ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ই মে ২০২৪, ১লা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


শিশু সায়মা ধর্ষণ-হত্যার দায়ে হারুনের মৃত্যুদণ্ড


৯ মার্চ ২০২০ ১৭:৪৪

শিশু সায়মা ও খুনি হারুন


রাজধানীর ওয়ারীর বনগ্রামে ছয় বছরের শিশু সামিয়া আরফিন সায়মাকে ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে হারুন-অর-রশীদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার এক নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল।

ট্রাইব্যুনালের বিচারক কাজী আবদুল হান্নান সোমবার (৯ মার্চ) চাঞ্চল্যকর মামলাটির এ রায় দেন।

হারুন এ মামলার একমাত্র আসামি।

এর আগে বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) মামলাটিতে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) শেষ হয়। ওই দিন বিচারক কাজী আবদুল হান্নান রায় ৯ মার্চ রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেছিলেন।

রায়ে আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহত শিশু সায়মার মা সানজিদা আক্তার ও বাবা আব্দুস সালাম। তারা এই রায় দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান।

শিশু সায়মার মা সানজিদা আক্তার বলেন, ‌আমার মেয়েকে হত্যায় হারুনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়ায় আমি সন্তুষ্ট। সরকার যেন এ রায় দ্রুত বাস্তবায়ন করে।

সায়মার বাবা আব্দুস সালাম বলেন, আদালত হারুনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়ায় আমি খুশি। এই রায় যেন দ্রুত বাস্তবায়ন হয়, এটাই আমার সরকারের কাছে দাবি।

গত বছরের ৫ জুলাই সন্ধ্যার পর থেকে শিশু সায়মার খোঁজ পাচ্ছিল না তার পরিবার। আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ভবনটির নবনির্মিত নবম তলার উত্তর পাশের খালি ফ্ল্যাটের ভেতর সায়মাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান পরিবারের সদস্যরা। ফ্ল্যাটটির কিচেন রুমের সিন্‌কের নিচে গলায় শক্ত করে পাটের রশি দিয়ে প্যাঁচানো অবস্থায় তাকে পাওয়া যায়। পরে খবর পেয়ে রাত ৮টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সায়মার মরদেহ সিন্‌কের নিচ থেকে বের করে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ওই ভবনের ছয়তলায় পরিবারের সঙ্গে থাকত সায়মা। বাবা আব্দুস সালাম নবাবপুরের একজন ব্যবসায়ী। দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সবার ছোট সায়মা।

বাবা আব্দুস সালাম বলেন, ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সায়মা তার মাকে বলে, ‘আমি ওপরে পাশের ফ্ল্যাটে যাচ্ছি।’ এরপর থেকে নিখোঁজ হয় সায়মা। অনেক খোঁজাখুঁজির পর নবম তলায় খালি ফ্ল্যাটের ভেতর গলায় রশি দিয়ে বাঁধা ও মুখে রক্তাক্ত অবস্থায় মেয়েকে দেখতে পাই।

পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষে ঢামেক হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ বলেন, প্রাথমিকভাবে সায়মার শরীরে ধর্ষণের আলামত মিলেছে। ধর্ষণের পর তাকে গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। ময়নাতদন্তে তার যৌনাঙ্গে ক্ষতচিহ্ন, মুখে রক্ত ও আঘাতের চিহ্ন এবং ঠোঁটে কামড়ের দাগ দেখা যায়।

ঘটনার পরদিন গত বছরের ৬ জুলাই শিশুটির বাবা আবদুস সালাম বাদী হয়ে ওয়ারী থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি করেন। ঘটনার দু’দিন পর ৭ জুলাই মামলার একমাত্র আসামি হারুন আর রশিদকে তার বাড়ি কুমিল্লার তিতাস উপজেলার ডাবরডাঙ্গা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। পরদিন ৮ জুলাই ঢাকা মহানগর হাকিম সরাফুজ্জামান আনসারীর আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন হারুন। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠান আদালত।

তদন্ত শেষে গত বছরের গত বছরের ৫ নভেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হারুন অর রশিদকে আসামি করে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির ওয়ারী জোনাল টিমের পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. আরজুন।

পরে দ্রুত বিচারের স্বার্থে মামলাটি ঢাকার ১ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বদলি করা হয়। গত ২ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালের বিচারক কাজী আব্দুল হান্নান আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন। মামলায় ১৭ জন সাক্ষীর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ১৪ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন। অভিযোগ গঠনের ৬৬ দিনের মাথায় এই মামলার রায় ঘোষণা করা হলো।

এআর