেন টেকেরহাট ডাকবাংলোতে ওই স্মৃতিগুলাও আম্মু লিখে দিয়েছিলেন আপার কাছে আপা সেটা পড়েছেনও এবং আপা ওই ছবি দেখে খুব আবেগ আপ্লুত হয়ে যান এবং তিনি সযত্নে সেটা সংরক্ষণ করেছেন। তিনি বলেছেন তোমার আম্মু আমাকে অনেক ভালোবাসতো। আমি তার জন্য দোয়া করবো। এটা একটা অসাধারণ অনুভূতি।
ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ছাত্রলীগের ভাবনা?
রাব্বানী: ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আমরা আগেও বলেছি। শুধু ডাকসু নয় দেশের প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন জরুরী। নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধির গৌরব ধারার ৬০ ও ৭০ দশকে পেয়েছে। তোফায়েল ভাই, আ স ম আব্দুর রবদের সেই ফ্লেবার আমরা পেতে চাই, সেই সম্মান পেতে চাই। ছাত্রলীগে সাধারণ ছাত্র ছাত্রীরা আসুক। আমরা সেটা চাই। এখন যেহেতু সামনে নির্বাচন, পরিস্থিতির কারণে নির্বাচনের পরে দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় এনে দেশের প্রত্যেকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ইউনিট প্রতি ভাগ ভাগ করে সময় নির্ধারণ করে সবার সাথে আলোচনা করে আমরা নির্বাচনের ব্যাবস্থা করবো। আলোচনা করে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের ব্যাবস্থা করে হাসি মুখে ভালবাসা দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মন জয় করে ছাত্রলীগের ভিপি-জিএস প্রত্যেকটি প্যানেলে নিরংকুশ বিজয় লাভ করবে। আমরা প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে নির্বাচিত ভিপি-জিএস ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে উপহার দিতে চাই।
ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন কবে নাগাদ হবে?
রাব্বানী: আমরা ঠিক আগষ্টে দায়িত্ব পেয়েছি। এই মুহূর্তে আমাদের শোকের মাসের যে টাফ শিডিউল ছিল,অনেক প্রোগ্রাম ছিলো। আমরা যথাযথভাবে পালন করার চেষ্টা করেছি। আমরা এখন পর্যন্ত ওই ভাবে গুছিয়ে রেডি করতে পারিনি। আমরা বসেছি খসড়া করেছি। দেশরত্ন শেখ হাসিনা আমাদের প্রথম সংবিধান, আমদের প্রথম গঠনতন্ত্র। ইতিমধ্যে আমরা তার সাথে আলোচনা করেছি। তিনি একটি নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা দুজন কাজ করছি। আশা করছি আমরা এই সেপ্টেম্বরের মধ্যে বা বড় জোড় আগামী মাসের প্রথম দিকে ইনশাআল্লাহ আমরা সেরাদের নিয়ে একটি সুন্দর কমিটি গঠন করতে পারবো।
পূর্ণাঙ্গ কমিটির আকার কেমন হবে?
রাব্বানী: আকার সম্পর্কে আমি বলবো, আমাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যে কমিটি হয় তার উপরে যাওয়ার সুযোগ নেই। আমরা হয়তো কিছু স্পেস ফাকা রাখতে পারি যেহেতু যারা আমাদের হলের ক্যান্ডিডেটগণ রয়েছে বা বিভিন্ন জেলা ইউনিটের যারা সবারই কেন্দ্রে রাজনীতি করার স্বপ্ন থাকে। আর এই ছাত্রলীগ শেখ হাসিনার ছাত্রলীগ। এই ছাত্রলীগে অংশ হওয়ার জন্য ইতিহাসের সাক্ষী হওয়ার জন্য সবাই উদগ্রীব। সুতরাং সবাই চাইবে পারফরমেন্স শো করতে তাদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে ইতিবাচক ভাবে। আমরা সে জন্য কিছু স্পেস রাখবো যারা ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা বা ইউনিট থেকে যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে আসতে পারবে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক নয়, সবাইকে নিয়ে ব্যালেন্স করে আমরা ক্ষমতার ডিসেন্টালাইজেশন করতে চাই এবং বিভিন্ন জেলার সাথে প্রতিনিধি থাকে সেজন্য আমরা চেষ্টা করবো। সুতরাং বলতে পারি যে গঠনতন্ত্রের বাইরে কোনো সুযোগ নেই। আমাদের গঠনতন্ত্রে যা আছে তার বাইরে একজনকেও বাড়ানো হবে না, কথা স্পষ্ট আমার।
এতদিন ছাত্রলীগ নেতিবাচক ভুমিকায় বেশি ছিলো, ইতিবাচক ভূমিকায় আনতে আপনাদের পরিকল্পনা কেমন হবে?
