ঢাকা বুধবার, ৮ই মে ২০২৪, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩১

কক্সবাজারে হামুনের আঘাত, নিহত ৩


২৫ অক্টোবর ২০২৩ ১০:৩৬

ছবি সংগৃহীত

ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ গতকাল মঙ্গলবার রাতে আঘাত হেনেছে কক্সবাজার উপকূলে। সন্ধ্যা ৭ টার পর মহেশখালী-কুতুবদিয়ার উপকূল দিয়ে স্থলভাগে উঠে আসতে শুরু করে ঘূর্ণিঝড়টি। এসময় প্রবল গতিতে ঝাড়ো হাওয়াসহ ভারী বর্ষণ শুরু হয়। যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে। টানা দুই ঘণ্টা পর দুর্বল হয়ে যায় ‘হামুন’।

রাত সাড়ে ১২ টায় কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয় ঘূর্ণিঝড়টি। মাঝরাতেও থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছিল। উপকূল অতিক্রম কালে কক্সবাজারে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে উড়ে গেছে গাছপালা ও বিধ্বস্ত হয়েছে কাঁচা ও আধা কাঁচা ঘরবাড়ি।

এসময়  কক্সবাজারে তিনজন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। স্থানীয় কাউন্সিলর ওসমান সরওয়ার টিপু সাংবাদিকদের কাছে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কাউন্সিলর ওসমান জানান, কক্সবাজার শহরে দেয়াল ধসে একজন ও মহেশখালী এবং চকরিয়ায় গাছচাপায় ২ জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে কক্সবাজার পৌরসভা ৭ নং ওয়ার্ডে দেয়াল ধসে আবদুল খালেক (৩৮) নিহত হন। অপরদিকে মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নের মুন্সির ডেইল গ্রামে গাছচাপায় হারাধন নামের একজনের মৃত্যু হয়। চকরিয়া উপজেলার বদরখালীতে আসকর আলী নামের আরেকজন মারা গেছেন।  

আবহাওয়া দফতর জানায়, ১২০ কিলোমিটার গতি নিয়ে ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রভাগ স্থলভাগ স্পর্শ করলেও দ্রুত কমে আসে গতি। রাত ১০ টায় আবহাওয়া দফতরের পরিচালক আজিজুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার যা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে উপকূলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় ‘হামুনে’ সৃষ্ট ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিতে জেলায় কাঁচা ঘরবাড়ি ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ আজ (বুধবার) দেওয়া সম্ভব হবে।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ ইমাম উদ্দিন জানিয়েছেন, রাত দশটার পর থেকে ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করে দুর্বল হয়ে যায়। তবে এর প্রভাবে কক্সবাজার উপকূলে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তিনি জানান, দুই ঘণ্টা স্থায়ী ঘূর্ণিঝড়টি গড়ে ১০০ কিলোমিটার তীব্র বেগে কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করেছে। এর সর্ব্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ১৪৮ কিলোমিটার।

আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (ক্রমিক নম্বর-১৩) আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি এবং এর অদুরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিন্মাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুটের বেশি উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছাসে প্লাবিত হয়। 

এদিকে সারাদেশে নৌচলাচল বন্ধ করা হয়েছে। ১০টি জেলার ১৫ লাখ বাসিন্দাকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ৬৫ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানান,ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ ঘুরে যাওয়ায় অনেক জেলার মানুষকে আর আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে হয়নি।

এদিকে ‘হামুনে’র প্রভাব দেশের অন্যান্য জেলায়ও বৃষ্টিপাতের খবর পাওয়া গেছে। আবহাওয়া দফতর বলছে প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। 

এদিকে বাংলাদেশ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ টিম জানায়, ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ বেশ শক্তি নিয়ে কক্সবাজারের মহেশখালি, কুতুবদিয়া ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকা অতিক্রম করেছে। এটি দ্রুত অনেক বেশি বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হয়ে যায়। আবহাওয়া বিশ্লেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানান, ঘুর্ণিঝড়টি পূর্ণিমার চারদিন পূর্বে আঘাত করায় গতি পায়নি। সাগরে ছিলো ভাটা।