ঢাকা শুক্রবার, ৯ই মে ২০২৫, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩২


ভালবাসা অটুট মিঠুন-এলিজাবেথ দম্পত্তির


১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:২৬

ফাইল ফটো

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের ছেলে মিঠুন বিশ্বাস। ফেসবুকে পরিচয় হয় মার্কিন নাগরিক এলিজাবেথ এসলিকের সাথে। ২০১৪ সালে মাঝামাঝি সময়ে তাদের ফেসবুকে পরিচয় হয়।

প্রায় আড়াই বছর উভয়ের মধ্যে মনের ভাব আদায়-প্রদানের পর ২০১৭ সালের ২ জানুয়ারি আমেরিকা থেকে মিঠুনের প্রেমের টানে বাংলাদেশে ছুটে আসেন মার্কিন নাগরিক এলিজাবেথ এসলিক। ৯ জানুয়ারি তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর কিছুদিন বাংলাদেশে অবস্থান করে আবার এসলিক ফিরে যান আমেরিয়ায়। এরপর আবার ২০১৮ সালের ৪ জানুয়ারি এসলিক তার স্বামী মিঠুনের কাছে ছুটে আসেন। সে বারও কিছুদিন থাকার পর চলে যান তিনি। ২০১৭ সালের বিশ্ব ভালবাসা দিবস তারা একত্রে কাটিয়েছেন। দু’জনে একসাথে অনেক আনন্দ করেছেন। ঘুরে বেড়িয়েছেন অনেক স্থানে। কিন্তু এবার এসলিক কে ছাড়া কাটবে মিঠুনের ভালবাসা দিবস।
এলিজাবেথ এসলিককে বাদে ভালবাসা দিবস কিভাবে কাটবে এমন অনুভুতি সম্পর্কে মিঠুন বিশ্বাস জানান, আমি তাকে অনেক মিস করবো। তার জন্য অনেক আক্ষেপ হচ্ছে। বর্তমান দুই জন দ্ইু ভৌগলিক অবস্থানে বসবাস করলেও আমাদের ভালবাসা অটুট রয়েছে। প্রতিদিন তার সাথে কথা হচ্ছে। ফেসবুকে চ্যাট হচ্ছে। মিঠুন আরো জানান, প্রিয় মানুষ যদি দুরে থাকে সে তো আরো বেশি প্রিয় হয়ে উঠে। আমার ক্ষেত্রেও সেটার ব্যতিক্রম নয়। তার স্ত্রী এলিজাবেথ এসলিক বর্তমানে আমেরিকার হ্যারিসটেটার নামের একটি শপিং মলে ক্যাশিয়ার হিসেবে চাকুরী করছেন।

মিঠুন বিশ্বাস সমাজ উন্নয়নমূলক কাজের সাথে জড়িত। সে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার রাখালগাছি ইউনিয়নের রাখালগাছি গ্রামের নির্মল বিশ্বাসের ছেলে। ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে আমেরিকার ওয়াশিংটর সিটির রয় এসলিকের কন্যা এলিজাবেথের সাথে ফেসবুকে মিঠুনের পরিচয় হয়। প্রায় আড়াই বছর ধরে তাদের মধ্যে প্রথমে বন্ধুত্ব, পরে প্রেম, ভালবাসার আদান প্রদান চলে ফেসবুকের মাধ্যমেই। এক পর্যায়ে উভয়ের পরিবারের অভিভাবকের কাছে তারা তাদের প্রেম ভালবাসার কথা জানিয়ে দু’জন দু’জনের কে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই সময় এলিজাবেথ বাংলাদেশ বলে কোন দেশ আছে বলে জানতো না। এক পর্যায়ে এলিজাবেথের পরিবার বাংলাদেশকে উগ্রপন্থী মুসলিম দেশ বলে খারাপ ধারণা দেন। বাংলাদেশে গেলে তাকে মেরে ফেলা হবে বলে ভয়ভীতিও দেখানো হয় এলিজাবেথকে। বিষয়টি তারা মেনে নেননি। মিঠুনের পরিবারও বিষয়টিকে প্রথম দিকে পাত্তা দেয় না।

গ্রায়েজুয়েশন সম্পন্ন করা মার্কিন নাগরিক এলিজাবেথ পরিবার থেকে কোন সাহায্য পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন। অবশেষে সেদেশে ওয়ালমাট শপিং কমপ্লেক্সে ক্যাশিয়ার হিসেবে চাকুরী নেন এলিজাবেথ। বেশ কয়েকমাস সেখানে চাকুরী করেন তিনি। টাকা পয়সা সংগ্রহ করে বাংলাদেশের এ্যাম্বিসিতে যোগাযোগ করে ভিসা নিয়ে গত ২০১৭ সালের ২ জানূয়ারি তিনি বাংলাদেশে চলে আসেন। প্রেমিকা এলিজাবেথের বাংলাদেশের আসার খবর পেয়ে প্রেমিক মিঠুনসহ তার পরিবারের সদস্যরা এয়ারপোর্ট থেকে তাকে একটি মাইক্রোবাসে রিসিভ করে নিয়ে আসেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের রাখালগাছি গ্রামে।

সে সময় মার্কিন নাগরিক প্রেমিকার বাংলাদেশের অজোপাড়া গাঁয়ে আসার খবর প্রচার হলে এলাকাজুড়ে হৈচৈ পড়ে যায়। প্রতিদিন শত শত উৎসুক মানুষ ভীড় করে প্রেমিক মিঠুন বিশ্বাসের বাড়িতে এলিজাবেথকে দেখার জন্য। এরপর মিঠুনের পরিবারের সম্মতিতে ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি তাদের এ্যাংগেজমেন্ট হয়। ৯ জানুয়ারি খুলনার শালক এজি চার্জে খ্রীস্টান ধর্মীয়মতে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ে পড়ান শালক এজি চার্জের পালক প্রধান রেভারেন্ট লিতু মুন্সি।

মিঠুন বিশ্বাস জানান, ফেসবুকে পরিচয়, বন্ধুত্ব, প্রেম ভালবাসা, অনেক ঘাত-প্রতিঘাত শেষে তাদের মিলন হয়েছে বিয়েতে। বিয়ের পর ২০১৮ সালে এলিজাবেথ এসলিক একবার বাংলাদেশে আসে। যদিও এবার এলিজাবেথ এসলিক কে ছাড়া মিঠুনের ভালবাসা দিবসটি কাটবে বিরহে। তবে তাদের মনের ভালবাসা অটুট রয়েছে যোগ করেন মিঠুন।

নতুনসময়/আইএ