বিএনপি’র সাবেক এমপি রহিম উদ্দিন ভরসার ইন্তেকাল

বরেণ্য শিল্পপতি ভরসা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান এবং বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি আলহাজ রহিম উদ্দিন ভরসা ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
বুধবার দুপুর দেড়টায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে মারা যান তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।
শুক্রবার ঢাকা থেকে তার লাশ রংপুরে আনা হবে। পরে হারাগাছে জানাজা ও দাফনকার্য সম্পন্ন হবে।
ভরসা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক ও মরহুম রহিম উদ্দিন ভরসার পুত্র এমদাদুল হক ভরসা জানান, বুধবার বেলা ১টা ৩০ মিনিটে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তার বাবা। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। বুধবার বাদ এশা রাজধানীর ধানমন্ডির ৭ নম্বর রোডের মসজিদে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতিবার ঢাকায় বিএনপি অফিস ও সংসদ প্লাজায় জানাজা হবে তার। শুক্রবার হেলিকপ্টারযোগে লাশ রংপুরে আনা হবে। বাদ আসর হারাগাছ ঈদগাহ ময়দানে নামাজে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
রহিম উদ্দিন ভরসা ১৯৩৫ সালে রংপুরের কাউনিয়ার হারাগাছের দারারপারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মনের উদ্দিন পাইকার ও মাতা তবিজন্নেসা। ছোটকাল থেকেই ব্যবসা-বাণিজ্যের সাথে জড়িত ছিলেন রহিম উদ্দিন ভরসা। গড়ে তোলেন ভরসা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজসহ ৫০টির বেশি আর্থিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিষ্ঠান। এর মাধ্যমে সারাদেশে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করেন তিনি।
রহিম উদ্দিন ভরসা রাজনীতি শুরু করেন বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সাথে। জাগো দল থেকে শুরু করে জিয়াউর রহমানের আমলে রংপুর-৪ পীরগাছা-কাউনিয়া (বিলুপ্ত-১০) আসন থেকে ১৯৭৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি রংপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। রংপুর থেকে প্রকাশিত দৈনিক যুগের আলোর প্রতিষ্ঠাতা তিনি। পিপলস ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক, রংপুর চেম্বারের প্রেসিডেন্টসহ বিভিন্ন সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি অসংখ্য স্কুল-কলেজ ও এতিমখানা মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা।
২০০১ সালে রহিম উদ্দিন ভরসা অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজ ছোট ভাই জাতীয় পার্টির করিম উদ্দিন ভরসা ও ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শিল্পপতি টিপু মুনশির সাথে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন সামাজিক, সাংষ্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
তার মৃত্যুতে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা, রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, রংপুর জেলা ও মহানগর বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, পেশাজীবী, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ শোক জানিয়েছেন। শোকবার্তায় তারা বলেছেন, রহিম উদ্দিন ভরসাকে হারিয়ে রংপুরের মানুষ একজন অভিভাবক হারালেন। তিনি মানবদরদী রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক ছিলেন । একারণে যে শূন্যতা তৈরি হলো। তা কখনই পূরণ হওয়ার নয়। তারা মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান ও রূহের মাগফেরাত কামনা করেন।
রহিম উদ্দিন ভরসার ৬ পুত্র, ৯ কন্যা, নাতি-নাতনি, অসংখ্য কর্মকর্তা-কর্মচারী, শ্রমিক, রাজনৈতিক সহকর্মীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রয়েছে। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে হারাগাছসহ রংপুর বিভাগে।