সাত বছরে দ্বিগুণ বিদেশি ঋণ, পরিশোধের উপায় কী

বড় অবকাঠামো নির্মাণ, বিদ্যুৎ প্রকল্প ও নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য বাংলাদেশ যে বিদেশি ঋণ নিচ্ছে তার পরিমাণ ১০ হাজার কোটি (১০০ বিলিয়ন) ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১২ লাখ কোটি টাকার বেশি। এসব ঋণের ৭৯ শতাংশ নিয়েছে সরকার এবং বাকি ২১ ভাগ ঋণ নিয়েছে বেসরকারি খাত। বেশিরভাগ ঋণ ১০-১৫ বছরেরর গ্রেস পিরিয়ড ধরে ৩০-৪০ বছরের মধ্যে পরিশোধ করার শর্তে নেয়া হয়েছে। বিদেশি এসব বেশিরভাগ ঋণের সুদহার হচ্ছ ১ শতাংশ কিংবা এরও চেয়ে কম। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির তথ্যমতে, দেশে এই মুহূর্তে মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ গড়ে দেড় লাখ টাকা।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের মোট জিডিপির তুলনায় বিদেশি ঋণের পরিমাণ ১৭ থেকে ২৩ শতাংশ, যা খুব বেশি চাপের নয়। তবে মূল চ্যালেঞ্জ অন্য জায়গায়। এগুলো হচ্ছ- অর্থ পাচার, রফতানি ও রেমিট্যান্স কমে যাওয়া এবং ডলারের বিপরীতে ঘন ঘন টাকার অবমূল্যায়ন। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দুর্নীতিরোধ করে অর্থপাচার নিয়ন্ত্রণ, রাজস্ব আয় বাড়ানো, রফতানি বাজার সম্প্রসারণ ও নতুন পণ্য উৎপাদন, দক্ষ জনশক্তি রফতানি, অপেক্ষাকৃত কম প্রয়োজনীয় প্রকল্প থেকে সরে আসা এবং দ্রুত লাভজনক হবে- এমন প্রকল্প গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। টাকার অংকে বৈদেশিক ঋণ প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়ে গেছে। ৮২ থেকে ১১৭ টাকায় দাঁড়িয়েছে ডলারের দাম।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে মূলত চীন, জাপান, ভারত, কোরিয়া এবং রাশিয়ার কাছ থেকেই ঋণ নিয়েছে বেশি। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ সাধারণত বিশ্ব ব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি) এবং বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। যেসব প্রকল্প নেয়া হয়েছে তা সময়মতো শেষ না করতে পারলে ঋণ আরো বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। গত ৭ বছরের মধ্যে দ্বিগুণ হয়ে গেছে বিদেশি ঋণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি ঋণের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুসারে, ১৫ বছর আগে ২০০৮ সাল শেষে ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। অর্থাৎ, গত ১৫ বছরে দেশের বিদেশি ঋণ বেড়েছে ৭৭ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৩৪২ শতাংশ।
এতে দেখা যায়, ২০২৩ সালের শেষ তিন মাসে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) দেশের বিদেশি ঋণ ৪ দশমিক শূন্য ৯ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে। এ সময়ে সরকারের বিদেশি ঋণ বেড়েছে ৪ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার। তবে সরকারের বাড়লেও বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ ৩৩ কোটি ডলার কমেছে। বিদেশি ঋণ হিসেবে যে অর্থ বাংলাদেশ নিয়েছে তার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ঋণ আছে। যেমন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য রাশিয়ার কাছ থেকে এবং পদ্মাসেতুতে রেল লাইন সংযোগ প্রকল্পের জন্য চীন থেকে বাণিজ্যিক চুক্তিতে শর্তযুক্ত ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্যমতে, বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় জাপান, চীন, রাশিয়া ও ভারতের কাছ থেকেই সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছে এবং নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংস্থার পাশাপাশি বাংলাদেশ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং বাজেট সহায়তার জন্য বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছে।
