ঢাকা শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নারীর অধিকারে ইসলাম


৩০ জুন ২০১৯ ০৭:৫৯

ফাইল ফটো

আজ গোটা বিশ্বে ব্যক্তি সমাজ ও সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে মানুষের প্রোয়োজনেরর মাত্রা ও ভিন্ন রুপ পাল্টাচ্ছে।মানব সমাজের নানারুপী প্রোয়োজন পূরণের নিমিত্তে অর্থনৈতিক চাহিদাও প্রোয়োজনের তুলনায় পূর্বাপেক্ষা অধিক মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে।আর এই প্রোয়োজন বা চাহিদা মেটাতে মানুষ তার নিতি নৈতিকতা হারাচ্ছে,এবং ধর্মের আইন কানুন নিয়ম নিতি লঙ্ঘন করতে তারা দ্বিধাবোধ করছেনা।যার কারনে সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রভাব পড়ছে নানা রকম অনাচার, আর ধর্মকে ধারন করছে তাদের কথার মধ্যেই যার কোন মিল নেই কাজে কর্মে। আর সমাজে এরুপ পরিবেশের কারণে ধর্মের বিধান তথা হুকুম লঙ্ঘনের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।যা ব্যক্তি জিবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্র ও আন্তজাতিক কর্মকান্ডের সর্বক্ষেত্রে বিদ্যমান।আর ধর্মীয় বিধান অমান্য কারার এমনিও একটি বিষয় হচ্ছে (ফারাজ) উত্তরাধিকার আইনে নারী-পুরুষের সমঅধিকার, যা ইসলামিক আইনের সাংঘর্ষিক।আর ইসলামে নারী পরিপূর্ণরুপে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র সত্তার অধিকারী।যার মধ্যে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডও অন্তরভুক্ত। অথচ আপনি যদি লক্ষ করেন তাহলে দেখবেন যে ইসলাম নারীকে অর্থ উপার্জন,অর্থ নিজে মালিকানাধীন রাখা সহ নিজস্ব ও বিভিন্ন দরকার মেটাতে অর্থ ব্যয়,দেনমহর লাভ এবং মাতা- পিতার পরিতক্ত সম্পদের (হক)বা অধিকারী হওয়ার অধিকার প্রদান করে ক্ষমতায়নে অগ্রাধিকার দিয়েছে।

এবার জেনে নিই ক্ষমতায়ন কি -? আমি বলবো ক্ষমতায়ন বলতে যে ক্ষমতার অধিকারী হয় তাকে ক্ষমতায়ন বলে,যার অর্থ হতে পারে শক্তি,ক্ষমতাশালী, বা ক্ষমতাবান।

আর এই ক্ষমতা নানা ভাবে হতে পারে যেমন-(ক) ব্যক্তিগত (খ) পারিবারিক (গ) সামাজিক (ঘ)অর্থনৈতিক (ঙ)রাষ্ট্রীয় ও (চ)আন্তজাতিক, এসব দিক থেকেও ক্ষমতাবান হওয়া যায়।

আমি আপনাদেরকে একটু ইসলামের দৃষ্টিতে বলতে চাচ্ছি,অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নারীর ব্যাপারে ইসলাম কি বলে?আমরা ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলে দেখতে পাই যে জাহেলী যুগে নারীদের কোন অর্থনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী করা হতোনা বা ছিলো না এমন নজির, এমন কি কন্যা তার বাবার সম্পদে উত্তরাধিকার,নিজের উপাজিত সম্পদ ব্যয় করা, বা অন্যের কাছ থেকে প্রাপ্ত হাদিয়া বা উপঢৌকন গ্রহণ ও তা ব্যবহার ইত্যাদির কোন কিছুতেই নারীর অধিকার বলতে কিছুই ছিল না।তারা ইচ্ছা করলে অর্থ উপাজন বা ব্যয় করার স্বাধীনতা ছিলনা।অথচ এই অবহেলিত নারীদেরকে সম্মানিত করার জন্য সর্বপ্রথম ইসলামই নারীদেরকে বাবার সম্পদে উত্তরাধিকার ও উপাজিত সম্পদ ভোগ দখল ও ব্যয়ের অধিকার দিয়েছে,এবং আর্থিক ভাবে নারীদেরকে করেছে স্বাবলম্বী ও ক্ষমতাশালী।নারীদের সম্পদ উত্তরাধীকার সুত্র মহান আল্লাহ নিজেই জানিয়ে দিয়েছেন।

