মোহনপুরে গ্রাহকদের অর্ধকোটি টাকা নিয়ে উধাও ডাচ্ বাংলা এজেন্ট

রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি বাজারে ডাচ্ বাংলা ব্যাংক এর এজেন্ট মেসার্স সরকার ফার্মেসী গ্রাহকদের প্রায় অর্ধ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) সকালে ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা টাকার দাবিতে শাখাটির সামনে অবস্থান করেন এবং একপর্যায়ে শাখাটিতে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে পুলিশ এসে পরিবেশ শান্ত করেন।
মেসার্স সরকার ফার্মেসীর মালিক উপজেলার বাটুপাড়া গ্রামের ইদ্রিস সরকারের ছেলে আরজেদ সরকার ও তার শ্যালক শাহিন বর্তমানে গাঁ ঢাকা দিয়েছেন।
ভুক্তভোগী গ্রাহক সূত্রে জানা গেছে, টাকা জমা দেয়ার রসিদ, কারেন্ট বিল পরিশোধের রসিদ দিলেও সেই অর্থ জমা না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। আর সেই টাকা জমা নিলেও তা একাউন্টে জমা করেননি এজেন্ট মালিক।
জানা গেছে, নুড়িয়াক্ষেত্র গ্রামের মুজাহার আলী গত ১৬ মার্চ কৃষি ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে মৌগাছি বাজারে ডাচ্ বাংলা এজেন্ট শাখায় ৫০ হাজার টাকা জমা দেন। কিন্তু পরদিন সেই টাকা উত্তোলন করতে গেলে তিনি জানতে পারেন তার একাউন্টে কোনই টাকা জমা নেই। হরিফলা গ্রামের মোস্তফা টাকা জমা রাখেন ১ লক্ষ ৭০ হাজার। উত্তোলন করেন মাত্র ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু পরবর্তীতে বাকি ৯০ হাজার টাকা উত্তোলন করতে গেলে তার একাউন্টে মাত্র ১০ হাজার টাকা পান। বাকি টাকা নিয়ে তালবাহানা করতে থাকে শাখার মালিক। কালিগ্রামের মেহের আলী ৮ লক্ষ টাকা একাউন্টে জমা রাখেন। কিন্তু সেই টাকা জমার রসিদ দিলেও একাউন্টে জমা হয় মাত্র ৫৬ টাকা।
আরো জানা গেছে, বাটুপাড়া গ্রামের শিউলি বেগম জমা রাখেন ৯০ হাজার। উত্তোলন করেন মাত্র ৩৫ হাজার টাকা। পরবর্তীতে ৫৫ হাজার টাকা তুলতে গেলে একাউন্টে মাত্র ৫ হাজার টাকা আছে বলে জানতে পারেন। এ কারণে তার সংসার ভাংঙার উপক্রম। তিনি আর টাকা ফেরত পাননি। মৌগাছি গ্রামের রেজিয়া বিবি ৫৬ হাজার টাকা জমা রেখে ৫ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। বাকি ৫১ হাজার তিনি আর তুলতে পারেননি। বাটুপাড়া গ্রামের যাদু বেগম ২ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা জমা করেন কিন্তু তার একাউন্টে কোন টাকাই জমা হয়নি। হরিহরপাড়ার মিনারুল জমা রাখেন ১ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা কিন্তু কয়দিন পর উত্তোলন করতে গেলে জানতে পারেন তার একাউন্টে কোনই টাকা জমা হয়নি।
নুড়িয়াক্ষেত্র গ্রামের অনেকে বিদ্যুৎ বিলের টাকা জমা দেন। কিন্তু পরবর্তীতে জানতে পারেন তার টাকা জমাই হয়নি। বিল বকেয়া থাকায় লাইন কেটে দেয়া হয়।ডাচ্-বাংলা ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং পাওয়ার পর এজেন্ট মো: শাহিন আলম চড়া সুদে পান ব্যবসায়ীদের ব্যাংকের নামে টাকা দিয়ে ১ লাখ টাকায় ২ হাজার টাকা প্রতিদিন সুদ নিতেন। দাদন ব্যবসা করে তিনি এখন কোটি টাকার মালিক। উপজেলার বিশিষ্ট এক পান ব্যবসায়ী ও তার ছেলের থেকে তিনি সুদের টাকা তোলার জন্য আদালতে ৮৬ লাখ টাকা মামলা করেছেন। তার কারণে এলাকাছাড়া অনেক ব্যবসায়ী। সর্বশেষ ভিক্ষুকের টাকাসহ প্রায় ৫০ লাখ টাকা বিভিন্ন গ্রাহকের হিসাবে জমা না করে তিনি মেরে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন গ্রাহকরা। কোথায় যাবে কার কাছে পাবে সুবিচার দিশেহারা হয়ে টাকার জন্য বিপাকে পড়েছেন গ্রাহকরা। দ্রুত টাকা ফেরতসহ প্রতারক শাহিন ও তার ম্যানেজার খোরশেদ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি।
মোহনপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সেলিম বাদশাহ বলেন, মৌগাছি বাজারে ডাচ্ বাংলা এজেন্ট শাখায় প্রতারিত গ্রাহকদের জড়ো হওয়ার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শাখাটি তালাবদ্ধ পায়। তবে মালিক পক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি। এবিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।