দায়ী কে, কার বিরুদ্ধে কে ব্যবস্থা নেবে?

বার-বি-কিউ, হালের জনপ্রিয় খাবার। কাঁচা মাংসকে দীর্ঘ সময় ধরে পুড়িয়ে পুড়িয়ে তৈরী হয় এই মেন্যুটি। চলতি পথে চোখে পড়বে অনেক হোটেলের বাইরে আগুনের তাপে গ্রীল তৈরীর প্রক্রিয়া। সেসব হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে দেখুন একটি চিকেন কিভাবে পুড়িয়ে পরিবেশন উপযোগী করা হয়। ভাবছেন হঠাৎ বার-বি-কিউ নিয়ে রসালো আলাপ করছি কেন? তাহলে ভাবুন তো, একজন মানুষ পুড়ে মরার সময় কতো কষ্ট হয়। কতোটা কষ্টে জীবিত জীবনটা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে! বাঁচার চেষ্টা করে কিন্তু এ সমাজ যে সে চেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়।
একবার ভাবুন তো, চকবাজারের চুরিহাট্টায় অগ্নিকান্ডে পুড়ে মরা মানুষগুলোর অবস্থা! প্রিয় খাবার গ্রীল চিকেনের মতো প্রিয় মানুষগগুলো পুড়ে অঙ্গার হয়েছে। আর এমন অগ্নিকান্ডের নেপথ্যে যারা দায়ী তারা বারবিকিউ খেতে খেতে কি কখনো মনে করবেন, যে পুড়ে মরা মানুষগুলোর মাংস খাচ্ছেন? দায়ীরা খেয়ে দেখুন না মৃত মানুষের পোড়া মাংস? জানি ভালো লাগবে না, খেতেও চাইবেন না। মরলে ১ লাখ টাকা আর পুড়লে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে কি হবে? ক্ষতিপূরণ দিলেই কি সকল দায় এড়ানো যায়? যারা পরিবারের প্রিয় মানুষটিকে হারায়, তারা কি ক্ষতিপূরনের টাকা চায়? নাকি জীবিত মানুষটির সান্নিধ্য চায়?
অগ্নিকান্ডের পর ঘটনাস্থলে দফায় দফায় কর্তা ব্যক্তিরা। বানী দিচ্ছেন, পুরান ঢাকায় কোন কেমিক্যাল গোডাউন বা কারখানা রাখা হবে না। নিমতলীর অগ্নিকান্ডে ১১৯ জন মানুষের প্রাণহানীর পরও এমন বানী শুনিয়েছিলেন আপনারা। কাজের কাজ কিছুই হয়নি, চকবাজারের অগ্নিকান্ডের পরও আবারো একই বানী শোনাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রশ্ন হলো, পুরান ঢাকাকে কেমিক্যালমুক্ত না করতে পারার দায় কার? দক্ষিনের মেয়র, ঐ এলাকার এমপি, সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, অসাধু বাসিন্দারা কি দায় এড়াতে পারে? ব্যর্থতার দায় নিয়ে কি মেয়র সাইদ খোকন বা এমপি মশাই পদত্যাগ করার সাহস রাখেন? অথচ আপনারাই বলছেন, দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তো আপনাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা কে নেবে? ফুটপাত দখলমুক্ত করতে পারেন না যারা, তারা পুরান ঢাকাকে কেমিক্যালমুক্ত করবেন কি করে?
পুরান ঢাকার বাসিন্দারা নিমতলীর ঘটনা থেকে যদি শিক্ষা নিতো তাহলে চুরিহাট্টার ঘটনা দেখতে হতো না। অর্থের লোভে সেসব এলাকার মানুষ কেমিক্যালসহ বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দেন। এলাকার মানুষের কি কোন দায় নেই? সবাই যদি সচেতন হয়, তাহলে ধীরে ধীরে অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কেমিক্যাল ব্যবসা, দাহ্য পদার্থের গোডাউনসহ এসব পুরান ঢাকা থেকে না সরালে অগ্নিকান্ডে মানুষ মরতেই থাকবে। অপেক্ষা করতে হবে পরবর্তী অগ্নিকান্ডে হতাহতের জন্য। সুতরাং সিদ্ধান্ত নিতে হবে এখনই। আপনার আশেপাশে কোন কেমিক্যাল কারখানা বা গোডাউন থাকলে প্রতিবাদ করুন। আগুনে পুড়ে মরার থেকে প্রতিবাদ করা অনেক জরুরী। শুধু ভার্চুয়াল জগতে প্রতিবাদী স্ট্যাটাস আর সংশ্লিষ্টরা লোক দেখানো বুলি আওড়ালে হবে না। নইলে নগর যখন পুড়বে দেবালয় বাঁচবে না, আপনিও না...
দিপন দেওয়ান
সিনিয়র রিপোর্টার
বাংলাভিশন