সম্পদ উপার্জনের অধিকারে নারী-এ ক্ষেত্রে ইসলাম নারীদের দিয়েছে স্বতন্ত্র অধিকার।একজন পুরুষ যেমন স্বাধীনভাবে অর্থ সম্পদ উপার্জন ও ক্রয়- বিক্রয় করতে পারে,ঠিক তদ্রুপভাবে এতজন নারীও পারবে স্বাধীনভাবে আয় ও ব্যয় করতে।এ সম্পকে রাসুল (সঃ) এর একটি মুখের পবিত্র বানী, তিনি বলেন- তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমরা প্রত্যেকেই তার দায়িত্বের ব্যাপারে জিঙ্গাসিত হবে।সুতরাং অর্থ উপাজনের ক্ষেত্রে নারী পুরুষের যেমন স্বতন্ত্র অধিকার রয়েছে তেমনিভাবে উপাজনের ক্ষেত্রে রয়েছে হালাল বা হারামের স্বতন্ত্র দায়বদ্ধগত পার্থক্য।

অর্থ উপার্জনের জন্য নারী স্বাধীনভাবে যে কোন শরীয়ত সম্মত বা বৈধভাবে পেশা গ্রহন করতে পারেরে।রাসুল (সঃ) এর যুগেও নারীরা বিভিন্ন পেশা কাজ গ্রহন করে অর্থ আয় করতো।নারীরা ইসলামের বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন রকম পেশার মাধ্যমে পরিবার ও সমাজের উন্নয়নে সহায়তা করেছেন।যার নজির স্বরুপ দেখতে পাই,কৃষিকাজ,পারিশ্রমিকের বিনিময়ে দুধপান করানো,পশুচারণ,ব্যবসা- বাণিজ্য,শিল্প ও কারিগরী ছাড়াও করেছের বিভিন্ন কাজ।রাসুল (সঃ)এর এক সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ এর স্ত্রী ছিলেন একজন শিল্পও কারিগরী জ্ঞানের অধিকারী,আর এ দক্ষতা কাজে লাগিয়ে নিজের স্বামী ও সন্তানদের ব্যয় নির্বাহ করতেন।

সম্পদের মালিকানা লাভে নারী- নারী-পুরুষ তথা সকল শ্রেনীর মানুষই চায় জীবন-যাপন,পরিবারের ভরণ পোষণ,সন্তানের শিক্ষা,ভবিষতের নিররাপত্তা, রোগ-শোকে চিকিৎসা ইত্যাদির জন্য সম্পদের মালিক হতে।আর তাই ইসলাম পুরুষের পাশাপশি নারীদেরও সম্পদ উপার্জনের অধিকার প্রদানের সাথে সাথে সম্পদের মালিকানা লাভের স্বীকৃতি দিয়েছেন।আর শরিয়ত সম্মতভাবে বা বৈধ ভাবে যে কেউ যে কোন মাল বা সম্পদের মালিক হতে পারবে।আর নারী যে সম্পদ আয় করে বা উত্তরাধিকার আইনে পায় তা নিজ মালিকানায় রাখার পূর্ণ অধিকা আছে আর উক্ত সম্পদ নাররীর অনুমতি ছাড়া গ্রহণ করা বা জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়া পিতা বা স্বামী উভয়ের কারো জন্য ইসলাম সম্মত নয়।তবে সেক্ষেত্রে নারী যদি স্ব- ইচ্ছায় পররিবারের জন্য ব্যয় করে সেটা ভিন্ন বিষয়।