রাব্বানী: আমরা যেদিন থেকে দায়িত্ব নিয়েছি, আমি জোর গলায় বলতে পারি, আমরা দায়িত্ব নিয়েছি (১মাস ১০ দিন)। ছাত্রলীগ সম্পূর্ণ ইতি বাচক ধারায় আছে এবং দেশরত্ন শেখ হাসিনার ছাত্রলীগ মানুষের মধ্যেও একটা উৎফুল্লতা আছে, প্রত্যাশা বেড়েছে আস্থা পাচ্ছে এই ছাত্রলীগের উপর। আমরা কথা ও কাজে মিল রাখার চেষ্টা করছি। এত বড় সংগঠনে অনেক সমস্যা থাকতে পারে, এটাকে একসাথে করে পারফেক্ট ভাবে চালানো সো ডিফিকাল্ট। আমরা চেষ্টা করবো আপনারাও আমাদের হেল্প করুন। ইতিমধ্যে আমরা বলেছি ছাত্রলীগের কেউ কোনো আর্থিক লেনদেন করলে আমাকে জানাতে, কেউ কোনো অনৈতিক কাজ করলে আমাদের জানাতে। আমরা সাথে সাথে ব্যাবস্থা নিবো। সবার কাছে আমাদের এই মেসেজ, আপার মেসেজ চলে গেছে। এই ছাত্রলীগ ব্যক্তির কোনো অপকর্মের দায়ভার নিবে না। ৪০ লাখের পরিবার ৪০/৪০০ জনের জন্য কলঙ্কীত হতে পারে না। সুতরাং যারা অপকর্ম করবে তাদেরকে আমরা সংগঠন থেকে রাজটিকেট করবো। প্রয়োজনে আইন শৃংখলা বাহিনীর হাতে তুলে দিবো যদি তারা অন্যায় করে। অন্যায় যেমন ছাত্রলীগ প্রশ্রয় দিবে না, ছাত্রলীগের প্রতি অন্যায় হলেও তা সহ্য করবে না।
অনলাইনে গুজব প্রতিহত করতে ছাত্রলীগের পরিকল্পনা?
রাব্বানী: ইতিমধ্যে এটা প্রমাণিত জামাত শিবির, বিএনপি ছাত্রদল, কিছু মেয়াদ উত্তীর্ন বাম কিছু পথভ্রষ্ট ও কিছু সুশীলদের নিয়ে যে পথভ্রষ্ট প্লাটফর্ম তৈরি করেছে, সেখান থেকে তারা অনলাইনকে জোর দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে, ভিত্তিহীন খবর প্রকাশ করছে, গুজব ছড়াচ্ছে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সিটিজেন জার্নালিজমের যুগে কোনো কিছু লুকানো সম্ভব নয়, সবাই সবকিছু জেনে যাচ্ছে। বরং তাদের জন্য নেতিবাচক হচ্ছে। যেহেতু তাদের অপপ্রচারের মাধ্যম হিসেবে তারা অনলাইনকে ব্যবহার করছে। আমরাও টিট ফর ট্যাট, সেভাবে এগোবো, যেমন কুকুর তেমন মুগুর দেব। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ যদি অনলাইনে একটিভ থাকি, স্টাকচারালভাবে সারা বাংলাদেশে যে কর্মী রয়েছে তারা যদি দায়ত্ব নিয়ে অনলাইনে কাজ করে, তাহলে জামাত, শিবির, ছাত্রদলের যে প্লাটফর্ম আছে তারা জাস্ট খড় কুটোর মত উড়ে যাবে। এটা আমরা বিশ্বাস করি ও জানি। সুতরাং আমরা ওই ভাবেই বঙ্গবন্ধুর সাইবার ব্রিগেড গড়ছি। আমাদের সারা দেশে ছাত্রলীগের যে কমিটি রয়েছে তাদের মধ্যে থেকে যারা একটিভ অনলাইনে কাজ করবে তাদের জন্য আমরা আলাদা প্লাটফর্ম তৈরি করছি। যারা কাজ করবে যে ৫\১০ জন তাদের মধ্য থেকে এক্সপার্ট এবং স্পেশিয়ালিস্টদের সিলেক্ট করবো। তারা শুধু এখানেই কাজ করবে। তাদের অন্য কোথাও কাজ করা লাগবে না। এটার জন্য তারা মূল্যায়িত হবে। এখানে পারফমেন্সের উপর ভিত্তি করে তাদের পোস্ট পজিশন মূল্যায়ন স্বীকৃতি সব আসবে। সুতরাং আমরা এভাবেই বঙ্গবন্ধু সাইবার ব্রিগেড (বিসিবি) স্বপ্নের প্লাটফর্ম তৈরি করছি। যারা আগামী নির্বাচনে দলের জন্য ইতিবাচক প্রচারণা, তাদের গুজব, মিথ্যা অপপ্রচার এগুলো রোধ করা থেকে শুরু করে অনলাইনে ছাত্রলীগের যাবতীয় ডিফেন্স, ডিফেন্ডেন্ট টিম হবে বিসিবি।
জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ছাত্রলীগের ভূমিকা?
রাব্বানী: ছাত্রলীগ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন এবং দেশরত্ন শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত ভ্যানগার্ড। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনা সরকারের যাবতীয় উন্নয়ন সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছিয়ে দিতে কাজ করবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় আনতে পথে প্রান্তরে ঘুরে ঘুরে কাজ করবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
সকলের উদ্দেশে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, ছাত্রলীগের ইতিহাস বাংলাদেশের ইতিহাস। ছাত্রলীগের জন্মলগ্ন থেকে বাংলাদেশের প্রতিটি ইতিহাসের পরতে পরতে ছাত্রলীগ ছিলো। সুতরাং আমাদের অধিকার আছে। আমরা এই দেশ স্বাধীন করেছি, রক্ত দিয়েছি, স্বাধীন পতাকা এনেছি, প্রথম জাতীয় সংগীত গেয়েছি। সুতরাং সময়ের সাহসী সন্তানেরা ছাত্রলীগ করে। আমরা আহবান জানাচ্ছি,আমরা দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসাবে বলছি, সময়ের সাহসী সন্তান হিসাবে বলছি, আপনারা আমাদেরকে সাহায্য করুন এবং আসুন আপনাদের যে কোনো যৌক্তিক প্রয়োজনে, নৈতিক আন্দোলনে ও অধিকার আদায়ের পক্ষে আমরা পাশে থাকবো।
একেএ