ঢাকা শুক্রবার, ১০ই মে ২০২৪, ২৮শে বৈশাখ ১৪৩১


মাদকের অন্ধকার জগত থেকে আলোর পথে জয়নাল


৯ আগস্ট ২০২০ ২০:০৮

ছবি সংগৃহীত

রাজশাহী জেলার হরিপুর এলাকার বাসিন্দা জয়নাল। মা ভাই স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে তার সংসার। সবাই চায় স্বাধীন দেশে স্বাধীন ভাবে বাঁচতে জয়নাল ও এর ব্যতিক্রম না।তিনি তার পরিবারকে নিয়ে সুখে শান্তিতে এক সাথে থাকতে চায়।তিনি সৎ পথে পরিশ্রম করে দুবেলা দু মুঠো খেতে চায়।
তিনি এক সময় মাদক ব্যবসার সাথে বেশ যুক্ত ছিলেন, জয়নালের নামে কোটে ৫ টি মামলা রয়েছে বিচারাধীন। জয়নালের মুল ব্যবসা ছিল ফেন্সডিল ও ইয়াবা।
তিনি মাদকের ব্যবসা করে কিছু টাকা উর্পাজন করছেন কিন্তু সুখ পাননি।
পুলিশ, ও Rab এর ভয়ে পালিয়ে থাকতে হতো,কোন দিন তিনি বাসায় ভালো ভাবে থাকতে পারে নি,
দিনে আত্মগোপন, রাতে র‌্যাব-পুলিশের ভয়ে নির্ঘুম কাটানো। সেই সঙ্গে মরণঘাতী মাদকের ভয়াবহ ছোবল। প্রতিটি মুহূর্ত যেন ভয় আর উৎকণ্ঠায় কাটছিল। এর মধ্যেও মাসে মাসে মামলার ঘানি টানতে আদালতে কাঠগড়ায় আবার কখনোবা স্বজনদের ছেড়ে জেলখানার চার দেয়ালে বন্দি জীবন।

‘সব মিলিয়ে ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছিল অভিশপ্ত জীবন। ভেবেছিলাম আর বোধ হয় বাঁচা হবে না। কিন্তু না, খুঁজে পেয়েছি আলোর দেখা। মা-ভাই এবং স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে বেশ ভালোই কাটছে জীবন সংসার। দেখছি সৎ পথে বড় হওয়ার স্বপ্ন। মানুষের কাছ থেকে পাচ্ছি আত্মসম্মানও।’

একান্ত আলাপে মাদক ব্যবসা ছেড়ে সুন্দর ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা জয়নাল বলেন, ‘মাত্র ২২ বছর বয়সে বাবা মারা যান। অসহায় মায়ের পক্ষে সংসারের জোয়াল ধরা সম্ভব হচ্ছিলো না। মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে আমাকে এবং ছোট ভাই ও বোনের মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দিয়েছেন। মায়ের কষ্ট দেখে নিজেই উপার্জনের পথ খুঁজি। কিন্তু নিষ্ঠুর এ জগতে কেউ কাউকে সহযোগিতার হাত বাড়ায় না। আমার ভাগ্যেও তেমনটিই ঘটেছিল।’

জয়নাল বলেন, ‘বেকারত্ব জীবন নিয়ে কয়েকটি বছর কেটে যায়। পারিবারিক ভাবে বিয়ে করে ফেলি। বিয়ের পরে সংসারে জোয়াল কাঁধে ওঠে। দেখা দেয় চরম অর্থসংকট। কোনো কাজ না পেয়ে অর্থের জোগান দিতেই বেছে নিয়েছিলাম অন্ধকার মাদকের জগৎ।প্রতিবেশী এক মাদক ব্যবসায়ীর মাধ্যমে সরাসরি মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ি।’

