ঢাকা শুক্রবার, ১৬ই মে ২০২৫, ৩রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২


কক্সবাজার সৈকত পাড়ার দালাল ও প্রতারক নাসিরের অত্যাচারে অতিষ্ট মানুষ


২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৭:৫৮

ছবি সংগৃহীত

কক্সবাজার সৈকত পাড়ার দালাল ও প্রতারক নাসিরের অত্যাচারে অতিষ্ট মানুষ


কক্সবাজার শহরের লাইট হাউস সৈকত পাড়ার নাসির প্রকাশ মোটা নাসিরের নানাবিধ অত্যাচারে অতিষ্ট উঠেছে সাধারণ মানুষ। শুধু তাই নয় মাদকাসক্ত দালাল নাসিরের হাতে প্রতারিত হয়ে অনেক নারী-পুরুষ বর্তমানে নি:স্ব হয়ে পড়েছে। অনেক লোককে সৌদি আরব পাঠানোর নাম করে তাদের ঢাকা থেকে বিমানে করে কক্সবাজার পাঠিয়ে প্রতারণা করেছে এই নাসির। অভিযোগে জানা যায়-এই প্রতারক দালাল নাসিরের স্থায়ী ঠিকানা হল কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাহ ইউনিয়নে।

সে বর্তমানে কক্সবাজার হোটেল-মোটেল জোনের সৈকত পাড়ায় অবস্থান করার মাধ্যমে এই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। খবর নিয়ে জানা গেছে-নাসির বর্তমানে যে জায়গায় থাকে ওই জায়গাটাও ইতিমধ্যে তিন জনকে বিক্রি করে দিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার কয়েকজন ব্যক্তি জানান-নাসির জীবিকা নির্বাহের মত কোন কাজ করে না। মানুষের সাথে প্রতারণা করে টাকা উপার্জন করায় তার একমাত্র অবলম্বন। সে মাদকের টাকা জোগাড় করতে মানুষকে নানা ভাবে নির্যাতন চালায়। বুলবুলি নামের এক মহিলা জানান-তার কাছ থেকে আজ ৫/৬ মাস হচ্ছে নাসির মোটা অংকের টাকা নিয়েছে দোকান দেয়ার কথা বলে। কিন্তু আদৌ কোন দোকান দেয়নি। টাকা চাইতে গেলে উল্টো নানা ভাবে হুমকি দেয় দালাল মাদকাসক্ত নাসির। জানা যায়-হাইপেরিয়ন বিল্ডার্স এর করুণ পরিণতির জন্য সর্বপ্রথম দায়ী এই নাসির। অভিযোগে জানা যায়-বর্তমানে প্রতারক নাসির নিজে জাল দলিল তৈরি করছে। হাইপেরিয়ন বিল্ডার্স এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম দেশের বাইরে চিকিৎসা নিচ্ছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বেশ কয়েকটি স্থানে নাসির তার নাম উল্লেখ করে জাল স্ট্যাম্প তৈরি করেছে নোটারির মাধ্যমে।

এই প্রতারক নাসিরের অপকর্ম নির্যাতনের বণর্ণা এখানে শেষ নয়। রয়েছে আরো লোমহর্ষক তথ্য। নাসির স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বিশেষ করে ফ্ল্যাট ব্যবসায়ী যারা আছে তাদের নানা ভাবে নির্যাতন করে ফতুর করে দিচ্ছে। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ভাবে চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে সার্ভিস চার্জ বাড়িয়ে দেয়া, বিদ্যুতের লাইন কেটে দেয়াসহ নানা অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। ফ্ল্যাট ব্যবসায়ী আবু হুরাইরা, মোঃ বাবু ফ্ল্যাট ব্যবসায়ী কক্সবাজার শহরের ১২নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগ উত্তরের আহŸায়ক নাফিস ইকবাল স্থানীয় যুব সমাজের নেতৃবৃন্দ, সমাজ পরিচালনা কমিটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ থেকে ধরে এখানে যারা হোটেলে কর্মরত বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে এবং বাইরের যারা ফ্ল্যাট ব্যবসার তাগিদে কক্সবাজারের জীবন-জীবিকা নির্বাহের কারণ অবস্থান করে অসংখ্য লোক মোহাম্মদপুর গফুর ফ্ল্যাট ব্যবসায়ী সী-পাল ১-২ সহ হাইপের ইন বিল্ডার্সের নিয়ন্ত্রণাধীন সকল ফ্ল্যাট মালিক ও ভাড়াটিয়া এই চাঁদাবাজ মাদকাসক্ত নাসির প্রকাশ দালাল নাসিরের হাতে এক প্রকারে জিম্মি হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে সী-পালের চেয়ারম্যানের ছোট ভাই মিন্টু বলেন-সেখানে প্রবীণ মুরব্বি বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সমাজ পরিচালনা কমিটির প্রতিষ্ঠাতা মরহুম কাজী তোফায়েল আহমেদের সুপারিশে হাইপেরিয়ন বিল্ডার্স এর মালিক শামসুল আলম নাসিরকে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে চাকুরি দিয়েছিল। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই তার অপকর্ম প্রকাশ পেতে থাকে। সে বেশ কয়েকবার কোম্পানির প্যাড এবং বিভিন্ন অফিসিয়াল কাগজপত্র জালিয়াতি করে হাতেনাতে ধরা পড়েছিল। তবে ওই এলাকার দুইজন সম্মানী লোক এবং তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার অনুরোধে লঘু দন্ড দিয়ে নাসিরকে আবারও চাকুরিতে বহাল করা হয়।

