ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ২রা মে ২০২৪, ১৯শে বৈশাখ ১৪৩১


শিবনদের বুক চিরে সবুজ ক্ষেত


২০ মার্চ ২০২৩ ০১:১৩

ছবি সংগৃহীত

রাজশাহীর মোহনপুর-তানোর উপজেলার সীমান্ত ঘেঁসে বয়ে চলা একমাত্র শীবনদী। নদীটি বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা নওগাঁ এবং রাজশাহী জেলার একটি নদী।

নদীটির দৈর্ঘ্য ৭১ কিলোমিটার, গড়প্রস্থ ৩৭ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক শিবনদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর ১০৬। নদীটির উৎস আত্রাই নদী হতে আর মোহনা বারনই নদীর। বিলুপ্তপ্রায় এই নৌপথ দিয়ে এক সময় তানোর, মোহনপুর, মান্দা, নিয়ামতপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের শহর-বন্দরে বাণিজ্যিক কাজে যাতায়াত করার একমাত্র অবলম্বন ছিলেন এই বারনই-শীব নদীর নৌপথ। কালের পরিক্রমায় আজ সেই নদীর ছল ছল যৌবনে পড়েছে ভাটা। বেশি ভাগ অংশ ভরাট এবং দখল করে সেখানে চাষাবাদ হচ্ছে। ফলে নদী হারিয়েছে তার নিজস্ব রুপ।

শিব নদের ওপর দিয়ে সারি সারি পাল তোলা নৌকা ও লঞ্চসহ বিভিন্ন নৌযান চলাচল করত। সেই সময়ের প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা নৌঘাটগুলো এখন বিপন্ন। পানিশূন্যতায় সবগুলো নৌঘাট বন্ধ ও নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। সে দিনের যৌবন ভরা শীবনদীর বুকে দেখা মেলেনা আর সারি সারি পালতোলা বড় বড় নৌকা ও লঞ্চ। সময়ের বিবর্তনে শীবনদ হারিয়েছে তার যৌবন। ভরাট হওয়া শীবনদীর বুকে কৃষকরা বোরো ধান চাষ করছে। ফলে বর্তমানে নদীর বুকে সবুজের সমাহার দেখা মিলছে।

মোহনপুর উপজেলার মেলান্দি গ্রামের মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সভাপতি শুকুমার হালদার জানান, বর্তমান প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা শিব নদের বর্তমান চেহারা দেখে ভাবতেই পারবে না যে, এক সময় এই শিব নদের ওপর দিয়ে পাল তোলা নৌকা ও লঞ্চসহ বিভিন্ন নৌযান চলাচল ছিল। ধীরে ধীরে নদী ভরা হওয়ার কারনে নৌঘাটগুলো বন্ধ ও নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। তাই নেই আগের মত নদী পথে মানুষের বিচরন। তিনি আরো বলেন, নদী ভরাটের ফলে স্থায়ী মৎস্যজীবীরা এখন তাদের নৌকা ভাসিয়ে আগের মত মাছ ধরতে পারে না। যার জন্য মৎস্যজীবীদের বাপ-দাদার আদি পেশা ছেড়ে বাধ্য হয়ে জীবিকার সন্ধানে এ পেশা পরিবর্তন করছে অনেকে।

মোহনপুর সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগরে অধ্যাপক হাফিজুর রহমান বলেন, এক সময় এই অঞ্চলের মানুষের জেলা শহরে যাতায়াতের একমাত্র উপায় ছিল নৌপথ। সারা বছর পাল তোলা নৌকায় কিংবা লঞ্চে খুব সহজেই শিব নদের ওপর দিয়ে নওহাটা ব্রীজঘাটে পৌঁছানো যেত। কিন্তু নদী ভরাট হওয়ায় পানি সংকটে নৌ যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। নদী সংস্কার করা করে সেই পূর্বের ন্যায় পরিবেশ ফেরানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট দাবী জানান।

তানোর শিব নদ রক্ষা কমিটির সভাপতি কৃষক জাইদুর ইসলাম বলেন, শিব নদ এক সময় খরস্রোতা নদী ছিল। আমরা নৌকায় যাতায়াত করতাম। শালুক, পদ্মসহ নানা প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ যেমন ছিল তেমন ছিল বিভিন্ন প্রজাতের দেশীয় মাছ। বর্তমানে নদের নাব্য নেই। ফলে পানিও থাকে না। জেগে ওঠা নদের বুকে হচ্ছে বোরো ধান চাষ। আর আগের দিনের সেই বাটক্যা, নয়না, দাঁড়ি, কাঁটাপাতাশি, গজাড় মাছও এখন দেখা যায় না। শিব নদটি খনন খুবই প্রয়োজন।
বিলকুমারী সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক রেজাউল ইসলাম বলেন, ৭৬-এর পরে নদটি আর খনন করা হয়নি। তাই দিন দিন নদটি ভরাট হচ্ছে। এখন নদের বুক জুড়ে চাষ হচ্ছে ধান। আমরা নদটি খননের জন্য মানববন্ধনসহ স্থানীয় প্রশাসনকে লিখিত আবেদন সংশ্লিষ্ট বিভাগে করেছিলাম। বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) নদটি খননের জন্য একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলেন এবং নদের পাশে একটি ইকো পার্ক নির্মাণের জন্য পরিদর্শক দলও নদ পরিদর্শন করেছিলেন কিন্তু এখনো তার কোন সুফল দেখতে পাচ্ছি না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবিহা ফাতেমাতুজ্-জোহরা বলেন, শিব নদের বুক জুড়ে সবুজের অপরূপ সৌন্দর্য দেখে মন ভরে যায়। এই নদের বুক জুড়ে উৎপাদিত ফসল জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে। আর শিব নদ খননের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।