ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ই এপ্রিল ২০২৪, ৪ঠা বৈশাখ ১৪৩১


মামলার শুনানিতে এসে আদালতপাড়ায় স্ত্রীকে কোপালো স্বামী


৫ আগস্ট ২০২২ ০৫:৩৬

স্বামী নুরুজ্জামান দেওয়ানের বিরুদ্ধে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করেছিলেন স্ত্রী রাহিমা খাতুন। ওই মামলার শুনানির দিন ধার্য ছিল বুধবার। শুনানিতে উপস্থিত হতে বাদী ও আসামি সকালে আদালতে আসেন। কিন্তু শুনানির আগেই স্ত্রীকে আদালতপাড়ায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন স্বামী নুরুজ্জামান।

বুধবার (৩ আগস্ট) পুরান ঢাকার সদরঘাটস্থ নিম্ন আদালতপাড়ায় এ ঘটে। এ ঘটনায় নুরুজ্জামান ও তার সহযোগী কামরুল ইসলামকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে সাধারণ জনতা। আর রাহিমা খাতুন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এদিকে, রাহিমা খাতুনকে আহত করার ঘটনায় তার বড় বোন মোসা. সারমিন আক্তার বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) নুরুজ্জামান ও কামরুলকে আসামি করে কোতয়ালী থানায় মামলা করেন।

বৃহস্পতিবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতয়ালী থানার সাব-ইন্সপেক্টর অনিল চন্দ্র রায় দুই আসামিকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। পরে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলামের আদালত তাদের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আসামিদের পক্ষে অ্যাডভোকেট আকতার হোসেন সোহেল রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, ‘ঘটনা দুঃখজনক। স্বামী-স্ত্রীর ব্যাপার।’ তখন বিচারক নুরুজ্জামানের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘একজন স্ত্রীকে কীভাবে স্বামী এমনভাবে মারতে পারে।’

তখন আকতার হোসেন সোহেল বলেন, ‘বিবাহ বলবৎ থাকা অবস্থায় স্ত্রী আরেকজনের সাথে সম্পর্কে থাকলে কার মাথা ঠিক থাকে। কারও মাথা ঠিক থাকার কথা না। বাচ্চা নিতে চাইলে স্ত্রী সেটাও নিতে চায় না। সে স্বাধীনভাবে ঘুরতে চায়। রাগের বশবর্তী হয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এখন মামলা হয়েছে। ভুলত্রুটি করেছে, প্রায়শ্চিত্ত করুক। প্রয়োজনে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক।’

শুনানি শেষে আদালত দুই আসামির এক দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন বলেন জানান তদন্ত কর্মকর্তা অনিল চন্দ্র রায়।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, নুরুজ্জামান ভিকটিম রাহিমা খাতুনকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ২০১৮ সালের মার্চে কক্সবাজার নিয়ে ধর্ষণ করেন। পরবর্তীকে রাহিমাকে বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়। আপস-মীমাংসার প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ৪ এপ্রিল তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে নুরুজ্জামান যৌতুকের জন্য রাহিমাকে যৌতুকের জন্য শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করে। গত বছর ১০ মার্চ রাহিমাকে মেরে রক্তাক্ত জখম করে নুরুজ্জামান। এ ঘটনায় রাহিমা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় যৌতুকের জন্য নির্যাতনের অভিযোগ এনে মামলা করেন। যা আদালতে বিচারাধীন।

বুধবার (৩ আগস্ট) মামলাটি শুনানির জন্য ধার্য ছিল। রাহিমা কোর্টে আসবেন জেনে সারমিন আক্তারও সকাল সোয়া ৯টার দিকে বাসা থেকে রওনা দেন। সাড়ে ১০টার দিকে অ্যাডভোকেট রুবেল মিয়া রাহিমার মোবাইল থেকে সারমিনকে ফোন করেন। তিনি বলেন, রাহিমাকে রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন। সারমিনকে দ্রুত সেখানে যেতে বলেন।

সারমিন সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, সকাল সোয়া ৯টার দিকে রাহিমা কোর্ট এলাকায় এসে তার আইনজীবীর চেম্বারে যাওয়ার পথে সাড়ে ৯টার দিকে কোতয়ালী থানাধীন ১৬/৩ কোর্ট হাউজ স্ট্রীট, মানিক স্টোরের সামনে নুরুজ্জামানের সাথে দেখা হয়। মামলা তুলে নিতে তাকে হুমকি-ধামকি দেন এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। রাহিমা এর প্রতিবাদ করলে নুরুজ্জামান তাকে ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে কিল-ঘুষি মারতে থাকে। সে উঠে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে কোমর থেকে দা বের করে রাহিমাকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে নুরুজ্জামান। রাহিমা মাটিতে লুটিয়ে পড়লে কামরুল হাতুড়ি দিয়ে তাকে এলোপাথাড়ি আঘাত করে আহত করে।