ঢাকা শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ই আশ্বিন ১৪৩১


গণতন্ত্র ও গণমাধ্যম ধুঁকছে


২০ আগস্ট ২০১৯ ২১:৪৩

ফাইল ছবি

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা প্যারিসভিত্তিক সংগঠন “রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস” এর তথ্য অনুসারে- গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বৈশ্বিক সূচকে ১৮০ টি দেশের মধ্যে ২০১৭ সালেও বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৬, আর তা এসে ২০১৯ এ দাঁড়ায় ১৫০ তম । অথচ ২০০৯ সালেও মুক্ত গণমাধ্যম ইনডেক্সে বাংলাদেশ ছিল ১২১তম।

বিস্ময়কর হল- প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যেও বাংলাদেশের অবস্থান সবার নিচে। এমনকি অঘোষিত সেনাশাসনে থাকা মিয়ানমারের চেয়েও (১৩৯)। তালিকায় ভারতের অবস্থান ১৪১, পাকিস্তান ১৪৫, শ্রীলঙ্কা ১২৬, নেপাল ১১১ এবং আফগানিস্তান ১২১।

“গণতন্ত্র এবং গণমাধ্যম একে অপরের পরিপূরক। যে দেশে গণতন্ত্র যত স্ট্রং, সে দেশে গণমাধ্যম তত স্বাধীন। দুৰ্ভাগ্যজনক হলেও সত্য- বাংলাদেশে গণতন্ত্র শধুই নামেমাত্র। স্বাধীন সাংবাদিকতা ও সংবাদমাধ্যমের অস্তিত্ত্ব আজ চরম সংকটে।

ক্রমাগত পত্রিকা (আমার দেশ) - টিভি (দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি) বন্ধ, সাংবাদিক খুন-গ্রেফতার- হুমকি, চাপিয়ে দেয়া ডিজিটাল আইন, গণতন্ত্র হত্যা ও মানবাধিকার ধ্বংসসহ নানা কারনে সাংবাদিকরা আজ বিপন্ন।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রসহ মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হিসেবে, গত ১ বছরে ২০৫ সাংবাদিক নানাভাবে নির্যাতন, হামলা, হুমকি ও মামলার শিকার হয়েছেন। আর গত ২৫ বছরে অর্ধশত সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেও অধিকাংশেরই সুষ্ঠু বিচার হয়নি। এমনকি সাগর- রুনি হত্যাকাণ্ডের ৭ বছরে ৫৮ বার শুধু তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ পিছিয়েছে।

বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম অনেক দিন ধরেই প্রচন্ড চাপে। গণমাধ্যমগুলো নিজেরাই সেন্সরশিপ করতে বাধ্য হচ্ছে। সত্য সংবাদ প্রকাশ করলেই সরকারের রোষাণলে পড়তে হচ্ছে। বিভিন্ন নাটক সাজিয়ে স্বাধীন সাংবাদিকতার পথ রুদ্ধ করাসহ সত্য প্রকাশে বাধা দেয়া হচ্ছে। আর যারা প্রতিবাদ করছে তাদেরকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে (বুদ্ধিজীবী সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, সিনিয়র সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমানদের মতো অনেককেই)। হত্যা, খুন, গুম ও নির্যাতন করে সাংবাদিকদের আতংকগ্রস্থ রাখা হচ্ছে। মনে রাখতে হবে- জবাবদিহীতামূলক সরকার প্রতিষ্ঠা না হলে যেমন গণতান্ত্রিক অধিকার থাকবেনা, তেমনি থাকবেনা স্বাধীন সাংবাদিকতাও। গণতন্ত্র যেখানে দুর্বল, সেখানে স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের গলা টিপে ধরা হবে। আর স্বাধীন সাংবাদিকতা না থাকলে সংবাদমাধ্যমও টিকবেনা। অস্তিত্ত্ব সংকটে পডবে পুরো সাংবাদিক সমাজ। ফলে গণতন্ত্র রক্ষায় ভয়-ভীতির উর্ধ্বে উঠে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে সাংবাদিকদের অগ্রগণ্য সৈনিকের ভূমিকা পালন করতে হবে।


অন্যদিকে, পরিকল্পিতভাবে বাস্তবায়নাধীন নানা দু:শাসনে দেশের মানুষ আজ অতিষ্ঠ। বহু কষ্টাজিত গণতন্ত্রের গলা টিপে ধরে চালু করা হয়েছে রাতের আঁধারে ভোটের সংস্কৃতি। বড় দুঃখ হয় তাদের জন্য - যারা গত প্রায় ১০ বছর ধরে নতুন ভোটার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন - অথচ এখনও ভোট দিতে পারেননি।

শাসকগোষ্ঠীর পরিকল্পিত খুন-গুম, হত্যা, ধর্ষণ, সন্ত্রাস-নিযাতনে অতিষ্ঠ মানুষ। ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিচারহীনতা সবক্ষেত্রেই। নেই বাকস্বাধীনতা ও ভোটাধিকার। মৃত্যুমুখে ধুঁকছে বহুকস্টার্জিত গণতন্ত্র। বাংলাদেশের চলমান রাষ্ট্রব্যবস্থার সঙ্গে গণতন্ত্র শব্দটি বড়ই বেমানান হয়ে পড়েছে। রাষ্ট্রক্ষমতার অপব্যবহার করে পরিকল্পিতভাবে একের পর এক খুন-হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে যাচ্ছে। জনপ্রিয় সাংসদ ইলিয়াস, চৌধুরী আলমসহ অসংখ্য নেতা কর্মীকে গুম করেছে। শুধু বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধেই লক্ষাধিক মামলা দিয়ে দমন-পীড়ন, জুলুম- নির্যাতন চালাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিকলাঙ্গ করে নিজেদের স্বার্থে অপব্যবহার করছে। ভয়াবহ রূপ নেয়া বিচারহীনতার সংস্কৃতি দেশকে ক্রমেই ঝুঁকিপূণ করে তুলছে।

অথচ সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- “আইনের সুষ্ঠ ব্যবহার ও সঠিক আশ্রয় লাভ প্রত্যোক নাগরিকের অবিচ্ছেদ্দ্য অধিকার।”


লেখক: সাংবাদিক