ঢাকা শুক্রবার, ২রা মে ২০২৫, ২০শে বৈশাখ ১৪৩২


সংকট কাটাতে ভোটে যাবে বিএনপি


১৩ অক্টোবর ২০১৮ ২১:৪৯

সম্প্রতি রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে বিএনপি। গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে দলটির ভিতরে-বাহিরে চলছে তোলপাড়।সিনিয়র অনেক নেতার মধ্যে রয়েছে দ্বিধাদ্বন্দ্ব। দলটির আগামীর রাজনীতি নিয়েও চিন্তিত হয়ে পড়েছে কর্মী-সমর্থকদের বড় অংশ।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় প্রায় নেতৃীত্বশূণ্য হয়ে পড়েছে দলটি। অন্যদিকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত। এ অবস্থার উত্তরণে বিএনপি নীতিনির্ধারকরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে। দলের সংকট কাটাতে ভোটে যেতে চাই বিএনপি। এর মধ্যে কারান্তরীণ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানও ভোটের পক্ষে।

জানা গেছে, আসনভিত্তিক প্রার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়া চলছে দলের ভিতরে। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতৃীত্বে প্রার্থীদের খসড়া তালিকা তৈরি করে পাঠানো হচ্ছে লন্ডনে।সেখান থেকে প্রায় শতাধিক আসনে চূড়ান্ত হয়েছে প্রার্থী।

ড. কামাল হোসেনকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে জোট ও ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে আসন চূড়ান্ত করতে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ দলের বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা সমঝোতা বৈঠকগুলোতে মিলিত হচ্ছেন।

একই সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছেন আ স ম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদসহ ঐক্যের সঙ্গে জড়িত নেতাদের সঙ্গে। বিকল্প ধারার সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে আলাদা করে। তবে মাহী বি. চৌধুরীকে নিয়ে বিএনপির ভিতরে বিশেষ সতর্কতা রয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে আলাদা করে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে কর্নেল অলি আহমদ (অব.), রেদোয়ান আহমেদসহ অন্য নেতাদের সঙ্গেও। কোনো রকম সাড়া না পেলেও বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গেও তারা যোগাযোগ রাখছেন। বিএনপি চায় সবাইকে নিয়ে তাদের অবস্থান সংহত করে ভোটের দিকে এগিয়ে যেতে। নেতা-কর্মীদের মনোবল ফিরিয়ে আনতে।

জামায়াতকে আলাদাভাবে ছাড় দেওয়া হতে পারে। তবে দৃশ্যমান ঐক্যে জামায়াতের সঙ্গে দেখাবে না বিএনপি।

বিএনপির শীর্ষ নেতারা মনে করেন, বর্তমান বাস্তবতায় ভোটের কোনো বিকল্প নেই। এতদিন যারা ভোটের বিপক্ষে ছিলেন তারাও এখন নির্বাচনে অংশ নিয়ে দলকে পুনরায় সংগঠিত করার পক্ষে। ভোট নিয়ে দলে অগোছালো অবস্থান থাকলেও এর বিকল্প নেতারা খুঁজে পাচ্ছেন না।

ফলে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ভিতরে ভিতরে জোরেশোরেই প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। ইতিমধ্যেই ৩০০ আসনের প্রার্থীর খসড়া প্রস্তুস করা হয়েছে। প্রতিটি আসনের বিপরীতে ২ বা ৩ স্তরের প্রার্থী ঠিক করার পর সেখান থেকে চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।

বিগত ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে যারা অংশ নিয়েছিলেন, তাদের মধ্য থেকে কমপক্ষে ১০০ প্রার্থীর মনোনয়ন অপরিবর্তিত থাকছে। দলের স্থায়ী কমিটি ও পার্লামেন্টারি বোর্ডের নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সূত্রগুলো জানায়, ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব থাকাকালে তারেক রহমান যেভাবে এলাকায় জরিপ, যাচাই-বাছাইসহ প্রার্থী নির্বাচন করেছিলেন, আগামী নির্বাচনের জন্যও তিনি দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে একই প্রক্রিয়ায় প্রার্থী বাছাই করছেন।

নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। একমাত্র নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব বলে বিএনপি বিশ্বাস করে। এ জন্য রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচনের প্রস্তুতি আমাদের সবসময়ই রয়েছে। সারা দেশে ৩০০ আসনের বিপরীতে আমাদের ৯০০-এরও বেশি যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন। বিএনপি অবশ্যই নির্বাচনে অংশ নেবে। তবে তার আগে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি প্রদানসহ নিরপেক্ষ পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তৈরি করতে হবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড।

দলের অপর নীতিনির্ধারক আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্যই বিএনপি আন্দোলন করছে। আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতিও রয়েছে। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে এবং সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ পরিবেশ সৃষ্টি করার পর এক দিনের ভিতরে নির্বাচন দিলেও সে নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে। আর জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করবে ইনশাআল্লাহ।

জানা গেছে, ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে চার দলীয় জোটের শরিকদের সর্বমোট ৫২টি আসনে ছাড় দিলেও এবার ২০ দলীয় জোটের শরিকসহ (জাতীয় ঐক্যের অন্তর্ভুক্ত) বাইরের দলগুলোর জন্য সব মিলিয়ে প্রায় ১০০ আসন খালি রাখা হচ্ছে।

গতকাল জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ও যুক্তফ্রন্টসহ পাঁচটি দলের নেতাদের সঙ্গে জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রবের উত্তরার বাসায় বৈঠক করেছেন বিএনপি নেতারা। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এতে অংশ নেন।

এসএমএন