নারীদের সকল প্রকার ভরণ - পোষনের দায়িত্বে থাকছে তার বিবাহের পূর্বে বাবা,বিবাহের পর স্বামী এবং বৃদ্ধাবস্হায় সন্তান এই তিন শ্রেনীর অভিভাবকের তত্বাবধানে জীবন অতিবাহিত করে।এজন্য ইসলাম মাতা,স্ত্রী এবং কন্যা সন্তানের ভরণ- পোষনের প্রতি অধিকতর গুরুত্ব প্রদান করেছে।

একটি গুরুত্বপূণ বিষয় সেটি হচ্ছে শরিয়তের বিধান অনুযায়ী কোন কারনে যদি স্বামী- স্ত্রীর মাধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে সেক্ষেত্রে সন্তান তার মায়ের কাছেই থাকবে,কিন্তু সন্তানটি যদি বালেগ বা প্রাপ্তবয়স্ক হয় সেক্ষে উক্ত সনন্তানটি ইচ্ছামত মা অথবা বাবা যে কোন একজনের নিকট বসবাস করতে পারবেন।তবে সন্তান যেখানেই থাকুক তার সকল প্রকার ব্যায়ভার তার পিতাকেই বহন করতে হয়।আর যদি একাধিক সন্তান থেকে সেক্ষেত্রে আলাদা কথা।

আপনি যদি একটু লক্ষ্য করেন যে বিশ্বব্যাপি সকল ধর্ম সম্পর্কে সেখানে নারীরা উত্তরাধীকার সুত্রে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত ছিল।কেবলমাত্র ইসলামই নারীকে স্ব উপাজিত বা অন্য উপায়ে তাদের প্রাপ্ত সম্পদের অধিকার দিয়েছেন।এ বিষয়ে কুরআন ও হাদিসে তার প্রমান মিলবে।

একজন স্ত্রীর স্বামী মারা গেলে তার পরিতক্ত স্হাবর-অস্হাবর সমম্পত্তিতে উত্তরাধিকার হয়।কন্যা হিসেবেও তার পিতার মুত্যুর পরে সম্পত্তি পাচ্ছে,আর মোহরের মত এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তো থাকছেই বাধ্যতামুলক।প্রকৃত পক্ষে হিসেব করলে পাওয়া যাবে পুরুষের তুলনায় নারীরাই আর্থিকভাবে অধিক ক্ষমতাশালী বা লাভবান হচ্ছে।

পরিশেষে আমি বলবো যে বর্তমান ইসলামের সঠিক নিয়মনিতি অনুধাবন না করে আমরা আমাদের চিন্তাকে লালন করে স্বতন্ত্র অধিকার, মর্যাদা সংরক্ষণ এবং সর্বক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমান অধিকার দাবীদার নারী ও পুরুষকে পৃথক বা প্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলছি।অথচ ইসলাম নারী পুররুষকে প্রতিদ্বন্দ্বী চায়না বরং একে অপরের সহযোগী হিসেবে সৃষ্টি করেছেন।

মানবিয় মর্যাদার দিক থেকে নারী পুরুষকে কোন ভেদাভেদ করেনি ইসলাম।বরং মর্যাদার আসনে বসিয়েছেন বলেই ইসলাম নারীকে স্বাধীনভাবে সম্পদ আয় ও ব্যয়, মোহর,পিতা মাতার পরিতক্ত সম্পপত্তিতে উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছে।অতএব আমার মায়ের জাতি নারী সমাজকে ইসলাম যেমনিভাবে দিয়েছে অর্থনৈতিক অধিকার ঠিক তেমনিভাবে নারী সমাজকে দিয়েছে সম্মান ও মর্যাদার সংরক্ষিত আসন।

লেখক:
বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ লেখক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব।
ruhanibiu@gmail.com