ঢাকা শনিবার, ১৮ই মে ২০২৪, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


আ’লীগের হাতেই গণতন্ত্র হত্যা হয়েছে: ফখরুল


১৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৮:৪০

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশ স্বাধীন মত প্রকাশের দেশ। আজকে আমাদের এই দেশকে বর্তমান শাসকগোষ্ঠী ধ্বংস করে ফেলেছে। আমি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই এই গণতন্ত্র কাদের হাতে হত্যা হয়েছে। যারা আজ দাবি স্বাধীনতা যুদ্ধের একমাত্র ধারক-বাহক (আওয়ামী লীগ) তাদের হাতে গণতন্ত্র হত্যা হয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত যখন দেশ শাসন করছে তখন একে গণতন্ত্রের সকল প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়ে সর্বশেষ একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল প্রবর্তন করেছেন। এদেশের মানুষ এত সহজেই এটা ভুলে যায়নি। রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের এমপিরা, মন্ত্রীরা যারা কোন নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হয় আসেনি তারা অনেক বড় বড় কথা বলেন আমাদেরকে বাণী দেন, আমাদেরকে উপদেশ দেন। আমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করতে চাই আপনারা ৭১ সালে কতজন বাংলাদেশের রণাঙ্গনে থেকে যুদ্ধ করেছিলেন?আমরা এর হিসাব চাই। আজকে যখন আপনাদের নেতা এই অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তিনি যখন বলেন জিয়াউর রহমান পচাত্তরের হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন এবং তিনি কোন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না এই ধরনের বক্তব্য দেন তখন একবারও কি তারা চিন্তা করেন তাদের অতীত টা কি ছিল আর জিয়াউর রহমানের ভূমিকা কি ছিল? সেদিন আপনারা পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং জিয়াউর রহমান এই মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। আপনাদের সমস্ত অপকর্ম গুলোতে যখন পুরো জাতি হতাশ হয়ে গিয়েছিল, আপনার যখন গোটা দেশ ও জাতিকে একটি অন্ধকারের মধ্যে নিক্ষেপ করেছিলেন, একটা আবদ্ধ ব্যবস্থা বাকশাল এর মধ্যে নিয়ে গিয়েছিলেন তখন এই জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বেই এদেশের জনগণ বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

তিনি বলেন, আজকে লক্ষ করে দেখেন রোহিঙ্গারা এসেছে বাংলাদেশে সেই রোহিঙ্গা নিয়ে বাংলাদেশ একবারও উচ্চারণ হয়নি যে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের কোন হত্যার শিকার হয়েছেন। মিয়ানমার গণহত্যা করেছে এই সরকার কথাও বলেছে বলে আমি শুনিনি। গাম্বিয়া আফ্রিকার একটি দেশ তারা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা করেছে যে রোহিঙ্গারা গণহত্যার শিকার হয়েছে। আর আমাদের বাংলাদেশের সরকার বলছে তারা নাকি সাহায্য করার জন্য সেখানে গেছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ওখানকার আন্তর্জাতিক আদালতে যারা কাজ করছেন তারা বলছেন বাংলাদেশ এখানে আগে কোন এপ্লাই করে নাই তাই তাদেরকে কাজ করার মতো আর কোনো সুযোগ নেই।

ভারতের এনআরসি সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা প্রথম থেকে বলে আসছি এই এনআরসি বিষয়টিতে আমাদের সরকারের মনোযোগ দেওয়া উচিত। তাদের ভারতের সাথে কথা বলা উচিত কারণ এখানে আমাদের স্বার্থ আছে। আজকে বারবার বলা হচ্ছে বাংলাদেশিরা বেআইনিভাবে ভারতে প্রবেশ করছে এটা একটা মারাত্মক কথা। তারমানে এনআরসি করে তারা বলছে কাউকে থাকতে দেওয়া হবে না। তাদের মন্ত্রীরা বারবার ঘোষণা দিচ্ছেন সেইসব বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে, একটাকেও রাখা হবে না। আমাদের নাগরিক না অথচ বাংলাদেশী বলে তারা ফেরত পাঠিয়ে দিবেন এবং সেটা আমাদের উপর লক্ষ লক্ষ মানুষের আরেকটি চাপ আসবে। এটাতো আমাদের রাষ্ট্রের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব, স্থিতিশীলতা সকল কিছুর উপর চাপ সৃষ্টি করবে। সেসব বিষয়ে এ সরকারের কোন কথা নেই।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এদেশে আর কখনো সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হবে কিনা আমি জানিনা। আমরা জানি এখন ৯ শতাংশ, ৮ শতাংশ এমনকি ৭ শতাংশ ভোটার ভোট দিতে যায় না। কারণ ভোট ব্যবস্থার উপর তাদের আস্থা চলে গেছে। তারা জানে যে ভোট দিতে গিয়ে লাভ কি হবে? গিয়ে তো দেখব আমার ভোট নাই ভোট দেওয়া হয়ে গেছে নয়তোবা আমার ভোট জোর করে দিতে বলা হচ্ছে। এটা এখন সর্বত্র এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ব্যবস্থায় এটা চালু হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল এবং আস্থা এই বিচার বিভাগের প্রতি। মানুষ যেখানে গেলে মনে করে আমরা একটু আশ্রয় পাব। কিন্তু দুর্ভাগ্য সেখানে আমাদের দেশের সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, যিনি একটি নির্বাচনেও জীবনে পরাজিত হননি তাকে একটি মিথ্যা মামলা দিয়ে বেআইনিভাবে তার প্রাপ্য যে জামিন সে জামিন থেকে বঞ্চিত করে আটকে রাখা হয়েছে। সবচেয়ে হতাশ ও দুর্ভাগ্য ক্ষুব্ধ হয় এদেশের মানুষ যখন দেখে সর্বোচ্চ আদালত থেকে সে হুকুম আসছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, বেগম সেলিমা রহমান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, যুগ্ন মহাসচিব খাইরুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, সহ জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, যুবদল সাধারন সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারন সম্পাদক সাদেক খান, ওলামা দলের আহ্বায়ক কাজী নেসারুল হক, মৎসজীবী দলের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মাহতাব, তাতী দলের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ প্রমুখ।