ঢাকা শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৮ই বৈশাখ ১৪৩১


সর্বকালের সেরা কে, পেলে নাকি ম্যারাডোনা?


২৩ আগস্ট ২০১৯ ০১:৫৩

ফাইল ফটো

ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলেকে বলা হয় কিং অফ ফুটবল আর আর্জেন্টিনাইন কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে তার ভক্তরা ডাকে ফুটবল গড বলে। নিজ নিজ সময়ে পেলে এবং ম্যারাডোনা ছিলেন সেরা। তবে সর্বকালের সেরা কে সেই প্রশ্ন এলেই তেতে উঠেন দুজনের সঙ্গে পুরা বিশ্ব। পেলে কিছু বললেই করা ভাষায় প্রতিক্রিয়া দেখান ম্যারাডোনা আবার ম্যারাডোনার জবাবে গা জ্বলানো কথা বলেন পেলে।

বয়স ১৮ হওয়ার আগেই বিশ্বকাপে অভিষেক হয় পেলের। আর বাকিটা ইতিহাস। পেলে ১৯৫৮ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল ও ফাইনাল ম্যাচের জয়ের নায়ক বনে যান।

সেমিফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে করেন হ্যাট্রিক আর ফাইনালে সুইডেনের বিপক্ষে দুই গোল। ১৯৬২ বিশ্বকাপে দ্বিতীয় ম্যাচেই চোট পান পেলে কিন্তু বিশ্বকাপ ধরে রাখে ব্রাজিল। ১৯৬৬ বিশ্বকাপে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের জঘন্য ফাউলের শিকার হয়ে বেশি কিছু করতে পারেন নি কালো মানিক খ্যাত পেলে। আবার ১৯৭০ বিশ্বকাপে অসাধারণ পেলেকে পায় সেলেসাওরা। সেবার নিজে চার গোল করে অবদান রাখেন ব্রাজিলের বেশিরভাগ গোলেও।

পেলের জন্মের ২০ বছর পর ১৯৬০ সালে পৃথিবীতে আসেন দিয়াগো আর্মান্দো ম্যারাডোনা ফ্রাঙ্কো। আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে ডাক পান ১৬ বছর বয়সে। কিন্তু ঘরের মাঠে ১৯৭৮ বিশ্বকাপে ১৭ বয়সী ম্যারাডোনাকে দলে না রেখে সমালোচিত হন সে সময়ের কোচ। ১৯৮২ বিশ্বকাপ অভিষেকে নিজের নামের প্রতি তেমন সুবিচার করতে পারেন নি ম্যারাডোনা। তবে মেক্সিকোতে ১৯৮৬ বিশ্বকাপে অন্য এক ম্যারাডোনাকে পায় আর্জেন্টিনা। তার একক নৈপুণ্যে মাঝারি মানের দলকে চ্যাম্পিয়ন করান ম্যারাডোনা। রূপকথার মতো এক বিশ্বকাপ কাটান আর্জেন্টাইন এই অধিনায়ক। সেবার আর্জেন্টিনা দলের করা ১৪টি গোলের ১০টি গোলই ছিল প্লে-মেকার ম্যারাডোনার অবদান। নিজে করেছেন পাঁচ গোল আর সতীত্বের দিয়ে করিয়েছেন আরও পাঁচ গোল। সেই আসরে সেরা খেলোয়াড় হন ম্যারাডোনা।

কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যারাডোনার করা দুটি গোল হয়ে আছে চিরকালের আলোচনার উৎস। হ্যান্ড অফ গড গোলের পর নিজের অর্ধ থেকে রাইট উইং ধরে চিতার গতিতে পাঁচ ইংলিশ খেলোয়াড়কে কাটিয়ে দ্বিতীয় গোলটি করেছিলেন ফুটবল ঈশ্বর। যেটি পেয়েছে শতাব্দীর সেরা স্বীকৃতি। পরের আসরেও আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।

