ঢাকা রবিবার, ১৮ই মে ২০২৫, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২


বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান: ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদা দাবি ইউএনওর


১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:৪৮

মহান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ম্যাগাজিন প্রকাশের নামে ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদা দাবি করেছেন বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আয়েশা হক।

চাঁদা না পেয়ে বিভিন্নভাবে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি ব্যবসায়ীদের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে রোববার তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জরিমানা দেন। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন উপজেলার বিভিন্ন স্তরের ব্যবসায়ীরা।

অভিযোগে জানা গেছে, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আয়েশা হক বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদা দাবি করেন। এর মধ্যে একজন বাহুবল উপজেলা ব্রিকস ফিল্ড সমিতির সভাপতি হাজী মো. দুলাল মিয়া। আয়েশা হক এই ব্যবসায়ীর কাছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন।

দুলাল মিয়ার অভিযোগ, বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়েশা হক বিভিন্ন সময় এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১২-১৩ দিন আগে ব্যবসায়ী নেতা আছকর আলীর মোবাইল দিয়ে দুলাল মিয়ার সঙ্গে কথা বলেন ইউএনও।

এ সময় তিনি বিজয় দিবস ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ম্যাগাজিন প্রকাশের জন্য দুলাল মিয়ার কাছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। তাৎক্ষণিক দুলাল মিয়া সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দেন।

কিন্তু দু’দিন ধরে ইউএনও আয়েশা হক তার ব্যবহৃত সরকারি মোবাইল ফোন দিয়ে দুলাল মিয়ার কাছে বারবার ফোন করেন। দুলাল মিয়া তার (ইউএনও) ফোন রিসিভ না করায় তিনি সিওকে দিয়েও একাধিকবার ফোন করিয়েছেন।
কিন্তু এত টাকা দেয়ার সামর্থ্য না থাকায় দুলাল মিয়া তাদের ফোন রিসিভ করেননি। দুলাল মিয়া অভিযোগ করেন, টাকা না দেয়ার কারণে ব্যবসায়ীদের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন আয়েশা হক। রোববার বিকালে বিভিন্ন ব্রিকস ফিল্ডে অভিযান চালান তিনি। এ সময় মোটা অঙ্কের টাকা জরিমানা করা হয়।

বাহুবল উপজেলা ব্রিকস ফিল্ড মালিক সমিতির সভাপতি হাজী মো. দুলাল মিয়া বলেন, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমার কাছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। কিন্তু এত টাকা আমার পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়।

তাই তিনি বারবার ফোন করলেও আমি ফোন রিসিভ করিনি। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। যার ফলে তিনি আমার ইটভাটা ‘সামিম ব্রিকস’-এ অভিযান চালান। আমার প্রতিষ্ঠানের সব কাগজপত্র ঠিক থাকার পরও ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। এছাড়া আমার আত্মীয়-স্বজনদের ইটভাটায় মোটা অঙ্কের টাকা জরিমানা করেন। এ ব্যাপারে তিনি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেবেন বলেও তিনি জানান। দুলাল মিয়া বলেন, ইউএনও আয়েশা হক শুধু বিজয় দিবস উপলক্ষে চাঁদা দাবি করেননি।

বিভিন্ন সময় তিনি উন্নয়ন কাজে বাধা সৃষ্টি করেন। তুচ্ছ বিষয় নিয়ে অসহায় দরিদ্র শ্রমিকদের জেল-জরিমানা দেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে শ্রমিক নেতা আসকর আলী বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনার জন্য আমার মোবাইল দিয়ে ইউএনও দুলাল মিয়ার কাছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা চান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা-ইউএনও আয়েশা হক বলেন, হবিগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে একটি বিশেষ ম্যাগাজিন প্রকাশ করার জন্য আমরা বিজ্ঞাপন বাবদ টাকা চেয়েছি। কোনো ধরনের চাঁদা দাবি করা হয়নি। এছাড়া উন্মুক্ত সভার মাধ্যমে এই টাকা চাওয়া হয়েছিল। তবে গত দু’দিন তিনি ব্যবসায়ীর কাছে একাধিক ফোন করার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, আমি বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানের দাওয়াত দেয়ার জন্য ফোন করছিলাম। সব সময় টাকার জন্য ফোন করেছি সেটা নয়।

সাংবাদিকের বিভিন্ন প্রশ্নের এক পর্যায়ে তিনি উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। এ সময় চাঁদা দাবির বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেন, আমরা কোনো পরিবেশ দূষণকারীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান করব না। জেলা প্রশাসন থেকে পরিষ্কার বিষয়টি আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন।

প্রয়োজনে সরকারি কোষাগার থেকে ম্যাগাজিনের খরচ বহন করা হবে। অভিযোগ করে ইউএনও বলেন, দুলাল মিয়া শুধু একজন ব্যবসায়ী নন। তিনি আমার বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের ঠিকাদারও। কাজের জন্য আমি অনেকবার তাকে ফোন দিয়েছি। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তিনি বলেন, দুলাল মিয়া বাহুবল উপজেলা ব্রিকস ফিল্ড সমিতির সভাপতি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত ইটভাটাগুলোতে অভিযান চালানোর কারণে তিনি আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন কথা বলছেন।

নতুনসময়/আইকে