পাবলিক ও প্রাইভেট মিলিয়ে ২০১৭ সালের শেষে বাংলাদেশের সার্বিক মোট ঋণ ছিল ৫১ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকে এটি ১০০ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট ডাটা পাওয়া যায়। এ সময় পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের বৈদেশিক ঋণ ছিল ৫৫ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার। এই ঋণের অর্ধেকের বেশি ৫৭ ভাগ হলো বিশ্বব্যাংক ও এডিবির কাছ থেকে নেয়া আর দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ যেসব দেশ থেকে ঋণ করেছে তার মধ্যে জাপান, রাশিয়া, চীন ও ভারত- এ চারটি দেশই প্রধান। শুধু তাই নয়, দ্বিপক্ষীয় চুক্তির বেলায় বাংলাদেশ জাপান থেকেই সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছে। জাপানের ঋণে করা ঢাকার মেট্রোরেল এখন জনপ্রিয় বাহন এবং সরকার রাজস্ব ভালো পাচ্ছে। অন্যদিকে চীনের অর্থে করা কর্ণফুলী টানেল সেই অর্থে রাজস্ব আদায় করতে পারছে না। তবে এ প্রকল্প বহির্বিশ্বে দেশের সুনাম বাড়িয়েছে।
জানা গেছে, জাপানের কাছে বাংলাদেশের ঋণের পরিমাণ ৯ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার। এরপরই রাশিয়ার কাছে ৫ দশমিক ০৯ বিলিয়ন, চীনের কাছে ৪ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন এবং ভারতের কাছে ১ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলার ঋণী বাংলাদেশ। বর্তমানে এ ঋণ আরো অনেক বেশি। কারণ, ইআরডির তথ্যে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালে মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ ৫৬৩ কোটি ডলার ঋণ করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি এডিবি থেকে ১৪০ কোটি এবং বিশ্বব্যাংক থেকে ৯৬ কোটি ডলার নিয়েছে বাংলাদেশ। একই সময়ে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির আওতায় জাপান থেকে ১৩৫ কোটি, রাশিয়া থেকে ৮০ কোটি, চীন থেকে ৩৬ কোটি, ভারত থেকে ১৯ কোটি এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৫০ কোটি ডলার ঋণ নেয়া হয়েছে। কালুরঘাট রেলসেতু নির্মাণে সম্প্রতি কোরিয়ার সঙ্গে ৮৪ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করেছে ইআরডি।
এ প্রসঙ্গে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বলি আর রাস্তাঘাট মেট্রোরেল-এক্সপ্রেসওয়ে বলি সবই তো আমাদের বাইরে থেকে আনতে হচ্ছে। সেটা রাশিয়া, চীন, জাপান থেকে আনতে হচ্ছে। সেগুলো কিছু চলমান আছে। এগুলো ফেরত দেওয়ার পরিমাণটা আস্তে আস্তে বাড়বে। এ কারণে সরকারের আয় বাড়ানোর দিকে বেশি নজর দেওয়া প্রয়োজন। তবে এটাও মনে রাখতে হবে- ঋণ পরিশোধের বাড়তি চাপ যেন দেশের সাধারণ মানুষের ওপর না পড়ে।
ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান ও অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেছেন, জিডিপির অনুপাতে বিদেশি ঋণ এখনো কম। কিন্তু এ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকার অবকাশ নেই। মনে রাখতে হবে ঋণের ব্যবহার কেমন হচ্ছে এবং সেখান থেকে ডলারের অংকে উৎপাদনশীলতা আসছে কিনা। এটি নিশ্চিত করতে না পারলে সংকট তৈরি হবে।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেছেন, ঋণের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ালেও তা জিডিপির তুলনায় বেশি নয়। বরং আরো ঋণ নেয়ার সামর্থ্য বাংলাদেশের আছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জিডিপির তুলনায় ১০০ বিলিয়ন ডলার ঋণ বেশি না হলেও রাজস্ব আয়, রফতানি এবং রেমিট্যান্স না বাড়াতে পারলে এবং একই সঙ্গে বিদেশি ঋণের প্রবাহ কমিয়ে না আনতে পারলে এ ঋণই বিশাল চাপ তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে ডলার সংকটের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি এমনিতেই চাপের মধ্যে রয়েছে এবং এর মধ্যেই চলতি বছর থেকেই বড় বড় কিছু প্রকল্পের ঋণের কিস্তি শোধ করাও শুরু হয়েছে। পাশাপাশি রফতানি ও রেমিট্যান্স কাঙ্ক্ষিত আকারে বাড়ানো যাচ্ছে না। বিশেষ করে যখন মেগা প্রকল্পগুলোর মূল অর্থ পরিশোধ শুরু হবে তখন পরিস্থিতি কেমন হয় তা নিয়েই উদ্বিগ্ন অনেকে।
তথ্য অনুযায়ী, কিছু মেগা প্রকল্পের মূল অর্থ পরিশোধ শুরু হবে ২০২৬-২৭ অর্থবছরে এবং সেই বছরে ৫৩১ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করার কথা রয়েছে সরকারের। এরপর ২০২৭-২৮ অর্থবছরে ৫১৯ মিলিয়ন ডলার এবং ২০২৮-২৯ সালে ৫০৭ মিলিয়ন ডলার শোধ করার আশা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, ২০২২-২৩ বছর থেকেই যে বৈদেশিক ঋণ শোধ করা শুরু হয়েছে, সেগুলো মূলত ঋণের সুদ। শুধু তাই নয়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে বিদেশি ঋণ হিসেবে ৪ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার শোধের পরিকল্পনা আছে সরকারের। এরপর ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সুদসহ বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ দাঁড়াবে অন্তত সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারে। প্রকল্প সময়মত শেষ না করতে পারলে ঋণ আরো বাড়তে পারে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর জানান, বিদেশি ঋণ জিডিপির তুলনায় যেমনই হোক, দেখতে হবে সেটি রফতানির বিবেচনায় কেমন। তবে এভাবে দেখলে বিষয়টি হবে অস্বস্তির, কারণ সত্যিকার অর্থে রফতানির প্রবৃদ্ধি এখন কম। অথচ ঋণটা দ্রুত বাড়ছে। তবে তা সত্ত্বেও ১০০ বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ হয়ে গেছে বলে এটিকে ঠিক সংকট বলতে চান না তিনি। বরং তার ভাষ্য হলো- এটি অস্বস্তির। তিনি মনে করেন, বিদেশি ঋণ নিয়ে এ অস্বস্তি মোকাবিলা করতে হলে এখনই ঋণ প্রবাহ কমিয়ে আনতে হবে। বিশেষ করে বাণিজ্যিক শর্তে ঋণ নেয়া অর্থাৎ সাপ্লাইয়ার্স ক্রেডিট কমাতে হবে। রাজস্ব আয়, রফতানি ও রেমিট্যান্স বাড়াতে হবে। তবে বাস্তবতা হলো রফতানি নির্ভরশীল হয়ে আছে একটি পণ্যের ওপর, যা অত্যন্ত ঝুঁকির বিষয়। আবার রেমিট্যান্স প্রত্যাশিত হারে বাড়ছে না। অর্থ পাচারের কারণে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না। তবে আমরা যদি দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে পারতাম তাহলে প্রবৃদ্ধি অনেক বাড়ত। এছাড়া নতুন ঋণ দিয়ে পুরনো ঋণ পরিশোধ অর্থাৎ রিফাইনান্সিংও অন্য একটি বিকল্প হতে পারে। তবে যেসব ব্যয় এখনই দরকার নেই, সেগুলো থেকে সরকার বিরত থাকলে ঋণের চাপ কমবে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশের চাহিদা অনুযায়ী আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে না, উল্টো বিদেশে অর্থপাচার, উচ্চশিক্ষা ও বিদেশে চিকিৎসার জন্য বিলিয়ন ডলারের বাড়তি ব্যয় হচ্ছে, যেটা দুশ্চিন্তার বিষয়। বাংলাদেশে বাস্তবতা হলো বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব এবং ব্যয় বৃদ্ধি হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুৎ খাতে একটা বড় অংকের ঋণের বোঝা রয়েছে সরকারের কাঁধে। ডলারের রিজার্ভও ক্রমাগত কমছে। সেই সঙ্গে ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে ঋণ পরিশোধে ব্যয় আরো বেড়েছে টাকার অংকে।
অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর আরো বলেন, বাংলাদেশকে আয় বাড়াতেই হবে। জাতীয় আয়ের তুলনায় বাংলাদেশে ট্যাক্স জিডিপি অনুপাত মাত্র সাড়ে ৭ শতাংশ, এটা একটা সমস্যা।
তিনি বলেন, টাকার অংকে কিন্তু আমার বৈদেশিক ঋণ প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়ে গেছে। ৮২ থেকে ডলারের দাম ১১৭ টাকা হয়ে গেছে, অর্থাৎ আমাকে রাজস্ব ৪০ শতাংশ বেশি সংগ্রহ করতে হবে। এটা অনেক সমস্যা। তবে ম্যাক্রো (সামস্টিক অর্থনীতি) স্ট্যাবিলিটি রাখতেই হবে। রাজস্ব বাড়াতেই হবে। তা না হলে ম্যাক্রো স্ট্যাবিলিটি রাখা সম্ভব নয়।
সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী ও অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বর্তমান সভাপতি এম এ মান্নান বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই ঋণ নিয়ে আসছে এবং যথাসময়ে পরিশোধ করছে।
তিনি আরো বলেন, ঋণ পরিশোধের জন্য ঋণ নেয়া যেতে পারে। আজকে যে আমি আগের ঋণ পরিশোধের জন্য নতুন ঋণ নেব, এই ঋণটা পরিশোধ করব কবে? আরো ২০ বছর বা ৪০ বছর পর। এর মধ্যে কি আমাদের অর্থনীতি স্থবির থাকবে? এটা হবে না। তাহলে কমবেশি কাজ করে অর্থনীতি স্ফীত হবে, আয় বাড়বে। আমরা যদি গত ৫০ বছর ঋণ করে বেঁচে থাকতে পারি তাহলে কি আগামী ৫০ বছর পারবো না?
ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশের সক্ষমতা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে। বিদেশি ঋণ পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই মুহূর্তে বিশ্বের বৃহত্তম ঋণগ্রস্ত জাতি। সবচেয়ে বেশি ঋণ তাদের। এভাবে খুঁজলে আরো পাওয়া যাবে। আসলে এটা কোনো বিষয় নয়। বিষয় হলো মানুষের জীবনযাত্রা কেমন। এখানে মূল্যস্ফীতি আছে। কিন্তু আমাদের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এ ধরনের প্রবৃদ্ধির অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির চাপ থাকে।
এদিকে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঋণদানে শীর্ষ দেশ ও সংস্থার মধ্যে ছিল বিশ্বব্যাংক, জাপান, এডিবি ও চীন। সম্প্রতি চীনা ঋণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
বিদেশি অর্থায়নে বেশকিছু বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। এর মধ্যে রয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মাসেতুর রেল সংযোগ প্রকল্প, মেট্রোরেল (লাইন-৬), হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, কর্ণফুলী টানেল, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ ইত্যাদি।
বিশ্লেষকরা বলেন, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাদ দিতে হবে। দুর্নীতি কমাতে হবে। একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে ঋণ পরিশোধ করতে হয় বিদেশি মুদ্রায়। সেজন্য বিদেশি মুদ্রার আয়ও বাড়াতে হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে (২০২৩-২৪) মোট আসল ও সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে ৩২৮ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরে যার পরিমাণ হবে ৪০০ কোটি ডলার। এরপর এ পরিমাণ বাড়তেই থাকবে।