ঢাকা রবিবার, ১৮ই মে ২০২৫, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২


পুলিশের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্কের অভিযোগ


৯ জানুয়ারী ২০২০ ১০:৩০

বিয়ের প্রলোভনে প্রেমিকার সাথে শারীরিক সর্ম্পকের অভিযোগ উঠেছে এবার স্বয়ং পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধেই। চাপে পড়ে এফিডেভিটে বিয়ে করে সাফ অস্বীকারের পর অন্যত্র বিয়ে করেন তিনি। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়ে বিচার না পেয়ে থানায় মামলা করলেও গত ২৫ দিনে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য অধরা রয়েছেন।

জানা যায়, বহাল তবিয়তে ঢাকার মেট্রোপলিটনের নিজ কর্মস্থলে কর্মরত থেকে মামলা তুলে নিতে বিভিন্ন হুমকী-ধামকী ছাড়াও নানান কথাবার্তা ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রতারণা ও ধর্ষণের শিকার কলেজছাত্রী। এদিকে জামিন না নিয়ে দ্বিতীয় দফা ছুটি কাটিয়ে আজ বুধবার ফের কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন অভিযুক্ত। ইউনিট প্রধান সাফ বলছেন, এটা তার (অভিযুক্ত) ও কোর্টের ব্যাপার। সুত্র জানায়, প্রতারণা ও ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রীর বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার একটি চরাঞ্চলে। আর অভিযুক্ত প্রতারক ও ধর্ষণে অভিযুক্ত হচ্ছেন একই উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের রামগোবিন্দপুর গ্রামের মো. শহিদুল ইসলামের ছেলে আশিক মাহমুদ পুষ্প। তার বিরুদ্ধে গত ১৫ ডিসেম্বর প্রতারণা করে ধর্ষণের অভিযোগে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন কলেজছাত্রী। এরপর থেকে মামলা তুলে নিতে ওই কলেজছাত্রীর মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠিয়ে ও ফোন করে বিভিন্ন ধরনের হুমকী দেওয়া হচ্ছে।

জানা যায়, মামলার পরেও গত ২৫ দিনে কমপক্ষে দু’দফায় ছুটি নিয়ে বাড়ি ও শ্বশুড়বাড়িতে অবস্থান করেছেন। এ খবর বাদী পুলিশকে জানালেও তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। আরো বলা হয়, এখানে ধরার নিয়ম নেই। এ অবস্থায় ছুটি কাটিয়ে বুধবার তিনি নিজ কর্মস্থল পিওএম (পশ্চিম) বিভাগ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে ফিরেছেন। অভিযোগকারী ওই কলেজছাত্রী জানান, জেলার একটি উপজেলার সরকারি কলেজের সম্মান তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছেন। তার বড়বোনের বিয়ে হয়েছে পাশের একটি গ্রামে। বড়বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে মো. আশিক মাহমুদ পুষ্পের সাথে। পুষ্প পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি করেন। তিনি তাকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সর্ম্পক গড়ে তোলে। এক পর্যায়ে বিয়েতে রাজী করায়। কিন্তু নিকাহ রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে বিয়ে না করে একটি এফিডেভিট করে সময় মতো বিয়ে করবে বলে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়। নথি ঘেঁটে দেখা যায়, গত বছরের ৪ অক্টোবর ময়মনসিংহের নোটারি পাবলিক কার্যালয়ে ওই এফিডেভিটটি নিবন্ধিত (নং-৬৬৩) হয়।

ওই ছাত্রী আরও জানান, এক পর্যায়ে ওই এফিডেভিটের বদৌলতে পুষ্প তার বাড়িতে থেকে সাথে স্বামী-স্ত্রীর মতো মেলামেশা করতে থাকে। কিন্তু তিনি ও তার পরিবারের লোকজন পুষ্পকে বারবার চাপ দেয় কাজী ডেকে বিয়েটি রেজিস্ট্রি করার জন্য। কিন্তু তার অসুস্থ মা সুস্থ হলে বিয়ে রেজিস্ট্রি করা কথা বলে চলে যান। এরপর তিনি বিয়ে করার জন্য ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। তিনি বলেন, তিনি যৌতুক দাবি করা প্রসঙ্গে পুষ্পকে ফোন করলে সে এক পর্যায়ে সবকিছু অস্বীকার করে নানা প্রকার হুমকি ধামকি দিতে থাকেন। এর মধ্যে সে অন্যত্র বিয়ে করে ফেলে। ওই পুলিশ সদস্য চাকুরিতে বহাল থেকে তার লোকজনকে দিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপবাদ ছাড়াও মামলা তুলে নেওয়ার হুমকী দিচ্ছে। সামনে পরীক্ষা থাকায় এখন তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। সেই সাথে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রীর বাবা জানান, তিনি একটি বায়িং হাউজে চাকরি করতেন। মেয়ের এই সমস্যার কারণে তিনি চাকরি ছেড়েছেন।

ওই ছাত্রী জানান , আমার মানসম্মান সব শেষ করে দিয়েছে ওই আশিক। একজন কনস্টেবল হয়ে বিয়ের নামে আমার উচ্চশিক্ষিতা মেয়ের চরম সর্বনাশ করেছে। এখন সে পুলিশি দাপট কাজে লাগাচ্ছে। আমি পুষ্পের চাকরিস্থলসহ পুলিশের সিকিউরিটি সেল ও পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবরে অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে অভিযোগের তদন্ত মাঝ পথে থেমে গেছে। ছাত্রীর বাবা প্রশ্ন করে বলেন, পুলিশ বাহিনী কেন একজন অপরাধীর দায় নিচ্ছে তা আমার কাছে বোধগম্য নয়। সাধারণ মানুষ কি তাহলে ন্যায় বিচার পাবে না। ঈশ্বরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক রেজাউল করিম জানান, থানা থেকে সকল কাগজপত্র অভিযুক্তের কর্মস্থলের কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন সেখান থেকেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নতুনসময়/আইকে