ঢাকা সোমবার, ২০শে মে ২০২৪, ৭ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


কলেজ ছাত্র সুমন হত্যায় ঘাতক মিঠুর ফাঁসির দাবীতে বিভিন্ন সংগঠনের মানববন্ধন


২৫ জুন ২০২০ ০২:৩৩

ছবি সংগৃহীত

ভোলার বোরহানউদ্দিনে আলোচিত কলেজ ছাত্র সুমন হত্যার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত ঘাতক বন্ধু মিঠু মঙ্গলবার (২৩ জুন)আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। গ্রেফতারকৃত অপর আসামি মিঠুর ছোটভাই রাসেদের ৩দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেণ বিজ্ঞ আদালত এ তথ্য মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তার। এদিকে ময়না তদন্ত শেষে সুমনের লাশ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করলে মঙ্গলবার বিকালে পক্ষিয়া ইউনিয়নের জ্ঞাণদা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। অপরদিকে এলাকাবাসি ও নিহত সুমনের সহপাঠীরা জানাজা শেষে বোরহানগঞ্জ বাজারে ঘাতকদের ফাঁর্সির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন।বুধবার সকালে ভোলা উন্নয়ন সংস্থানামক একটি সামাজিক সংগঠন একই দাবীতে বোরহানগঞ্জবাজার ও বোরহানউদ্দিন থানার পাশে একই দাবীতে মানব বন্ধন করেছে।

নিহত সুমনের খালাতো ভাই সজিব ও সোহেল জানান, ২০ জুন সন্ধ্যায় বোরহানগঞ্জ বাজারে চা খাচ্ছিল। এমন সময় হঠাৎ সুমনের ফোনে একটি কল আসে। সুমন আমাদেরকে বসিয়ে রেখে ওইখানে চলে যায়।৯টার দিকে ফোন দিলে সুমন বলে আসছি।তোরা একটু অপেক্ষা কর।এরপর থেকে সুমনকে আর ফোনে পাওয়া যায়নি। অনেক খোঁজাখুজির পর সুমনে না পেয়ে ২১ জুন তার মা স্থানীয় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ওই ডায়েরির সূত্র ধরে মোবাইল ট্রাকিং এর মাধ্যমে ২২ জুন ঘাতক বন্ধু মিঠুকে আটক করে পুলিশ। হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করলে তার দেখানো পক্ষিয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের নির্জন বিলের মধ্যে মোশারফ মোল্লার বাগান থেকে বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বশির গাজী,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লালমোহন সার্কেল রাসেলুর রহমান এর উপস্থিতে মাটি খুড়ে লাশ উদ্ধার করা হয়। আর প্যান্ট উদ্বার করা হয় জনৈক জসিম এর পুকুর এর পাড় থেকে নিহত সুমনের মাটি চাপা দেওয়া লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত সুমন পক্ষিয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের প্রবাসী মফিজুল মিয়ার ছোট ছেলে। মুক্তিপণ আদায়ের জন্যই এই হত্যাকান্ড এমন বক্তব্য ওসি মু,এনামুল হকের।
তবে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়,নিহত সুমন মিঠুর বন্ধু।সুমনের বাবা প্রায় ২০ বছর সৌদি প্রবাসী।বাড়ির খরচের জন্য টাকা তিনি সুমনের বিকাশে পাঠাতেন।ঘটনার কয়েকদিন আগে সুমনের বাবা সৌদি থেকে ৪০ হাজার টাকা পরিবারের খরচের জন্য তার মোবাইলে পাঠায়।
অন্যদিকে মিঠু ছিলেন একজন পেশাধার মাদক বিক্রেতা ও সেবক।মারামারি,চাঁদাবাজী আর দাঙ্গা হাঙ্গামা করাই ছিল ওই পরিবারের সদস্যদের বৈশিষ্ঠ।মিঠুর বাবা পক্ষিয়া ইউনিয়নের যুবলীগের সম্পাদক।তিনিও একজন ইয়াবা বিক্রেতা। ইয়াবা বিক্রয়ের সময় ২০১৬ ও ২০১৮ সালে বাবা ছেলে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল। ২০১৮ সালে জেল ও খেটেছিল
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই স্বপন কুমার হাওলাদার জানান, ঘটনায় নিহতের মা মমতার বেগম ৩ জনকে নামীয় এবং ৩/৪ জনকে অজ্ঞাত করে সোমবার রাতেই একটি মামলা দায়ের করেন। গ্রেফতারকৃত আসামী মিঠু আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করেন।অপর আসামি মিঠুর ভাই রাসেলকে ৭দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
বোরহানউদ্দিন থানার অফিসার ইনচার্জ মু.এনামুল হক জানান,মুক্তিপণের জন্যই মূলত এক মর্মান্তিক হত্যাকান্ড ।গ্রেফতারকৃত মিঠু বিঞ্জ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন।অপর আসামি রাসেদের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।

যে ভাবে হত্যা করা হয় মেধাবী ছাত্র সুমনকে :
বোরহানউদ্দিন সরকারি আব্দুল জব্বার কলেজের ¯œাতন শেষ বর্ষের ছাত্র ছিল সুমন। ৩ ভাই ১ বোনের মধ্যে সবার ছোট সুমন।ঘটনার দিন অর্থাৎ ২০ জুন সন্ধ্যায় মিঠু ফোন করে সুমনকে তার কাছে নিয়ে যায়।অনেক কথাবার্তা ও মাদক সেবন করে সময় কাটায় মিঠু।এক পর্যায়ে আক্রমন করে সুমনকে।ভারীবস্তু দ্বারা ঘাড়ে আঘাত করে। লুটিয়ে পড়ে সুমন।এরপর শ্বাসরোধ করে হত্যাকরা হয় তাকে।পরে সুবিদামতো সময়ে ঘটনাস্থলে নিয়ে তাকে মাটি চাপা দিয়ে আসেন।লাশ পুতে রাখার যায়গা থেকে প্যান্ট পুতে রাখেন অনেক দুরে। মোবাইল ফেলে রাখেন অন্য জায়গায়।তবে ঘাতক মিঠু জানায়,হত্যা থেকে শুরু করে লাশ পুতে রাখার সব কাজই সে একা করেছেন।যা বিশ^াস করা দুরহ এমন মতামত অনেকেরই। সময়ের ব্যবধানে জিঞ্জাসাবাদে হয়তবা সবই এক সময় বেরিয়ে আসবে।

ঘাতক মিঠুর বেপরোয়া হয়ে উঠার কাহিনী।
ঘাতক মিঠুর বাবা নাজিম উদ্দিন নাজু।দীর্ঘদিন পক্ষিয়া ইউনিয়নের যুবলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত।বর্তমানে ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। এক সময় তিনি পক্ষিয়া ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ লিখে ও পরিষদ থেকে টুকটাক সহযোগিতা নিয়ে সংসার চালাত। সময়ের ব্যবধানে সে আলাদিনের চেরাগ হয়ে উঠে।জড়িয়ে পড়ে ইয়াবা ব্যবসার সাথে।সন্তানদের দিয়ে ও তিনি ইয়াবা বিক্রয় করাতেন।এলাকায় মারামারি,শালিশ বিচার সব ক্ষেত্রেই সে প্রভাব বিস্তার করত।ওখান থেকেও অর্থ কামিয়েছেন বেশ।তার মতের বিরোধী কেউ হলেই সন্তানদের তিনি শায়েস্তা করার জন্য লাগিয়ে দিতেন।শুরু হয় তার বেপরোয়া জীবন।হয়ে উঠেন অনেকটা অপ্রতিরোধ্য।