ঢাকা রবিবার, ১৯শে মে ২০২৪, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


নিজের খারাপ সময়েও বন্ধুর পাশে সাব্বির


৮ জানুয়ারী ২০২০ ০৫:০৪

জাতীয় দলের হয়ে বেশ খারাপ সময় পার করছেন এক সময়ের মারকুটে ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমান। নিজে খারাপ সময় পার করলেও বিপদে বন্ধুর পরিচয় দিয়েছেন দলের সাত নম্বর এই ব্যাটসম্যান। নিজের কাছের বন্ধুর মেয়ে গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় তার জন্য আর্থিক সাহায্য চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন সাব্বির। বন্ধু রিজভানের মেয়ে সায়রার বয়স ১৫ দিন। তার হার্টে ছিদ্র রয়েছে, যা বাড়তে বাড়তে ৭ মি.মি. গিয়ে ঠেকেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে। সঙ্গে বাড়ছে হাসপাতালের বিল। সাব্বিরের দেয়া স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো:

“আজ সায়রার(আজ নাম রাখলাম) ১৫ দিন বয়স। ওর নিঃশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। সিপ আপ মেশিনে নিতে চায় ডাক্তার আমি না করছি মানে মারা যাওয়াটাকে আর তড়ান্বিত করলাম। নিষ্ঠুর বাবা আমি। হতে হল নিষ্ঠুর। মসজিদে গিয়ে নামায পরে আল্লাহকে বললাম সে যেন তাড়াতাড়ি মেয়েটাকে নিয়ে যায় কারণ ওর তীব্র কষ্ট হচ্ছে। কেনুলার করতে করতে আর শিরাই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ছোট বাচ্চা তো আমি কাছে গেলে চোখ দিয়ে বলে বাবা আমাকে ওরা অনেক ব্যাথা দেয় তুমি কিছু কর তো। আমি বারবার এত নিতে পারছি না। কানটা আর মুখটা নাকি আমার মত আর চোখটা ওর মার মত হয়েছে। ওর রক্তে কোন এন্টিবায়োটিক কাজ করছে না।তারপর ও বাঁচতে চাচ্ছে।কিন্তু সর্বোচ্চ চেষ্টা তো করলাম। আর কি করতে পারি! মাফ করে দিস মা আমাকে আর তোর মাকে। সায়রা এখনও জীবিত তবে কতক্ষণ থাকবে কেউ জানি না। সবাই আমার মেয়েটার জন্য দোয়া করবেন। ও ওর মাকে পুনরুজ্জীবিত করে দিল নিজেকে উজার করে দিয়ে।”

গত ৩ রা জানুয়ারির পোস্ট এইটা। আমার না। আমার বন্ধু রিজভানের। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এইচ হলে আমার পাশের রুমেই থাকত সে। ভালো ছেলে। মানুষের বিপদে আপদে ঝাপিয়ে পড়ত। সারাক্ষনই হাসি মুখে থাকত। ওর স্ত্রী, সেও আমাদের ব্যাচের। আমাদের বান্ধবী। দীর্ঘদিন বেকার থেকে কয়েকদিন আগেই রিজভান একটা ছোটখাট চাকুরী পেয়েছে। সংসার ভালোই চলছিলো। কয়েকদিন আগেই বললো, বাচ্চা হবে জানুয়ারীতে। কম্পলিকেশন এর জন্য বাবুটাকে একমাস আগেই আসতে হলো। সে এসেছে আরো কম্পলিকেশন নিয়ে! হার্টের ফুটাটা বাড়তে বাড়তে ৭ মিমি গিয়ে ঠেকেছে। প্রতিদিন ই বাড়ছে। সাথে বাড়ছে এনাম মেডিক্যাল এ বিল! বাবুকে বের করে শিশু হাসপাতালে নিতে হবে। ডাক্তাররা রেফার্ড করেছে সেখানে। কিন্তু বের হওয়ার উপায় নেই! কয়েককালের জমানো আড়াই লাখ টাকা রিজভানের শেষ। লাগবে আরো টাকা! এনাম থেকে বের করতে, শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা করত। আট-দশ লাখ টাকা তো লাগবেই। আমরা দিচ্ছি, যে যেভাবে পাড়ি সাহায্য করছি! পুষাতে পারছি না। আমরা অধিকাংশই এখনো বেকার৷ অনেক বার অনেকের জন্য নেমেছি রাস্তাতে। আরেক বার নামছি আমরাই। সাহায্য প্রার্থী আপনাদের সবার। তাই ফেসবুকের মাধ্যমে সবার কাছে হাত পাতলাম! আপনার ১০ টি টাকাও হয়ত ১৮ দিনের সায়রার জন্য বহু মুল্যবান হতে পারে। পৃথিবীটা তো আমরা রোজ দেখছি। সায়রাও একটু দেখুক।

নতুনসময়/আইকে