ঢাকা বুধবার, ৩০শে এপ্রিল ২০২৫, ১৮ই বৈশাখ ১৪৩২


ছিল ছিচকে চোর, এখন সিনেমার প্রযোজক


২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৪২

ছিচকে চুরির অভিযোগে গ্রাম সালিশিতে শাস্তি হয়েছে বেশ কয়েকবার। একসময় চালাতেন রিকশা, কখনও করতেন চুরি। আর এভাবেই চলত তার জীবন। চাঁদপুর শহরে তাকে সবাই ডাকত ‘চোরা সেইল্লা’ নামে। এরপর ছেড়েছে গ্রাম। অল্প কয়েকবছরে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছেন তিনি। এখন তিনি শতকোটি টাকার মালিক। ফিরে গেলেন গ্রামে, করলেন নির্বাচন। হয়ে গেলেন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান।

চাঁদপুরের শাখুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিমের উথান স্বপ্নকেও হয়ত হার মানিয়ে যাবে। বর্তমানে তিনি আলোচনায় শাকিব খানের প্রযোজক হিসেবে। এরইমধ্যে শাকিব খানকে নিয়ে একাধিক সিনেমা প্রযোজনা করেছেন তিনি।

বেশি দিন আগের কথা নয়। আশির দশকে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েন। আর চুরির অপরাধে ইউনিয়ন পরিষদের সিলিংয়ে টাঙিয়ে পেটানো হয় তাকে। ল্যাম্পপোস্টে বেঁধেও পিটিয়ে বিচার করা হয় তার অপরাধের। এমন কথা তার গ্রামে রটানো। বছর কয়েক আগে একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেল ও কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে খবরও প্রকাশ হয়েছে। খবরে প্রাধান্য দেয়া হয়েছিল ‘ছিচকে চোর থেকে চেয়ারম্যান’ হওয়ার গল্প।

সেসব প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে জানা যায়, অপরাধের কারণে তার পিতা মুচলেকা দিয়ে ছেলেকে ছাড়িয়ে নেন। মুচলেকায় লেখা হয়- তার ছেলে মারা গেলে কোন অভিযোগ নেই। তিনিই পরবর্তীতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হন।

সেসব প্রতিবেদনে তার পরিবারের খবর জানা যায়, ওছমান খান ওরফে সেলিম। পিতা অবদুল হাই খান। ছিলেন সাখুয়া ইউনিয়নের কেরানি। সেলিম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডিও পার হতে পারেননি। ১০-১২ বছর বয়স থেকেই ছিলেন ছিঁচকে চোর। কারও ঘরের মুরগি, কারও ঘটি-বাটি চুরি করতেন। চাঁদপুরের বিভিন্ন লঞ্চে পকেটমারার কাজও করতেন। একপর্যায়ে চোরা সেইল্ল্যা হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন তিনি।

চুরির ঘটনায় আশির দশকে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান মনা খান তার বহুবার জরিমানা করেন। নব্বইয়ের দশকে তার বাড়িঘরের মালামাল চুরি করেন সেলিম। এ নিয়ে সালিশ বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে সাবেক চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন। জীবনে কোনদিন চুরি করবেন না বলে ৫০ টাকার স্ট্যাম্পে মুচলেকা দেন সেলিম। এ ঘটনার কিছুদিন পর একটি হত্যা মামলার আসামি হয়ে চাঁদপুর থেকে পালিয়ে ঢাকায় আশ্রয় নেন সেলিম।

এলাকায় কথিত আছে, ঢাকায় এসেও উত্তরার একটি রিকশা গ্যারেজ থেকে রিকশা নিয়ে চালান। ঘটনাক্রমে একদিন আওয়ামী লীগ নেতা মোফাজ্জল হোসেন মায়া চৌধুরী তার রিকশায় ওঠেন। ওই রিকশা গ্যারেজ মায়া চৌধুরীর বাসার কাছে হওয়ায় তার বাসার কাজকর্ম করার সুযোগ পায় সেলিম। সেখান থেকে তার পরিচয় হয় ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সঙ্গে। একপর্যায়ে রিকশা চালানো ছেড়ে দেয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও মায়া চৌধুরীর হাতে-পায়ে ধরে সাখুয়া ইউনিয়নের জন্য কিছু কাজ করার চেষ্টা-তদবির করেন। কিন্তু তার জেদ রয়েছে চেয়ারম্যান হওয়ার। সাখুয়ার সাবেক দুই চেয়ারম্যান তাকে চুরি করার অপরাধে মারধর করেছে, তাই চেয়ারম্যান হওয়ার টার্গেট করেন।

সেই সেলিম এখন শুধু ‘সেলিম’ নয়, ‘সেলিম সাহেব’ বলে তাকে সবাই সম্বোধন করেন। কারণ তিনি শত কোটি টাকার মালিক। কি কি ব্যবসা আছে তার? জানা যায়, ঠিকাদারিসহ নানা ধরনের ব্যবসা। যুক্ত হলো সিনেমা প্রযোজনাও।

এমএ