ঢাকা বুধবার, ৮ই মে ২০২৪, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩১


ফেসবুক লাইভে এসে কথা বললেন ওমর সানী-মৌসুমী


২১ মার্চ ২০২০ ০০:০০

‘সবাইকে সালাম। লাইভে আসার উদ্দেশ্য হচ্ছে, আমরা একটা মহামারী গজবের মধ্যে অবস্থান করছি। দিন পার করছি। বর্তমানে বাসায় অবস্থান করছি আমি। আমার ছেলে ফারদিন ও মেয়ে ফাইজা আমাকে বাসা থেকে বেরুতে দিচ্ছে না। আমি মনে করি, শুধু প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে বলবেন তা না। আমি মনে করি, আমাদেরও দায়িত্ব আছে। তারকা হিসেবে আমাদেরও দায়বদ্ধতা আছে।

এরমধ্যেও আমি দেখতে পাচ্ছি অনেক মানুষ বিয়ের অনুষ্ঠান করছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের যে অবস্থান সেটা নিয়ে এখন একটু কথা বলতে চাই। ইতালির মত সুন্দর একটা রাষ্ট্র ধ্বংসলীলার মত অবস্থায় গিয়ে পৌছেছে। আরো অনেক উন্নত রাষ্ট্র প্রায় ধ্বংসবস্থার দিকে। আমি যে এলাকায় থাকি এখানে অনেক মানুষের সমাগম। আমাদের একটু সচেতন হতে হবে। মৃত্যু তো সবারই হবে। যেতে হবে আমাদের-এটাই সত্য। আমি যতটুকু স্টাডি করেছি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেটা বলেছে যে, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, বার বার হাত ধোয়া। এই রোগের একটা বাজে দিক হচ্ছে, যে আক্রান্ত হচ্ছে সে প্রথমে বুঝতে পারে না। পরে এটা খারাপের দিকে যায়। ছোট একটি দেশ আমাদের, প্রায় ২০ কোটি মানুষ। দেশের নাগরিক হিসেবে আমি মনে করি, আমাদের চরম ভুল হয়েছে যে বিমানবন্দর আরও আগে বন্ধ না করা। ইতালির অনেক প্রবাসী ওখানে অবস্থান করছেন। এই ধরনের কোনো মহামারী যদি আসে পৃথিবীতে তখন কি হবে? আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে নবীকরীম (সা:) তার সাহাবীদের এই প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন যে, ওই এলাকা থেকে বাইরে যাবা না। ঘরের মধ্যে আশ্রয়স্থল তৈরী করবা। পরিষ্কার থাকবা। ১৪০০ বছর আগের এই বাণীটি বর্তমান সময়ের বিজ্ঞানীরা বলছেন। এই পথেই হাঁটছেন। আমি সচেতন থাকার চেষ্টা করি। তারপরও অনেক সময় বেরুতে হয়। আর দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাচ্ছে।

হেক্সিসল বা মাস্ক কিনতে গিয়ে দেখলাম দাম বেড়ে গেছে। এয়ারপোর্ট তো মোটেও নিরাপদ না। বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের একটা জায়গায় রাখা উচিত। আমাদের নিজেদেরও দায়বদ্ধতাও আছে। একটু চিন্তা করে দেখবেন, আমাদের দেশে এই মহামারী হলে কে আমার বা আপনার জানাযা করবে, দাফন করবে ? আমরা একটু সচেতন হবো। যে যার জায়গা থেকে জনসমাগম থেকে দূরে থাকবো। জুম্মার নামাজ পড়ার জন্য আমি মসজিদে গিয়েছিলাম। অনেকে নিষেধ করেছে। তবে আল্লাহ আমাদের রক্ষা করবেন বলে মনে করি। তাই নামাজে যাওয়া। তবে শিল্পীদের অনুরোধ করবো, জনসমাগম এলাকায় যেন না যাই আমরা। সচেতন আমাদের সবার হতে হবে। আর সবার জন্য দোয়া রইলো।’-করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক ও সচেতনতা নিয়ে চিত্রনায়ক ওমর সানী আজ বিকেল ৩টায় লাইভে এসে এসব কথা বলেন। তার কথা শেষ হবার পর লাইভে আসেন চলচ্চিত্রের প্রিয়দর্শিনী মৌসমী।

তিনি লাইভে এসে বলেন, সকলকে সালাম। আশা করি সকলে নিরাপদ দূরত্বে আছেন। ভালো আছেন। জরুরী অবস্থা জারী করা হয়েছে। করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। আমি এদেশের নাগরিক হিসেবে মনে করি যে, আমি যতটুকু জানি ততটুকু সেগুলো সবাইকে জানানো প্রয়োজন। আমাদের মধ্যে অনেকে ফেসবুক ঘাঁটাঘাটি করি, সংবাদপত্র বা টিভিতে সংবাদ দেখি তারা অনেককিছু জানছি। কিন্তু সাধারণ মানুষরা দিনের পর দিন বাইরে খাটছে, আমাদের সংরক্ষণ করছে, দিন মজুর যারা তাদের এমন জানার জায়গাটা কম। কারণ তাদেরকে সার্ভিস দিতে হয়, এটাই তাদের জব। এভাবেই তাদের দিন চলে। যেমন, আমাদের বাসার কাজের বুয়াকে বল্লাম যে, তোমরা নিরাপদ দূরত্বে থাকো। কারণ এটাই বর্তমানে বলা হয়েছে। করোনা সম্পর্কে কিছুটা আমি বুঝালাম। এটা বলার পর আমার বুয়া জবাবে বললেন, কেউ তো আমাদের সাহায্য করছে না। কি করবো আমরা এখন। আমি বল্লাম যে, দেখো। তোমাদের ওখানে এসে অনেকে সাহায্য করবেন। তখন আবার সে বললো, না। আমাদের কেউ সাহায্য করছে না। তাহলে ঢাকাতেই যদি এই অবস্থা হয় তাহলে দূর-দূরান্তে অবশ্যই সকলে এই সমস্যা ফেইস করছে।

