ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ১৬ই মে ২০২৪, ৩রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


আবারো চালু হয়েছে রাজশাহীর পুঠিয়ায় ভেজাল ক্রীম কারখানা


৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৫:৪২

আবারো চালু হয়েছে রাজশাহীর পুঠিয়ায় ভেজাল ক্রীম কারখানা

কিছুদিন আড়ালে থাকার পর আবারো চালু হয়েছে রাজশাহীর পুঠিয়ায় রং ফর্সাকারী ভেজাল প্রসাধনী কারখানা গুলো। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উপজেলায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে প্রায় ড-জন দুয়েক ভেজাল রং ফর্সা ক্রীম কারখানা।

এসব ভেজাল কারখানার ব্যপারে গত প্রায় দু’বছর পূর্বে উপজেলা প্রশাসনকে অভিযান ও বন্ধের নির্দেশনা আসে প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয় থেকে। তবে প্রশাসনের নিরব ভূমিকায় এখনো বন্ধ হয়নি কারখানা গুলো। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে উৎপাদিত কারখানার মালিকরা ভেজাল ও অবৈধ রং ফর্সাকারী প্রসাধনী গুলো প্রতিদিন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরের নামী দামী দোকান এবং বিউটি পার্লার গুলোতে পৌছে দিচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ থানা পুলিশ-উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাদের মদদের কারণে ভেজাল ক্রীমগুলো কারখানাগুলো বন্ধ হচ্ছে না।

জানা গেছে, উপজেলায় কয়েকটি এলাকার কিছু অসাধু ব্যক্তি দীর্ঘ দিন থেকে রং ফর্সকারী নকল ও ভেজাল প্রসাধনী উৎপাদন করে আসছে। বিভিন্ন কারখানার মালিকগণ তাদের উৎপাদিত ভেজাল প্রাসাধনী গুলো সারা দেশে বাজারজাত করছে। যা মানব দেহের জন্য মারাক্তক ক্ষতি বলে ধারনা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভেজাল ক্রীম কারখানা গুলো বন্ধ ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গত ২০১৭ সালের ১৬ মে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের যুগ্ম সচিব স্বাক্ষরিত একটি পরিপত্র জারি করেন। এছাড়াও রাজশাহী জেলা প্রশাসক ও পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর প্রেরণ করা হয়। যাহার স্বারক নং-০৩.০৭৯.০১৬.০৪.০০.২৬.২০১৬-৫৩৪ (৪)।

এসকল ভেজাল ও অবৈধ ক্রীম কারখানা বন্ধের নির্দেশনায় রয়েছে, পুঠিয়ার বানেশ্বরে মর্ডাণ হারবাল, রুপসী গোল্ড, মেডোনা স্পট ক্রীম ও হারবাল, চ্যালেঞ্জার হারবাল ও প্রসাধনী, ডিজিটাল হারবাল, উপজেলার অন্যান্য এলাকায় সীনা স্পট ক্রীম, রোমাঞ্চ হারবাল ও স্পটক্রীম, ডায়মন্ড স্পট ক্রীম, ঝিলিক সলিসন, লাউস ষ্টার গোল্ড ও আইকন হারবাল, লাকি সেভেনস্পট ক্রীম এবং জ্যোতি বিউটি হারবাল। পত্রে আরও উল্লেখ আছে, ক্রীম কারখানার মালিকরা বিএসটিআই কর্তৃক মাত্র দু’একটি পণ্যের অনুমোদন নিয়েছে। পরে কারখানার মালিকরা বিভিন্ন লোভনীয় মোড়ক ব্যবহার করে ভেজাল মিশ্রিত একাধিক পণ্যে উৎপাদন করছে।

কারখানার মালিকরা বিভিন্ন দোকান থেকে ফেয়ার এন্ড লাভলী ও রেমি স্পট ক্রীম, তিব্বত স্নো সংগ্রহ করেন। এরপর মানব দেহের ক্ষতিকারক স্টিলম্যান, টিয়ারিক এসিড, আইসোপ্রোপাইল, মাইরিস্টড, স্পিরিট, আরসি, সাধারন পানির সাথে মিশিয়ে রং ফর্সাকারী ক্রীম ও বিভিন্ন প্রসাধনী তৈরি করছে। তারা প্রাহকদের প্রতারিত করতে বাহারী বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আকৃষ্ট করছে। এ সকল পণ্য ক্রয় করে জনসাধারণ আর্থিক ভাবে ক্ষতিগস্থ হচ্ছে। পাশাপাশি ক্রেতারা ওই ভেজাল পণ্য ব্যবহার করে বিভিন্ন চর্ম রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

পরিপত্রে আরও উল্লেখ করা আছে, থানা পুলিশ উপজেলা প্রশাসনসহ একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতারা ওই সকল ভেজাল নকল প্রসাধনী কারখানার মালিকদের নিকট থেকে সুবিধা নিয়ে আসছে। যার কারণে উপজেলা প্রশাসন ওই অসাধু ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকারী ভূমিকা পালন করতে পারছে না। এতে করে ওই কারখানার মালিকরা দেদারছে অবৈধ ভেজাল পণ্য উৎপাদন ও বিপনন করছে। ওই নির্দেশনার প্রায় দুই-বছর অতিবাহিত হলেও রহস্যজনক কারণে ভেজাল প্রসাধনী কারখানা গুলোতে প্রাশাসন কোনো পদক্ষেপ বা বন্ধ করছে না। এতে করে ভেজাল প্রসাধনী কারখানার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

এ ব্যাপারে চর্ম রোগ বিশেষজ্ঞ জানান, মানুষের মুখমন্ডল ও চর্ম অতি সুক্ষ। আর ষ্টিলম্যান, টিয়ারিক অ্যাসিড, আইসোপ্রোপাইল, আরসি, স্পিরিট,মাইরিষ্টেডসহ বিভিন্ন উপকরণ মিশ্রণ করে বিশেষ ভাবে তৈরিকৃত স্পট ও রং ফর্সাকারী ক্রীম গুলো ব্যবহার করলে ত্বকের ক্ষতি ও ক্যান্সারের মত মারাক্তক রোগ দেখা দিতে পারে। তাই বাজারে আসা বিভিন্ন হারবাল কোম্পানীর রং ফর্সাকারী স্পট ক্রীম পাওয়া যায় এ গুলো পরিহার করাই ভালো।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুলা আল মাহমুদ জানান, ভেজাল ক্রীমগুলোর বিরুদ্ধে আমারা মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে আসছি। এছাড়াও খুব দ্রুত ভেজাল কারখানার বিরুদ্ধে অভিযানসহ আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নতুনসময়/আইএ