ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ২রা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১


‘ভোটাররা আরাম-আয়াশে থাকায় উপস্থিতি কম’


৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৮:১৮

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২৭ দশমিক ১৫ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একই সঙ্গে ভোট কম পড়া প্রসঙ্গে কমিশন বলেছে, সরকারি দলের অনেকে ভোট দিতে কেন্দ্রে না যাওয়ার এটার একটা কারণ। এছাড়া ভোট উপলক্ষ্যে সাধারণ ছুটি থাকায় রাজধানীর অনেক নাগরিক ছুটির আমেজ উপভোগ করায় কেন্দ্রে যায়নি; এটাও ভোট কম পড়ার অন্যনত কারণ। রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) আগারগাঁয়ের নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন।

কমিশন সচিব বলেন, ঢাকা উত্তরে ২৫ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং দক্ষিণে ২৯ দশমিক ০০২ শতাংশ ভোট পড়েছে। সে হিসেবে দুই সিটিতে গড়ে ২৭ দশমিক ১৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। তবে, কম ভোট পড়লেও তারা অসন্তুুষ্টি নেই তাদের। ভোট আরো ভালো হতে পারতো মন্তব্য করে তিনি বলেন, এর জন্য সব ধরণের আয়োজন রেখেছিল কমিশন। এখানে কারো ভোট কেউ দেয়নি এটাই সব প্রাপ্তি।

কারণ কাউকে অবৈধ উপায়ে ভোট দিতে হয়নি এবং কাউকে ভোটাধিকার প্রয়োগে বাধা দেয়া হয়নি। সবকিছু ঠিক ছিল। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা যেভাবে প্রচার প্রচারণা চালিয়েছে তাতে ভোটার উপস্থিতি আরো বেশি আশা করেছিলাম। আমরা ৫০ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতি আশা করেছিলাম। ভোট পড়ার হারে পুরোপুরি সন্তুষ্ট না।

ভোটারদের আস্থাহীনতার কারণে এত কম ভোট পড়েছে কিনা জানতে চাইলে সচিব মো. আলমগীর বলেন, অনাস্থার কারণে ভোট দিতে যায়নি, এটা আমার কাছে মনে হয়নি। অনাস্থার কারণে যদি ভোটে না যেত, তাহলে যারা সরকারি দল তাদের তো অন্তত ভোটে অনাস্থা নাই। তাদের যদি সব ভোটার ভোট দিত, তাহলেও তো এত কম ভোট পড়ত না। তার মানে হল, তাদেরও অনেক ভোটার ভোট দিতে যান নাই। যারা সরকারকে সমর্থন করেন। আমি ভোট না দিতে গেলেও সমস্যা নাই, এ ধরনের একটা মনোভাব থেকে হয়তো অনেকেই ভোট দিতে যান নাই। ভোট দিতে না যাওয়ার আরও কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, জনগণ ছুটি পেয়েছে, অনেকে ছুটি ভোগ করেছে। কেউ কেউ ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত ছিল।

মো. আলমগীর বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে পর্যবেক্ষকদের তো কিছু মতামত থাকবে। ভবিষ্যতে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে কি করা যায় সে বিষয়ে তাদের হয়তো পরামর্শ থাকবে। সেগুলো দেখে হয়তো কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।

অনেক গোপন কক্ষে আরেকজন আগে থেকে দাঁড়িয়ে ছিল কিংবা গোপন কক্ষে গিয়ে একজনের ভোট অন্যজন দিয়েছে। এ বিষয়ে কমিশন কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করবে কিনা? এর জবাবে মো. আলমগীর বলেন, আপনাদের মিডিয়ার মাধ্যমে এ অভিযোগটি আমাদের কাছে এসেছে। তাও খুবই অল্প মাত্রায়। আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেননি।

ভোটারদের না আনতে পারার ব্যর্থতা নির্বাচন কমিশনের কিনা জানতে চাইলে সচিব বলেন, মোটেই না। কারণ ভোটকেন্দ্রে আসার দায়িত্ব ভোটারের। বিয়ের দাওয়াত দেয়ার দায়িত্ব আমার, কিন্তু দাওয়াতে আসবেন কিনা সেটা আপনার ব্যাপার।

তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলোতে ভোটের হার অনেক কম। অস্ট্রেলিয়ায় ভোট দিতে যায় না মানুষ। অস্ট্রেলিয়া সরকার ও নির্বাচন কমিশন কী ব্যর্থ? মোটেই না। এ জন্য সেখানে আইন করা হয়েছে যে, ভোট না দিতে আসলে ১০০ ডলার জরিমানা দিতে হবে। তারা ১০০ ডলার জরিমানা দেয়, তারপরও ভোট দিতে যায় না।’ বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এটিও আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে শুনেছি। এ বিষয়ে কেউ লিখিতভাবে অভিযোগ করেননি। এই দুই অভিযোগ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কমিশনে লিখিতভাবে আসলে তদন্ত করা হবে, না হলে করা হবে না বলেও জানান ইসি সচিব।

এদিকে, কমিশন সচিব আরো বলেন, দুই সিটি নিব১াচনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রাথ১ীদের প্রচার সামগ্রী সোমবারের মধ্যে নিজ দায়িত্বে অপসারণ করতে হবে। যদি এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটে এবং প্রাথ১ীদের কাজটি আমাদের করতে হয় তাহলে তার নিব১াচনী সামগ্রী অপসারণ করাতে যে অথ১ ব্যয় হবে তার পুরোটাই প্রাথ১ীকে দিতে হবে। এর আগে এক পরিপত্রে প্রাথ১ী নিব১াচনী সামগ্রী অপসারণের তাগিদ দিয়েছিল। কিন্তু এতে প্রাথ১ীদের কণ১পাত হয়নি। গতকালও ইসি সচিব নতুন হুশিয়ারি দিলেও তার কতটুকু কায১কর হবে এখন সেটাই দেখার বিষয়।

গত ১ ফেব্রুয়ারি দুই সিটি ভোটে আওয়ামী লীগের মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলরদের নিরঙ্কুশভোটাররা আরাম-আয়াশে থাকায় উপস্থিতি কম বিজয় হয়েছে।

নতুনসময়/আইকে