জাতীয় দলের অর্জনের দিকে তাকালে ম্যারাডোনার চেয়েও অবশ্য পেলের গোল সংখ্যা ঈর্ষণীয়। চারটি বিশ্বকাপে ১৪ ম্যাচ খেলে ১২ টি গোল করেছেন পেলে। তিনি হয়ে আছেন তিনটি বিশ্বকাপ জেতা একমাত্র ফুটবলার। সবচেয়ে কম বয়সী বিশ্বকাপ খেলা গোল ও হ্যাটট্রিক করা, ফাইনালে গোল করা এবং বিশ্বকাপ জেতার রেকর্ড পেলের দখলে। ১৩৬৩ পেশাদার ম্যাচে তিনি গোল করছেন ১২৮১টি। আর পেলের হ্যাটট্রিক ৯২টি। ব্রাজিলের জার্সিতে ৯২ ম্যাচে করছেন ৭৭ গোল।

ম্যারাডোনার বেশিরভাগ সময় জাতীয় দলে খেলেছে প্লে-মেকার এর ভূমিকায়। আর্জেন্টাইন জার্সিতে ৯১ ম্যাচ খেলে ৩৪ গোল করেছেন ম্যারাডোনা। বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলেছেন ২১টি। গোল ও অ্যাসিস্ট করেছেন ৮টি করে। তিন বিশ্বকাপে অধিনায়ক হিসেবে খেলেছেন ১৬টি ম্যাচ যে রেকর্ড আর কারও নেই। ঘটনাকে আটকানোর উপায় ছিল একটাই তাকে থামিয়ে দেওয়া। ১৯৮২ বিশ্বকাপে ইতালীর খেলোয়াড়রা ম্যারাডোনাকে ফাউল করে ২৩ বার আর ৯০ বিশ্বকাপে ৫০ বার ফাউলের শিকার হয় এই ফুটবিল ইশ্বর।

ম্যারাডোনা ও পেলের কীর্তির পর শুরু হয় সর্বকালের সেরা কে সেই বিতর্ক।

পেলেকে কি ছাড়িয়ে গেছেন ম্যারাডোনা? দুই পা আর মাথা ব্যবহার করে ফুটবল নিয়ে যা ইচ্ছা তাই করার ক্ষমতা ছিল পেলের। খেলোয়ারি দক্ষতা ও চিন্তায় পেলে ছিলেন যোজন যোজন এগিয়ে। বর্তমানে আধুনিক ফুটবলাররা মাঠে যে কারুকাজ দেখান সেসব ৬০ এর দশকে করে দেখিয়েছেন ব্রাজিলিয়ানদের প্রিয় কালো মানিক।

তাই পেলে-ম্যারাডোনার বিতর্ক থামাতে ২০০০ সালে ইন্টারনেট ভোটাভুটির আয়োজন করে ফিফা। সেখানে ভোট দেন উন্নত বিশ্বের ইন্টারনেট সুবিধাভোগী মানুষেরা। ওই জরিপে বিশাল ব্যাবধানে পেলেকে পিছনে ফেলেন ম্যারাডোনা। তবে সেই ইন্টারনেট ভোটাভুটি ছাড়াও আরও একটি ভোট হয়। বর্তমানে যেভাবে বর্ষসেরা নির্ধারণ করা হয় সেভাবে ২০০০ সালেও শতাব্দীর সেরা ফুটবলার বেছে নিতে সাংবাদিক ও কোচদের ভোট নিয়েছিল ফিফা। আর সেই ভোটে ম্যারাডোনাকে বড় ব্যাবধানে পিছনে ফেলেন পেলে। যে কারণে ম্যারাডোনার সঙ্গে পেলেকেও যৌথ ভাবে প্লেয়ার অফ দ্যা সেঞ্চুরি ঘোষণা করে ফিফা। ফলে সর্বকালের সেরা ফুটবলার প্রসঙ্গটি এখন পর্যন্ত অমীমাংসিত।