অভিযোগে আরো জানা যায়-যদি কোন নতুন ব্যবসায়ীর আগমন ঘটে ভুলক্রমে যদি সিকিউরিটি নাসিরকে অবহিত করা না হয় কিংবা কোন ফ্ল্যাট কারও কাছ থেকে ভাড়া নেয় তাহলে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পরিচয়দানকারী চাঁদাবাজ দালাল নাসিরের স্বঘোষিত আইনেই নিতে হবে। শুধু তাই নয় কেউ ফ্ল্যাট হাতবদল করলে বা ভাড়াটিয়া পরিবর্তন করলে ২০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নাসিরের জন্য উপঢৌকন রেখে দিতে হয় বলেও অভিযোগ করেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এমন অবস্থায় অনেকটা অতিষ্ট হয়ে কোম্পানির চেয়ারম্যান এবং আমি বর্তমান জিএম মোহাম্মদ মিন্টু তাকে বরখাস্ত করি। মিন্টু আরো জানান-বরখাস্তের পর বেশ কয়েকবার কারাগারে ও মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করে নাসির। বর্তমান জিএম মিন্টু জানান-নাসির হাই পিরেইন কর্তৃপক্ষের কোন কর্মচারী নয়। যদি সে এই পরিচয় দিয়ে কারো কাছ থেকে আর্থিক লেনদেন করলে তার জন্য তারা দায়ী থাকবেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন গন্যমান্য ব্যক্তি জানান-২০০০ সালে তার পিতার মৃত্যুর পর নাসির মাদক ও জুয়ার নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে। এমনকি মাদক ও জুয়ার কারণে অতিষ্ট হয়ে তার গর্ভধারিনী মা অস্ত্র দিয়ে নাসিরকে পুলিশে সোপর্দ করতে বাধ্য হয়। ঈদগা এলাকার চারজন অশিক্ষিত ব্যক্তিকে সৌদি আরব থেকে আসার পর ভিসা এনেছে তাদেরকে সৌদি আরবের ভিসা দিবে বলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়েনেয় দালাল নাসির। তেমনি একজন ভুক্তভোগী হোটেল মোটেল জোনের ব্যবসায়ী কায়সার। তাকে দোকান থেকে বের করে দেবে বলে বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করে আসছে নাসির। এদিকে নাসিরের এসব অপকর্ম ও অত্যাচার থেকে বাঁচতে সম্মিলিত ব্যবসায়ী সংগঠন গঠন করে শতভাগ সততার সাথে ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য সাত সদস্যের আহবায়ক করে প্রায় ৫০ জনের একটি কমিটি করে দেওয়া হয়। আর এই কমিটিতে স্থানীয় যুব সমাজের প্রতিনিধি তাদের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বলে আশ্বাস প্রদান করে। এরপর থেকে কয়েক মাসের জন্য ঠান্ডা হয়ে যায় নাসির। কিন্তু গত ৫-৬ মাস ধরে ব্যবসার মৌসুমী ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মোটা নাসির। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে থাকার সুযোগে বিভিন্ন জাল তৈরি করে বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট এবং দোকানে টাকা দাবি করে আসছে নাসির। অন্যথায় ফ্ল্যাট ছেড়ে দেওয়াসহ দোকান ভেঙে বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আছে প্রতিদিন। এসময় সবাই সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদ করে এবং তাদের অত্র ব্যবসায়ী সংগঠনের উপদেষ্টা এবং স্থানীয় কাউন্সিলর ও সমাজের নেতৃবৃন্দ সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করায় সে কিছুটা পিছু হটে। সেসব থেকে বেরিয়ে এসে নাসির বর্তমানে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছে। সে সুকৌশলে জাল স্ট্যাম্প করে জাল কাগজপত্র তৈরি করে নানাভাবে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের আইনের হুমকি নিয়ে যাচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে এবং স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে-সেই এলাকার চিহ্নিত একজন ধান্দাবাজ এবং পেশাদার প্রতারক চক্রের অন্যতম নেতা তার সক্রি সদস্য ছিল ২ সহোদর। বর্তমানে তারা দুজনেই কারাগারে। এরা হল-লাইট হাউসের মৃত ফরিদুল আলমের পুত্র আবু সালেহ। সে বছর খানেক আগে পাহাড়ের উপরে বাড়িতে তালা দিয়ে চার জনকে পুড়িয়ে মারার মত আলোচিত ঘটনার মামলার অন্যতম আসামী। তার অপর সহযোগী সাদেক হোসেন খোকা প্রকাশ খোকাইয়া। সে কিছুদিন আগে মোটর সাইকেল ছিনতাই মামলায় আটক হয়ে কারাগারে যায়। মাস খানেক পর জামিনে বেরিয়ে ফের জমজমাট ভাবে মাদক ব্যবসা শুরু করে মোটা নাসিরের অর্থায়নে আবু সালেহকে ছাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।

কক্সবাজার পৌরসভার ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী মোরশেদ আহমেদ বাবু জানান, আমি অবগত ইতোমধ্যে অবগত হয়েছি বেশ কিছু অসাধু ব্যক্তি বিভিন্ন স্থানে আমার সাথে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ছবি উঠিয়ে অথবা আমার পারিবারিক অনুষ্ঠানে যেখানে আমরা পুরো এলাকাবাসীকে দাওয়াত করি আমার পিতার জিয়াফত মৃত্যুবার্ষিকী ও ঈদুল আযহা ঈদুল ফিতর ইত্যাদি অনুষ্ঠানে আমাদের বাড়িতে এসে ছবি তুলে সেই ছবিগুলো ব্যবহার করে নানা অপকর্ম করে যাচ্ছে।

মাদকাসক্ত দালাল নাসির নানা ভাবে হুমকি ধমকি দিয়ে স্থানীয় লোকজনকে ভয়ের মধ্যে রাখার কারণে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস করছে না। এবিষয়ে পুলিশ সুপারের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।