ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১


‘লজ্জার কথা বলতে বলতে ছোট হয়ে গেছি’ আত্নহত্যার আগে বর্ষার সুসাইড নোট


১৭ মে ২০১৯ ০৭:৫০

বর্ষা

‘প্রিয় বাবা মা আমি আমার লজ্জার কথা সবার কাছে বলতে বলতে ছোট হয়ে গেছি। আমি আর পারছিনা। তোমরা আমাকে ক্ষমা করো”। এমনই সুইসাইড নোট লিখে আত্নহত্যা করেছে রাজশাহীর মোহনপুরের বাকশিমইল হাইস্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী সুমাইয়া আক্তার বর্ষা। সে উপজেলা সদরের আব্দুল মান্নান চাদের মেয়ে। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার সময় ওই ছাত্রীর ওড়না প্যাচানো ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। রাজশাহীর পুলিশ সুপার শহিদুল্লাহসহ উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের ও পুলিশের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা সদরের আব্দুল মান্নান চাদের মেয়ে ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী সুমাইয়া আকতার বর্ষা (১৪) প্রায় সময় রাস্তায় যাওয়া-আসার সময় পাশের বাড়ির আনিস উদ্দিনের ছেলে মুকুল (১৮) তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় গত ২৩ এপ্রিল প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার সময় প্রতিবেশী শরিফুল ইসলামের মেয়ে বান্ধবী (ক্লাসমেট) সোনিয়ার সহযোগিতায় স্কুল ছাত্রী বর্ষাকে আসামি মুকুল হোসেন মুখে রুমাল চেপে অপহরণ করে। ওইদিন খানপুর বাগবাজার এলকার লোকজন অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন স্কুল ছাত্রীর পরিবারকে খরব দিলে তারা উদ্ধার করে প্রথমে মোহনপুর উপজেলার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করান। অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে হন্তান্তর করে। স্কুল ছাত্রীর বাবা বাদি হয়ে মোহনপুর থানায় গ্রেপ্তারকৃত দুইজনের নাম উল্লেখ করে ২/৩ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে অপহরণ মামলা দায়ের করেন। মোহনপুর থানা পুলিশ ২৭ এপ্রিল মোহনপুর বিলপাড়া গ্রামের আনিস উদ্দিনের ছেলে অপহণকারি মুকুল হোসেন (২০) ও বান্ধবী শরিফুল ইসলামের মেয়ে সোনিয়া খাতুনকে গ্রেপ্তার করে জেল-হাজতে প্রেরণ করে। ঘটনার পর থেকে আসামির পরিবারের লোকজন প্রতিনিয়ত স্কুল ছাত্রীসহ পরিবারের লোকজনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টার সময় স্কুল ছাত্রী পুকুরে গোসল করতে গেলে আসামি পক্ষের লোজকন আবারও অকথ্যভাষায় করলে স্কুল ছাত্রী বর্ষা বাড়ি ফিরে বিষয়টি পরিবারকে জানায়। বিকেল ৪ টার সময় খাতায় আত্মহত্যা নোট লিখে পাশের শয়নকক্ষে বাঁশের সাথে গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করে। খবর পেয়ে মোহনপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চারজনকে আটক করে লাশ থানায় নিয়ে আসে।

মোহনপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল হোসেন জানান, চারজনকে আটক করে স্কুল ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

এ ব্যপারে মেয়ের বাবা আব্দুল মান্নান বলেন, আমার মেয়ের সাথে অন্যায় আচরণ করা হয়েছে। এ নিয়ে বিচার শালিসও হয়েছে। এরপরও তারা আচরণ বদলায়নি। এ কারণেই আমার মেয়ে আত্নহত্যা করেছে।

তিনি বলেন, এটি আত্নহত্যা না হত্যা। তারা আমার মেয়েকে হত্যা করেছে। আমি এদের বিচার চাই।


এ ব্যাপারে মোহনপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল হোসেন বলেন, আমারা লাশ উদ্ধার করেছি। ময়না তদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানোর হচ্ছে। এছাড়াও আমাদের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ইতিমধ্যে আমরা ৪ জনকে আটকও করেছি। এ ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেবো।

নতুনসময়/আইকে