ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


জামিন পেলেন প্রথম আলো সম্পাদক


১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:০২

ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র নাইমুল আবরারের মৃত্যুর ঘটনায় অবহেলার অভিযোগে করা মামলায় প্রথম আলো সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমান বিচারিক আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন।


সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার ভারপ্রাপ্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. কায়সারুল ইসলাম দুই হাজার টাকা মুচলেকায় মতিউর রহমানের জামিন মঞ্জুর করেন।

আদালতে মতিউর রহমানের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী, আমিনুল গনি টিটো, প্রশান্ত কুমার কর্মকার, চৈতন্যচন্দ্র হালদার, আশরাফুল আলম, সুমন কুমার রায়, আবদুর রহিম, শাহ আলম প্রমুখ। বাদীপক্ষে ছিলেন আইনজীবী ওমর ফারুক আসিফ।

পরে মতিউর রহমানের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী সাংবাদিকদের বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আদালত শুনানি নিয়ে তার জামিন মঞ্জুর করেন।

এই মামলায় গত ২০ জানুয়ারি মতিউর রহমানকে চার সপ্তাহের আগাম জামিন দেন হাইকোর্ট। এরপর তাকে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। একইসঙ্গে প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ও কিশোর আলোর সম্পাদক আনিসুল হকসহ অপর পাঁচজনকে হয়রানি ও গ্রেফতার না করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ওই মামলায় অভিযোগ গঠন বা পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করা পর্যন্ত (যেটি আগে হয়) তাদের হয়রানি ও গ্রেফতার না করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

অপর চারজন হলেন-প্রথম আলোর হেড অব ইভেন্ট অ্যান্ড অ্যাকটিভেশন কবির বকুল, নির্বাহী শাহপরান তুষার ও নির্বাহী শুভাশীষ প্রামাণিক এবং কিশোর আলোর জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক মহিতুল আলম।

এর আগে নাইমুল আবরার নিহত হওয়ায় কিশোর আলো কর্তৃপক্ষের অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেছে মর্মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুল আলিম এ প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে গত ১৬ জানুয়ারি আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

প্রতিবেদনে ঘটনার জন্য মতিউর রহমান ও আনিসুল হক ছাড়াও কবির বকুল, শুভাসিষ প্রামাণিক শুভ, মুহিতুল আলম পাভেল, শাহ পুরান তুষার, জসিম উদ্দিন তপু, মোশারফ হোসেন, মো. সুমন ও কামরুল হওলাদারকে ঘটনার জন্য দায়ী করা হয়।

এই মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক আসিফ বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমআলো সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০৪ (ক) ধারায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ আনা হয়েছিল। একইসঙ্গে এ ঘটনায় আর কারা জড়িত এবং কার কি দায় রয়েছে তা তদন্তে আমরা আবেদন জানিয়েছিলাম। স্বল্প সময়ের মধ্যেই এ মামলার প্রতিবেদন দাখিল করেছে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। যেই ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছিল সেই ধারাতেই কিশোর আলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত ১০ জনকে এ ঘটনার জন্য দায়ী করে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। আমরা এ প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট।

তিনি আরও বলেন, ১৬ জানুয়ারি আদালত প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। এই ধারায় বিচারে চূড়ান্তভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আসামিদের সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড হতে পারে।

গত বছর ১ ন‌ভেম্বর ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে কিশোর আলোর অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নাইমুল আবরার রাহাত নামে নবম শ্রেণির এক ছাত্রের মৃত্যু হয়। ওই‌দিন বিকেলে বিদ্যুতায়িত হলে তাকে মহাখালীর ইউনিভার্সাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এরপর গত বছর ৬ নভেম্বর নাইমুল আবরা‌রের বাবা ম‌জিবুর রহমান দৈ‌নিক প্রথম আলোর সম্পাদক ও প্রকাশক এবং কি‌শোর আলোর প্রকাশক ম‌তিউর রহমা‌নের বিরু‌দ্ধে মামলা দায়ের করেন। তার বিরু‌দ্ধে দণ্ড‌বি‌ধির ৩০৪ (ক) ধারায় অব‌হেলাজ‌নিত মৃত্যুর অভিযোগ আনা হয়।

ওইদিন আদালত শিক্ষা‌র্থী নাইমুল আবরা‌রের মরদেহ দ্রুত কবর থে‌কে তু‌লে ময়নাতদ‌ন্তের নি‌র্দেশ দেন। একইস‌ঙ্গে এ ঘটনায় হওয়া অপমৃত্যুর মামলার স‌ঙ্গে নতুন মামলা একীভূত ক‌রে তদন্ত ক‌রে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা‌কে (ও‌সি) প্র‌তি‌বেদন দা‌খি‌লের নি‌র্দেশ দেন।

নতুনসময়/আনু