ঢাকা শুক্রবার, ১৬ই মে ২০২৫, ৩রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২


ভাইস চেয়ারম্যানের নির্মম নির্যাতনের শিকার প্রতিবন্ধি ভাই


৩১ মার্চ ২০২০ ১৯:৪৮

ছবি সংগৃহীত

রেললাইনের অধিগ্রহণে পড়া পৈত্রিকভাবে প্রাপ্ত জমির গচ্ছিত টাকা চাওয়ায় প্রতিবন্ধি সৎভাই বেদার মিয়াকে (৪০) নির্মমভাবে পিটিয়েছেন কক্সবাজার সদর উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান রশিদ মিয়া। এতে তার শরীর বিভিন্ন অংশ মারাত্মকভাবে জখম হয়েছে। সোমবার বিকালে ঝিংলজা হাজীপাড়ার তাদের বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। পিতা নবাব মিয়ার তিন স্ত্রী ছিলো। তৃতীয় স্ত্রীর পুত্র বেদার মিয়া। তিনি মানসিক প্রতিবন্ধি। তার মা বেঁচে নেই। তাদের বড়ভাই ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার জহির মিয়া কাজল এই তথ্য জানান। মেম্বার জহির মিয়া কাজল জানান, পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া তাদের সবার জমি রেললাইনের অধিগ্রহণে পড়ে। ওই টাকা উত্তোলনের জন্য সবাই রশিদ মিয়াকে এটর্নি পাওয়ার দেয়। পাওয়ার পেয়ে টাকা তুলে রশিদ ভাইবোনদের ভাগের অনেক টাকা আত্মসাৎ করে। এর মধ্যে বেদার মিয়া প্রতিবন্ধি হওয়ায় তার ভাগের টাকা নিজের কাছে রেখে দেয় ভাইস-চেয়ারম্যান রশিদ মিয়া। বিভিন্ন সময় বেদার মিয়া টাকাগুলো চাইলে দেয়নি। ১০০/২০০ টাকা হাতে ধরিয়ে তাড়িয়ে দিতো। এভাবে বেদার মিয়ার ১৪ লাখ টাকা কুক্ষিগত করে রাখে ভাইস-চেয়ারম্যান রশিদ মিয়া। প্রতিবারের মতো টাকা চাইতে গেলে মঙ্গলবার কাঠ দিয়ে বেদার মিয়ার শরীরের বিভিন্ন অংশে নির্মমভাবে পেটায় রশিদ মিয়া। তখন সেখানে অন্য কেউ উপস্থিত ছিলেন। ফলে ইচ্ছে মতো মারা হয়েছে প্রতিবন্ধি বেদার মিয়াকে। পরে বিষয়টি নিয়ে জহির মিয়া কাজল প্রতিবাদ করলে তার সাথেও অসদাচারণ করেন রশিদ মিয়া- এমনটি জানান জহির মিয়া কাজল। তাই বিষয়টি র‌্যাবকে জানালে ঘটনাস্থলে যান র‌্যাবের একটি দল। পরে আহত অবস্থায় বেদার মিয়াকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। এই ঘটনায় থানায় এজাহার দায়ের করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদের একজন ভাইস-চেয়ারম্যান হয়ে প্রতিবন্ধি ভাইকে এমন নির্মম নির্যাতন করায় এলাকায় মেম্বার জহির মিয়া কাজল আরো জানান, ২০০২ সালে রশিদ মিয়া তার আরেক সৎভাই (জহির মিয়ার আপন ভাই) ফরিদ মিয়াকে গুলি করে হত্যা করেছিলো। এই হত্যার ঘটনায় রশিদ মিয়াকে প্রধান আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছিলো। ওই ঘটনার পর দীর্ঘ ৮/১০ বছর পলাতক ছিলেন রশিদ মিয়া। মামলাটি এখন বিচারাধীন রয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রতিবন্ধি বেদার মিয়াকেও বিভিন্ন সময় মারধর করতেন তিনি। ২০১২ সালে জহির মিয়া কাজলের স্ত্রীকেও নির্মমভাবে মারধর করেছিলেন রশিদ মিয়া। ওই ঘটনায় নারী নির্যাতন আইনের মামলা দায়ের করা হয়েছিলো। এই মামলাটিও এখন বিচারাধীন রয়েছে। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ভিন্ন কথা বলেছেন কক্সবাজার সদর উপজেলার ভাইস-চেয়ারম্যান রশিদ মিয়া। তিনি বলেছেন, ভিটার এক জায়গায় সবাই ময়লা ফেলে আসছে দীর্ঘদিন। একারণে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। বর্তমানে করোনা নিয়ে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে আমি আরো সিরিয়াস হই। ময়লাগুলো পরিস্কার ফেলেছি। তারপরও আবারো ফেলে। এটা বলাতে বেদার মিয়া আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। এতে রাগের মাথায় তাকে আমি একটা গাছের চিকন ডাল দিয়ে একটা ভারি মেরেছি। ভাইস চেয়ারম্যান রশিদ মিয়া দাবি করেন, ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে আমার মানহানি করার জন্য টাকা আত্মসাতের অহেতুক অভিযোগ করা হচ্ছে। প্রকৃত ঘটনা জানার জন্য তিনি সাংবাদিকদের সরেজমিন পরিদর্শনের আহ্বান জানান।