বড়াইগ্রামে ব্যবসায়ীকে মারপিট করার দায়ে এএসআই সহ দুই পুলিশ বরখাস্ত

নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলায় এক ব্যবসায়ীকে মারপিট করার দায়ে বড়াইগ্রাম থানার এএসআই ফারুখ হোসেন ও কনস্টেবল আমিনুর রহমানকে বহিস্কার করা হয়েছে। একই ঘটনায় আনসার সদস্য আসাদুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এই বরখাস্তের আদেশ বড়াইগ্রাম থানায় পাঠানো হয়েছে।
নাটোরের পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়,সোমবার রাত নয়টার দিকে উপজেলার বড়াইগ্রামের আলহাজ্ব মো. শহিদুল্লাহ শেখের ছেলে ব্যবসায়ী শেখ আজিজল হোসেন সোনাবাজু গ্রাম থেকে বাড়িতে আসছিলেন। পথে পারকোল বাজারে পৌছলে রাত নয়টার দিকে মোটর সাইকেলের তেল শেষ হলে সে বাজারে গাড়ী স্ট্যান্ড করে দাঁড়ায়। সে সময়ে থানার এ.এস.আই ফারুখ হোসেন, কনস্টেবল আমিনুর রহমান ও আনসার সদস্য আসাদ সিএনজি যোগে পারকোল বাজারের ফিডার রোডে পৌছেন এবং বাজারে দন্ডায়মান আজিজলকে ডাক দিয়ে তার নাম-ঠিকানা ও মোটরসাইকেলটি কার জিঙ্গাসা করেন। জবাবে আজিজল মোটরসাইকেলটি গাম-পুলিশ কাশেমের বলে জানালে তাকে রিং দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন এ.এস.আই ফারুখ। তখন কাশেমের মোবাইল নাম্বাারে ২/৩ বার আজিজল কল করেও রিসিভ না হওয়ায় অজ্ঞাত কারণে আজিজলকে পুলিশ প্রথমে ২/৩ টি কিল-ঘুষি মারে। তখন আজিজল তার বড় ভাই সাংবাদিক তোফাজ্জলকে রিং দিয়ে বিষয়টি খুলে বলে এবং মোবাইল ফোনটি পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিয়ে ভাইয়ের সাথে কথা বলার অনুরোধ জানান। তার ভাইয়ের সাথে কথা না বলে তাৎক্ষনিক এ.এস.আই ফারুখ সহ তিনজন মিলে আজিজলকে এলোপাথাড়িভাবে মারপিট করে রক্তাক্ত জখম করে। ওই সময়ে নাকে সজোরে আঘাত লাগার কারণে সে কিছুক্ষনের জন্য রাস্তার উপরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরে পুলিশ সদস্যরা তার শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে তাদের গাড়িতে করে দ্রæত বড়াইগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে নিয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী আগ্রান গ্রামের সোবাহান সরকারের ছেলে মোহাম্মদ সরকার জানান, আমি মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি ফিরার পথে পারকোল বাজারের সামনে রাস্তার উপরে পুলিশের সামনে রক্তাক্ত অবস্থায় বসে থাকতে দেখি। পুলিশ তাকে টানা হেচড়া করছে। পরে আমি পুলিশকে বলি কি হয়েছে, পুলিশ আমাকে বলে দেখেনতো উনাকে চিনতে পারেন কিনা? প্রথমে তার মুখমন্ডলে এতো রক্ত ছিল যে তাকে চিনা যাচ্ছিল না। পরে মোটরসাইকেলের আলো দিয়ে ভালো করে দেখি যে সে সাংবাদিকের ছোট ভাই আজিজল। আমি পুলিশকে বলি আর.টি.ভি’র সাংবাদিক তোফাজ্জল ভাইয়ের আপন ছোট ভাই বলায় পরে পুলিশ কোথায় জানি ফোন করলো এবং তখন গাড়িতে করে নিয়ে গেল।
বড়াইগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ আব্দুল্লাহ হিল কাফি জানান, রাত অনুমান ১০ টার দিকে বড়াইগ্রাম থানার পুলিশ আজিজল (৩৫) নামের এক ব্যক্তিকে রক্তাক্ত অবস্থায় নিয়ে আসে এবং আমরা তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেই। আমরা তার নাম ঠিকানা রেজিস্টার খাতায় লিপিবদ্ধ করি।
তোফাজ্জল হোসেন বড়াইগ্রাম থানায় এসে তাঁর ভাইকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান। তিনি তাৎক্ষণিক বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানান। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ঘটনাটি শুনার পর দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে দায়ী ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায়, । পরে তোফাজ্জল হোসেন তাঁর ভাইকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করান এবং পুলিশ সুপারকে ঘটনাটি জানান। পুলিশ সুপার ঘটনাটি তদন্ত করে সত্যতা পাওয়ায় মঙ্গলবার সন্ধায় এএসআই ফারুখ হোসেন,কনস্টেবল আমিনুর রহমানকে সাময়িক বহিস্কার করেন এবং আনসার সদস্য আসাদুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আনসার কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠান।
আজিজল হোসেন জানান,তিনি কাঁচা ও ভুষি মালের ব্যবসা করেন। ঘটনাস্থলের কাছেই তাঁর বাড়ি। তবুও পুলিশ তাঁকে বিশ্বাস করেন না। একপর্যায়ে পুলিশকে বলে আমার বড়ভাই সাংবাদিক তোফাজ্জলের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে পুলিশ মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেয়। বরং সবাই মিলে এলোপাথাড়ি কিলঘুষি মেরে তাকে রক্তাক্ত করেন।
তার বড় ভাই সাংবাদিক তোফাজ্জল হোসেন জানান,বিনাদোষে তাঁর ভাইকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে। তাঁর কাছ থেকে অবৈধভাবে টাকা নেয়ার জন্যই হয়তো এমনটি করা হয়েছিল। তদন্ত শেষে কর্তৃপক্ষ দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং পুলিশ সুপারকে ধন্যবাদ জানান।
এ ব্যাপারে বহিস্কার হওয়া পুলিশ সদস্যদের সাথে মুঠোফোনে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন,কোনো পুলিশ সদস্য অন্যায়ভাবে জনগণের সাথে খারাপ ব্যবহার করলে বা মারপিট করলে তাঁর নিস্তার নাই। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি ফৌজদারি ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। তবে দায়ী দুই পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিভাগীয় মামলায় পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আনসার সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আনসার কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে।