তুহিন-গাবু'র 'ক্যাফে' ও গৌতম চট্টোপাধ্যায়
ক্যাফে, টোস্তাও কোলাও, ক্যাফে, টোস্তাও কোলাও
সেন্তাদো ইউও উন দিয়া
এসপারানদো মি ক্যাফে
হাবিয়া ক্যাসুয়ালমেনতে
ক্যাসুয়ালমেনতে লি প্রেগুনতে
ক্যাফে, টোস্তাও কোলাও, ক্যাফে, টোস্তাও কোলাও’।
লাতিন সালসা ধাঁচের এই গানটি ইসমায়েল কুইনতানার। তার এই ‘ক্যাফে’ গানটি একসময় তুমুল জনপ্রিয় ছিল পাশ্চাত্যে। নিউ বাংলা ওয়েভ মিউজিকের পথিকৃৎ হিসেবে পরিচিত কলকাতার গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের এই সুর কান এড়ায়নি। তিনি কুইনতানার গানের আদলে বাংলায় লিখে ফেললেন ‘ক্যাফে’ গানটি। সুর করে নিজে গেয়েও ফেললেন। ১৯৯৬ সালে মহীনের ঘোড়াগুলি সম্পাদিত ‘ঝরা সময়ের গান’ এ গৌতম চট্টোপাধ্যায় এই কম্পোজিশন প্রকাশিত হলো। পরেরটা যা হলো তা ইতিহাস,কমবেশি অনেকেরই জানা।
গানটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে চলন্ত ট্রেনের গেটে দাঁড়িয়ে আছে এলোমেলো চুলের এক যুবক। গিটার হাতে ছাদের রেলিংয়ে বসে গান গাইছে মধ্যবয়সী গৌতম চট্টোপাধ্যায়। অথবা ছাদে এক তরুণীর উন্মাতাল নৃত্য।
আমাদের হৃদয়ে গেঁথে যাওয়া সেই ‘ক্যাফে’ গানটি সম্প্রতি কোক স্টুডিও বাংলা নতুন করে সামনে এনেছে। এ দফায় গানটি গেয়েছেন আভাস ব্যান্ডের তানজির তুহিন। তার সহশিল্পী ছিলেন গাবু।
ইউটিউব টাইটেলে যারা তুহিনের সঙ্গে গাবুর নাম দেখে শুরুতে চিনতে পারেন নি, তাদের জন্য বলি।
যারা পশ্চিম বাংলার মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির খোঁজ-খবর রাখেন, তাদের কাছে গাবু পরিচিত নাম। এ দফায় গাবু আরও বেশি প্রাসঙ্গিক, কারণ তিনি গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের ছেলে। গানের মাঠে তার নাম গাবু হলেও কাগজে-কলমে গৌরব চট্টোপাধ্যায়। বাবার হাত ধরেই সেই ছোটবেলাতেই সুর-সঙ্গীতে হাতেখড়ি তার।
গাবু এক স্মৃতিচারণায় লিখেছেন, নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ভারতে যখন স্যাটেলাইট টেলিভিশন এলো, তখন তারা বাবা চিন্তা করলেন গানের সঙ্গে মিউজিক ভিডিও করবেন। সবসময় ‘আউট অফ দ্য বক্স’ চিন্তা করা গৌতম চট্টোপাধ্যায় তখনই বেছে নেন এমন কিছু শিল্পীকে, যারা লোকমুখে অতটা পরিচিত নন। তিনি চিন্তা করেন অরুনেন্দু দাসের গান করবেন। সঙ্গে বাচ্চাকাচ্চাদের নিয়েও কিছু একটা করার পরিকল্পনা করেন।
১২/১৩ বছর বয়সীদের নিয়ে গড়ে তোলেন ব্যান্ড ‘লক্ষ্মীছাড়া’। সেই ব্যান্ডেরই ফাউন্ডার মেম্বার গাবু। পরবর্তীতে এই ‘লক্ষ্মীছাড়া’ দিয়ে ভারতীয় বাংলা মিউজিকে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছেন গৌরব বা গাবু।
এ দফায় কোক স্টুডিও বাংলার এই জনপ্রিয় গানটির কম্পোজিশন নিয়ে অনেকে নানা মন্তব্য করছেন। কেউ বলছেন, ‘মন ছুঁয়ে গেছে’। কেউ আবার সমালোচনা করছেন। বলছেন, তুহিন বরাবরের মতোই ভালো ছিল, কিন্তু ওভারঅল কম্পোজিশন ভালো লাগেনি। আরও কত কী লেখা ভাসছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ইথারে।
তবে, গাবুর যে ড্যাশিং স্টাইল লক্ষ্মীছাড়ায় দেখা যেত, সেই স্টাইলেরই দেখা মিলেছে বাবার গানে। তার ধর-মার-কাট টাইপ গায়কী বরাবরের মতোই প্রশংসা কুঁড়িয়েছে শ্রোতাদের।
এ দফায় কম্পোজিশন যা বিতর্কই হোক, গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের ‘ক্যাফে’ কে স্মরণ করেই যে এই গানটি সবাই মাথায় তুলে রাখবেন, তা বলা যায় নিঃসন্দেহে।