তারপরও তাকে ছুটি দিতে হলো। ওদেরও তো বাচ্চা আছে। জীবন তো। তাই সচেতনতা তৈরী করে দিলে তারাও ভালো থাকবে। করোনা ভাইরাস সম্পর্কে আমি বলবো যে, আপনাদের সচেতন করা আমার মূল উদ্দেশ্য না। আমি যেমন আমার আশপাশের মানুষজনকে কিংবা আমার হাজবেন্ড যেমন সকলকে এ বিষয়ে সচেতন করার চেষ্টা করছে। ঠিক তেমনি প্রত্যেকে প্রত্যেকের জন্য প্রত্যেকের পরিবারের জন্য এই বিষয়গুলো বুঝতে হবে, বোঝাতে হবে এবং জানাতে হবে। কিভাবে হচ্ছে, কোথায় হচ্ছে? কারা কিভাবে আক্রান্ত হচ্ছে-এগুলো জানাতে হবে। এর গুরুত্ব সম্পর্কে জানাতে হবে। নিরাপদ দূরত্বে থাকার পরও আমরা মানুষ মানুষকে দেখে ভয় পাচ্ছি। জানোয়ার দেখে ভয় পাচ্ছি না। করোনা ঘাপটি মেরে আছে বলেই আমি জানছি না যে, ৫-৬ দিন পর বা ১০ দিন পর উকির্ঁ দিয়ে বলবে না যে, আমাকে করোনা কোনোভাবে অ্যাটাক করেনি। জোর গলায় আমি বলতে পারছি না। ঠিক একইভাবে আমার হাজবেন্ড (ওমর সানী) আল্লাহর পথে দুুুপুরে নামাজ পড়তে গেলেন। দোয়া করতে গেলেন। আমি বলবো, এটা একটা সেক্রিফাইস। উনি সেক্রিফাইস করে এসেছেন। হতে পারে, উনাকেও আক্রান্ত করতেও পারে (আল্লাহ না করুক), সেটা হয়ত জানবেন ৬দিন পর। উনার হার্টের সমস্যা আছে, শ্বাস-কষ্টের সমস্যা আছে। তাই উনার বয়স অনুযায়ি এটা হতেও পারে। তারপরও উনি মানুষের জন্য এগিয়ে যাচ্ছেন। আমরাও হয়ত নিরাপদ থাকবো না। তারপরও মানুষ মানুষের জন্য দোয়া করতে হবে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হবে। পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন হতে হবে।

করোনা সম্পর্কে ছোট্র একটি বিষয় পড়ে শোনাতে চাই আপনাদের। সেটা হচ্ছে, ফুসফুসে পৌছানোর চারদিন আগে গলায় থাকে এই ভাইরাস। এ সময় কাশি শুরু করে, গলায় ব্যাথা শুরু করে। যদি এ সময় প্রচুর পানি পান করেন এবং গরম পানি ও ভিনেগার দিয়ে জড়ানো ভাইরাসটি নির্মূল করেন তাহলে খুব শিগগিরই সুস্থ হবেন। এই তথ্যটি ছড়িয়ে দিন। এই তথ্য দিয়ে কাউকে সংরক্ষণ করতে পারেন। এটা খুবই জরুরী। আরেকজনকেও সংরক্ষণ করতে হবে। তাহলে ফুসফুসে এটা পৌছানোর আগ পর্যন্ত আপনাকে নিজে থেকে আ্ইসোলেটেড হতে হবে। স্বাস্থ্যবার্তা থেকে আরও কিছু তথ্য পেয়েছি। যেমন, নিরারপদ দূরত্বে থাকা, হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা ও পশু- পাখিকে (পালিত) আলাদা করে রাখতে হবে। আমাদের বাাসতেও এমন পালিত পশু আছে। তাকেও আলাদা রেখেছি। অসুস্থ ব্যক্তিদের মানসিক সাপোর্ট দিতে হবে। ডাক্তার ও আইন শৃংখলা বাহিনীকে সহযোগিতা করা এবং সামর্থ্য অনুযায়ি নি¤œ আয়ের মানুষকে সাবান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে সাহায্য করার কথাও বলা হয়েছে। এসব বিষয় খুবই জরুরী। যেটা আমার কাজের বুয়া অভিযোগ করে গেলো। হয়ত আমি তাকে হেল্প করবো। কিন্তু সকলকে তো আমি এই ধরনের হেল্প করতে পারবো না। তাই সকলে মিলে এটা করতে হবে। তাহলে সরকার ও ডাক্তারদের জন্য এটা হেল্প হবে। এই থাকলো সবার প্রতি আমার অনুরোধ। আমি এ দেশের নাগরিক হিসেবে আমি চাইবো, সকলে ভালো থাকুক, সুস্থ থাকুক। আল্লাহ সবাইকে মাফ করুক। আল্লাহ হাফেজ।

নতুনসময়/আইকে