ঢাকা শনিবার, ১১ই মে ২০২৪, ২৮শে বৈশাখ ১৪৩১


জেলেদের চাল আত্মসাতের অভিযোগ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে


৩ নভেম্বর ২০২২ ০৪:০২

ফাইল ছবি

চুরি-ডাকাতি, অন্যের জমি জবর দখলের পর এবার হতদরিদ্র জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত ভিজিএফর’র চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার সাহারবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নবী হোসাইন চৌধুরীর বিরুদ্ধে। জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল আত্মসাতের বিষয়টির প্রমান পেয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কাছে লিখিত প্রতিবেদন দিয়েছেন চকরিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. ফারহান তাজিম।

প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, গত ১২ জুন কিছু জেলের আবেদনের প্রেক্ষিতে সাহারবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে চাল বুঝিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু বারবার অনুরোধের পরও তিনি চাল বুঝিয়ে দেননি। এছাড়া বাদ পড়া জেলেরা নির্ধারিত সময়ে ইউনিয়ন পরিষদে উপস্থিত হলেও চাল বিতরণের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ৬৪৮ জন জেলের মধ্যে বিতরণ মাস্টাররোল পর্যালোচনা কওে দেখা যায়, ৪৭টি সিরিয়াল নম্বরধারী জেলেদেও চাল বিতরুণে কোনো স্বাক্ষর নেই। গুদামের চাবি না থাকায় কত জনের চাল মুজদ আছে তা পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে এ বিষয়ে গত ১ নভেম্বর দুদকেও অভিযোগ করেছেন সাহারবিল ইউনিয়নের কোরালখালীর বাসিন্দা ফোরকান উদ্দিন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, তিনি একজন জেলে। সাহারবিল ইউনিয়ন চেয়ারম্যান তাদেও চাল না দিয়ে উল্টো আত্মসাত করেছেন। এ বিষয়ে প্রমান পেয়েছেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা। হতদরিদ্র জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল অত্মসাতের বিষয়চি তদন্ত কওে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানান তিনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নবী হোসাইন চৌধুরীর বিরুদ্ধে চুরি-ডাকাতিসহ নানা অভিযোগে ১১টি মামলা রয়েছে। জনপ্রতিনিধি হওয়ার পরও থেমে নেই তার অপরাধ কর্মকান্ড। চকরিয়ার সাহারবিল ইউনিয়নের কোরালখালী এলাকার নবী হোসাইন অভাবের তাড়নায় ২০০৫ সালে এলাকায় চুরিতে জড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে বড় বড় অপরাধ করতে থাকে সে। অল্প দিনে অপরাধ জগতে পা দিয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যায় সে। তার পরিবারের অন্য সদস্যরাও অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িত।

গত বছরের ২৮ অক্টোবর সাহারবিল ইউপি নির্বাচনে নবী হোসাইন এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। জনপ্রতিনিধি হওয়ার পর সে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। একের পর এক করে যাচ্ছে ডাকাতি, চিংড়ি ঘের দখল ও জমি দখল। সরকার দলীয় প্রভাবশালী এক নেতার আশ্রয় প্রশ্রয়ে সে কোনো কিছুর তোয়াক্কা করছে না বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। নবী হোসাইনের বিরুদ্ধে কক্সবাজারের ৯টি থানায় ডাকাতি, জমি দখল, চিংড়ি ঘের দখল, অপহরণ, অবৈধ বালু উত্তোলন ও গরু-ছাগল চুরিসহ ১১টি মামলা রয়েছে।

এছাড়া এক প্রবাসীর ঘরে ডাকাতি ও স্বর্ণ লুটের ঘটনায় পুলিশের হাতে আটক ডাকাতরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে চেয়ারম্যান নবী হোসাইন জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত অস্ত্র নবী হোসাইনের বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। দুই বছর আগের ওই ডাকাতি মামলায় গত ৯ ফেব্রæয়ারি নবী হোসাইনহ ১৮ জনের নামে অভিযোগপত্র দিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা চকরিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জুয়েল চৌধুরী।

এ বিষয়ে নবী হোসাইন বলেন, এক প্রবাসীর ঘর ডাকাতি মামলায় আমাকে জড়ানো হয়েছে। আমি নাকি ডাকাতির সময় এক ডাকাতের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেছি। আমি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই। অন্য মামলাগুলোতে ষড়যন্ত্রভাবে জড়ানো হয়েছে বলে দাবি করে সে। এছাড়া চাল আত্মসাতের বিষয়ে কথা বলতে রাজী হননি তিনি।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, সাহারবিল ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একটি ডাকাতি মামলায় অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত ডাকাতরা রিমান্ডে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (চকরিয়া-পেকুয়া সার্কেল) তফিকুল আলম বলেন, নবী হোসাইনের বিরুদ্ধে নানা অপরাধের একাধিক মামলা রয়েছে। প্রবাসীর ঘর ডাকাতি মামলায় জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে এসেছে।