‘আমার মূল ব্যবসা ছিল ফেন্সিডিল ও ইয়াবা।প্রথম প্রথম এগুলো বিক্রি করে বেশ ভালই আয় রোজগার হতে লাগলো। এক পর্যায়ে পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী হয়ে গেলাম। টাকার দেখা মিললেও অসৎ পথে এ আয়ে সংসারে শান্তি এলো না। বরং অশান্তি যেন চিরসঙ্গী হয়ে গেল। মাদকসহ ধরা পড়ে হয়ে গেলাম তালিকাভুক্ত ব্যবসায়ী। পর পর হওয়া পাঁচটি মাদক মামলায় আদালতে হাজিরা এবং মামলা চালাতে গিয়ে যা উপার্জন করেছিলাম এর সিংহভাগ ফুরিয়ে গেছে। এর উপর র‌্যাব-পুলিশের অভিযানের ভয়ে কত রাত যে নির্ঘুম কেটেছে তা গুনে বলা যাবে না। দিনের আলোয় ভয় কম থাকলেও সমাজে মিশতে পারতাম না। ঘৃণা আর আড়চোখে দেখত সবাই। মা, ছোট ভাই-বোন এবং স্ত্রী- কারো কাছে মুখ দেখাতে পারতো না। কেউ মিশতো না আমাদের সঙ্গে। তাই ভেবেছিলাম এ অপরাধের জগৎ ছেড়ে ভালো হয়ে যাব। কিন্তু পারছিলাম না।’

জয়নাল বলেন, গত বছর কোর্টে হাজিরা দিতে গিয়ে চায়ের দোকানে পরিচয় হয় এক সাংবাদিক ভাইয়ের সাথে।পরিচয় গোপন করে অনেক গল্প করি।এক পর্যায়ে পরিচয় দিয়ে সব সত্য কথা বলি।তিনি আমাকে বলেন, আপনি মাদক ব্যবসা করেন বিধায় আপনার কাছে প্রশাসন কে অনেক কঠোর মনে হয়, বাস্তবে প্রশাসন মানুষের উপকার করার জন্যই ব্যস্ত থাকে। আর দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে প্রশাসনের ভূমিকা দেখেছি।তারপর মাস তিনেক আগে সেই সাংবাদিক ভাইয়ের সাথে আবারো যোগাযোগ করি এবং মনের কথা খুলে বলি।উনি বলেন, আপনি যদি সত্যি আলোর পথে ফিরে আসেন তাহলে প্রশাসন বন্ধুর মতো আপনার পাসে থাকবে কিন্তু আপনাকে প্রতিঞ্জা করতে হবে যতই কষ্ট হোক না কেন, আর কখনো সেই অন্ধকার জগতে যাওয়া যাবে না।আমি দেরি না করে পরিবারের ও প্রতিবেশীদের সাথে কথা বলি।সকলে খুব খুশি হয়ে আমাকে সার্বিক সহযোগীতা করে।বাড়ির সামনেই গড়ে তুলি গেঞ্জি তৈরির কারখানা।এখন এই কারখানায় আমি ও আমার বউ সহ গ্রামের চারজন মহিলা কাজ করে। কিছুদিন আগে ছোট মেয়ের বিয়ে দিয়েছি।সব মিলিয়ে আমি এবং আমরা এখন বেশ ভালোই আছি। আসলে মাদক কোনো ভালো জীবন নয়। এটি একটি অভিশপ্ত জীবন। আমি ফিরে এসেছি। এখনো যারা এই অভিশপ্ত জীবনে রয়েছেন আমি মনে করি তাদেরও ফিরে আসা উচিত।’

হরিপুর এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মুদি দোকানদার বলেন,জয়নাল মাদক ব্যবসা করতো কিন্তু দেখছি কিছু দিন হতে ভালো আছে।তার সন্তানরা খুব ভালো, তার মাদক ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে তিনি দোকান করছে।তার এমন সঠিক সিদ্ধান্ত এলাকায় সস্তি ফিরে পেছেন।

জয়নাল আরো বলেন, আমি মাদক ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছি কিন্তু আমাকে এলাকার চিন্তিত মাদক ব্যবসায়ী ও প্রশাসনের সোর্স সুজন হুমকিসহ আমার সম্পর্কে প্রশাসনকে নানান মিথ্যাচার কথা বলা হচ্ছে যা আমার ভালো হওয়ায় বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে যা কার্ম নয়।
ভুল মানুষ করতে পারে আমিও ভুল করে মাদক ব্যবসার সাথে যুক্ত ছিলাম, কিন্তু আমি সবকিছু ছেড়ে ভালো ভাবে জীবন যাপন করতে চাই। আমি সকল প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা চাই।