ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১


এসিল্যান্ড সাইয়েমার বিরুদ্ধে মামলা করবেন ব্যারিস্টার সুমন


২৮ মার্চ ২০২০ ১৯:৫৫

যশোরের মণিরামপুরে মাস্ক না পরায় তিন বৃদ্ধের কান ধরিয়ে ছবি তোলার ঘটনায় বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে। এ ঘটনায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী ম্যাজিস্ট্রেট মণিরামপুরের উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইয়েমা হাসানের বিরুদ্ধে মামলা করার ঘোষণা দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

বিষয়টি সাংবাদিকদের নিজেই জানিয়েছেন আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

শুক্রবার (২৭ মার্চ) ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে যশোরের মণিরামপুরের চিনাটোলা বাজারে এ ঘটনা ঘটান এসিল্যান্ড সাইয়েমা হাসান।

এসিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করবেন উল্লেখ করে আইনজীবী সুমন বলেন, ‘তারা (ভ্যানচালকসহ বৃদ্ধ মানুষ) বয়স্ক মানুষ। তাদের কোনো অভাব-অভিযোগ না শুনে, প্রয়োজন না বুঝে কান ধরে ওঠবস করিয়েছেন এসিল্যান্ড (সহকারী কমিশনার)। এসিল্যান্ড নিজেই ওই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করেছেন। ওই ভিডিও এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। এটা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অপরাধ, তা নিয়ে বসে থাকা যায় না।’

স্থানীয় সূত্র জানায়, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে যশোরের মণিরামপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইয়েমা হাসানের নেতৃত্বে শুক্রবার (২৭ মার্চ) বিকেল থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে চিনাটোলা বাজারে অভিযানের সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে পড়েন প্রথমে দুই বৃদ্ধ। এর মধ্যে একজন বাইসাইকেল চালিয়ে আসছিলেন। অপরজন রাস্তার পাশে বসে কাঁচা তরকারি বিক্রি করছিলেন। তাদের মুখে মাস্ক ছিল না।

এ সময় পুলিশ ওই দুই বৃদ্ধকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করলে সাইয়েমা হাসান শাস্তি হিসেবে তাদের কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখেন। শুধু তাই নয়, এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিজেই তার মোবাইল ফোনে এ চিত্র ধারণ করেন। এ ছাড়া পরবর্তীতে অপর এক ভ্যান চলককে অনুরূপভাবে কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখেন।

শুক্রবার (২৭ মার্চ) রাতে সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। একজন সরকারি কর্মকর্তার এমন অমানবিক কর্মকাণ্ডে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন নেটিজেনরা।

এ বিষয়ে যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ বলেন, ‘ছবিটি আমি দেখেছি। এটি তিনি করতে পারেন না। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা আমাদের কাজ নয়। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’

ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এসিল্যান্ড সাইয়েমা হাসানকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। একইসঙ্গে তাকে যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ন্যস্ত করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে মণিরামপুরের সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড) সাইয়েমা হাসানের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে সমালোচনা শুরু হলে মনিরামপুরের সাংবাদিকদের বলেছেন, সরকারি দায়িত্ব পালন করেছেন। দায়িত্ব পালনে ভুল হতে পারে। ঘটনাটি নিয়ে তিনি বিব্রত। ভুল হয়ে থাকলে তিনি ক্ষমাপ্রার্থী।

ফেসবুকে ছবিটি প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভাইরাল হয়ে যায়। তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন (জেইউজে) সভাপতি সাজেদ রহমান ছবিটি ফেসবুকে শেয়ার করে লিখেছেন, ‘রাষ্ট্রের মালিকের সাথে, রাষ্ট্রের কর্মচারীর আচরণ...কান ধরে উঠবস করানো বৃদ্ধটি ভ্যানচালক। নাম বললাম না। পেটের দায়ে সংসারের চাল-ডাল কিনতে এসেছিলেন যশোরের মণিরামপুরের চিনাটোলা বাজারে। এসিল্যান্ড সাইমা হাসান জনসম্মুখে তাকে কান ধরে উঠবস করালেন। আবার মজার ঘটনা মনে করে তিনি ছবি তুললেন নিজের মোবাইলে। এসিল্যান্ড দেশের সামান্য একজন কর্মচারী। এই ছবি দেখে আমি স্থির থাকতে পারছি না। আমি তার শাস্তি দাবি করছি।’

সাজেদ রহমানের পোস্টটি শেয়ার করেছেন যশোর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার আলম খান দুলু। তিনি লিখেছেন, ‘সরকার ও প্রশাসনের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে অতিউৎসাহী কিছু পুলিশ ও আমলা। এইসব বন্ধ করুন।’

যশোর জেলা ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি শ্যামল কুমার শর্মা তার ফেসবুকে ছবিটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘এই জন্যই আমাদের রক্ষক কিছু পুলিশ এবং কিছু সরকারি কর্মকর্তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে মানুষ সমালোচনা করে। দয়া করে অতি উৎসাহী হবেন না।’

এদিকে যশোর জেলার সরকারি ওয়েবসাইটে মনিরামপুরের ট্যাবে সমালোচিত সাইয়েমা হাসানেরও কান ধরার দৃশ্য এঁটে দিয়েছে হ্যাকাররা।