গাছের সব আম মাত্র ১৬ টাকা!

প্রতিটি গাছের আম বিক্রি হয়েছে মাত্র ১৬ টাকায়। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) এর এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে সাধারণ জনতা। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, পুষ্টির চাহিদা পূরণ এবং বন্য প্রাণীদের জন্য প্রাকৃতিক খাবার বিক্রি করে অনেকটা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ।
বিএমডিএ সূত্রে জানিয়েছেন, পুষ্টির চাহিদা পূরণ এবং পরিবেশের ভারসাম্য রায় ২০০৭-০৮ অর্থ বছরে নাটোর-বনপাড়া মহাসড়কের উভয় পাশে আমসহ অন্যান্য ফলদ গাছ রোপণ করে বিএমডিএ। মহাসড়কের পাশে হওয়ায় এসব গাছের ফল খেয়ে পথচারীদের যেমন পুষ্টির চাহিদা পূরণ হতো, তেমনি বন্যপ্রাণীদের জন্য তৈরী হতো প্রাকৃতিক খাবার। কিন্তু এ বছর প্রকল্পের ব্যয় সংকোচন ও আয় বৃদ্ধির অযুহাত দেখিয়ে ৯১২টি গাছের আম লিজ দেয় বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ। যেখানে প্রতি গাছের আমের মূল্য ধরা হয়েছে মাত্র ১৬ টাকা।
আরো জানায়, আম লিজ নিতে অন্তত তিন ঠিকাদার অংশগ্রহণ করেন। এরমধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা নাটোরের ঠিকাদার শামছুল ইসলামকে ৯১২টি গাছের আম ১৬ টাকা করে লিজ দেয় বিএমডিএ। এতে ৩ বছরের জন্য মোট ৪২ হাজার টাকায় লিজ নেন তিনি। সম্প্রতি এসব গাছের অপরিপক্ক এবং কাঁচা আম পাড়া শুরু করে ঠিকাদারের লোকজন। পরে বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয়দের মধ্যে।
কয়েকজন পথচারী বলেন, আমগাছ গুলো গত বছর থেকে আম ধরতে শুরু করেছে। আশ-পাশের লোকজন এসব গাছে ছায়ার নিচে বসে বিশ্রাম নেয়। আবার অনেক সময়পাকা আম গাছ থেকে লোকজন পেড়ে খায়। এছাড়াও পশু-পাখিরাও গাছের আমগুলো খায়। কিন্তু কাঁচা আম বিক্রি করে দেওয়ার কারণে হতাশ হয়েছি আমরা।
সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম নান্টু বলেন, সরকারের টেকসই উন্নয়নে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ব্যাপক গুরুত্ব দিলেও এমন সিদ্ধান্ত সাংঘর্ষিক। তাই ভবিষ্যতে এমন জনবিমুখ ও ক্ষতিকর সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।
বিএমডিএ'র সহকারী প্রকৌশলী মুহাম্মাদ আহসানুল করিম বলেন, সরকারের আয় বৃদ্ধির জন্য এটা করা হয়েছে। তবে ভবিষতে জীববৈচিত্র্য রার বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হবে।
সহকারি প্রকৌশলী মুহাম্মাদ আহসানুল করিম বলেন, গাছগুলোতে ভালো জাতের কোন আম নেই। তাছাড়া সবগুলো গাছে আম আসেনি। সবকিছু বিবেচনা করে আমাদের ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, লিজ গ্রহণের পর প্রতিটি গাছ থেকে অপরিপক্ক এবং কাঁচা আম পাড়ছেন ঠিকাদারের লোকজন। তারা জানান, প্রতিটি গাছ থেকে অন্তত ১৫ থেকে ২০ কেজি করে আম সংগ্রহ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত অন্তত ৩ হাজার ২০০ কেজি আম পাড়া হয়েছে গাছ থেকে। যার বাজার মূল্য ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে ঠিকাদার। তবে প্রতিটি গাছ ১৬ টাকায় বিক্রি হাস্যকর ব্যাপার বলে মন্তব্য করেন আম সংগ্রহকারীরা।
মিন্টু নামের এক শ্রমিক বলেন, সর্বনিম্ন একটি গাছ থেকে ৫ থেকে ৬ কেজি করে আম পাড়া হচ্ছে। ঠিকাদার এই আম বিক্রি করছে ১৫ টাকা কেজি। অথচ প্রতিটি গাছের আম বিক্রি করা হয়েছে মাত্র ১৬ টাকা!।’
নতুনসময়/আল-এম