‘কল গার্ল’পরিচয়ে ছবি-নম্বরসহ অভিনেত্রীর পোস্টার

‘তৃতীয় ছাদ’ ছবিতে অভিনয় করে তিনি জাতীয় স্তরের পুরস্কার পেয়েছেন। করেছেন আরও অনেক ছবি। ‘বউ কথা কও’, ‘মহাপীঠ তারাপীঠ’, ‘সুবর্ণলতা’-সহ বেশ কিছু টিভি সিরিয়ালে অভিনয় করেছেন নাট্যকর্মী তথা টলিউডের অভিনেত্রী বৃষ্টি রায়। গত ২৪ অগস্ট থেকে আচমকাই তিনি নানা রকমের ফোন পেতে শুরু করেন। অশালীন কথা বার্তা শুনে প্রথমে চমকে যান। এর পরেই জানতে পারেন তাঁর বিরুদ্ধে বড় চক্রান্ত কাজ করছে।
বৃষ্টি রায়ের অভিযোগ, ‘কল গার্ল’ পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় তার ছবি, মোবাইল নম্বরসহ পোস্টার ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার প্রায় প্রতিটি ট্রেন এবং বেশ কিছু স্টেশনে দেখা যাচ্ছে ওই পোস্টার।
পোস্টারে বৃষ্টি রায়ের নাম ও ফোন নম্বর উল্লেখ করে লেখা হয়েছে, ‘আপনি কি কষ্টে আছেন? রাতে ঘুম আসে না? বউ দূরে থাকে? আর ভাবনা চিন্তা নয়, চলে আসুন আমাকে ফোন করে। সঙ্গে ইনকাম ১০ থেকে ২০ হাজার।’
বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই সোনারপুর থানায় এফআইআর দায়ের করেছেন অভিনেত্রী। এই ঘটনার পিছনে কে বা কারা রয়েছে, তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
ভারতের শীর্ষস্থানীয় একাধিক গণমাধ্যম জানিয়েছে, নাট্যজগতে যথেষ্ট পরিচিত মুখ বৃষ্টি। একাধিক টিভি সিরিয়ালেও অভিনয় করেছেন তিনি। সোহিনী সরকার এবং অনির্বাণ ভট্টাচার্যের সঙ্গে ‘মানভঞ্জন’ ছবিতেও অভিনয় করেছেন। কয়েক মাস আগে মুক্তি পেয়েছিল সেই ছবি।
বৃষ্টির অভিযোগ, গত এক মাস ধরে বিভিন্ন নম্বর থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ ফোন পাচ্ছেন তিনি। ফোনে তাকে অশালীন প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। আচমকা এই ধরনের ফোন পেয়ে প্রথমে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
ওই অভিনেত্রীর দাবি, প্রথমে তিনি কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না। দিন দশেক আগে স্টেশনগুলোতে ছড়িয়ে পড়া ওই পোস্টারের কথা জানতে পারেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে সোনারপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বৃষ্টি।
গত ২৮ আগস্ট সোনারপুর থানায় করা বৃষ্টির এফআইআরের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। তবে ফোন আসা এখনো বন্ধ হয়নি বলেই দাবি ওই অভিনেত্রীর। গতকাল সোমবার সকালেও তার কাছে অশালীন প্রস্তাবসহ ফোন এসেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
কে বা কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে তাকে হেনস্থা করতে পরিচিত কেউ এই ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহ বৃষ্টির। তিনি বলেন, ‘ওই পোস্টারে যে ছবিটা ব্যবহার করা হয়েছে, কিছুদিন আগে পর্যন্ত সেটি আমার হোয়্যাটসঅ্যাপ ডিপি ছিল। পরিচিত কেউ ছাড়া বাইরের কারও পক্ষে তার নাগাল পাওয়া তো সম্ভব নয়!’
এই ঘটনায় ভেঙে পড়া বৃষ্টি আরও বলেন, ‘গত সাত-আট বছর ধরে টলিউডে কাজ করছি। এই ঘটনা আমার ব্যক্তিগত জীবনে তো বটে, পেশাগত জীবনেও প্রভাব ফেলেছে। কীভাবে সব কিছু গুছিয়ে উঠব বুঝতে পারছি না। এই ঘটনা যেই ঘটিয়ে থাকুক না কেন, আমার কেরিয়ার নষ্ট করাই তার লক্ষ্য। ব্যক্তিগত জীবনের শান্তিও নষ্ট করতে চায় সে।’
তদন্ত কতদূর এগিয়েছে জানতে চাইলে সোনারপুর থানার এক কর্মকর্তা জানান, ‘ওই মহিলা যাতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন, তার জন্যই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এই ঘটনায় এক চিকিৎসকের যোগ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যেই একটি নামের তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
এর বছর তিনেক আগে ঠিক এমনই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গিয়েছিলেন বাংলা সিরিয়ালের আর এক জনপ্রিয় অভিনেত্রী মধুমিতা সরকার। তার ছবি বিকৃত করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছিল কে বা কারা। এমনকি তিনি দেহ ব্যবসায় জড়িত, সে কারণে তাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে—এমন খবরও প্রকাশ করে বেশ কিছু ওয়েবসাইট। সেই সময় রুখে দাঁড়িয়েছিলেন মধুমিতা এবং তার স্বামী সৌরভ চক্রবর্তী। লালবাজারে লিখিত অভিযোগও জানিয়েছিলেন ওই অভিনেত্রী।
নতুনসময়/আইকে