ফরিদপুরে বন্দুকযুদ্ধে আলোচিত ফাতেমা হত্যার আসামী নিহত

পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে ফরিদপুরের আলোচিত বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী কিশোরী ফাতেমাকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার সাথে জড়িত আসামি ইয়াসিন শেখ নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। রোববার (১৫ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত দুইটার দিকে ফরিদপুর শহরের লঞ্চঘাট জোড়া ব্রিজের সামনে এ ঘটনা ঘটে। সে শহরের ওয়ারলেস পাড়ার মনি শেখের পুত্র। তার বিরুদ্ধে ৩টি মামলা বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, রাজেন্দ্র কলেজের মেলার মাঠের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে আসামীর ছবি সংগ্রহ করে আসামী ইয়াছিনকে চিহ্নিত করা হয়। এরপর স্থানীয়দের সহয়তায় তাকে আটক করা হয়। গতরাতে তাকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধার করতে গেলে আসামী ও পুলিশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি গুলি বিনিময় হয় এসময় নিহত হয় আসামী ইয়াছিন। এসময় আহত হয় তিন পুলিশ সদস্য। পরে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসাপাতলে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ লাশের ময়নাতদন্তের জন্য তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছে।
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার বহুল আলোচিত প্রতিবন্ধী কিশোরী ফাতেমাকে বিকেল বেলা রাজেন্দ্র কলেজের মেলার মাঠ থেকে তুলে নিয়ে যায় ইয়াছিন নামে ওই ধর্ষক। পরের দিন টেলিগ্রাম অফিসের পাশ থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
গতকাল রোববার সন্ধ্যায় চাঞ্চল্যকর বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ১৪ বছরের কিশোরী ফাতেমা নিখোঁজ হওয়ার ফুটেজ প্রকাশ করা হয়েছে। রোববার রাত ৮টার দিকে জেলা পুলিশের অফিসিয়াল পেইজে ১১ সেকেন্ড ও ১৯ সেকেন্ডের দু’টি ফুটেজ প্রকাশ করা হয়। একইসাথে প্রকাশিত ওই ফুটেজে চিহ্নিত সন্দেহভাজন খুনির পরিচয় শনাক্ত করে দিতে পারলে ব্যক্তিগতভাবে তাকে পুরস্কৃত করার ঘোষণা দেয় মামলার তদন্তদকারী কর্মকর্তা।
ডিস্ট্রিক্ট পুলিশ, ফরিদপুর নামের ফেসবুক পেইজে প্রকাশিত ওই সিসি ক্যামেরা ফুটেজে দেখা গেছে, শহরের রাজেন্দ্র কলেজের মাঠে অনুষ্ঠিতব্য ব্রান্ডিং মেলার মাঠ থেকে বাঁম হাত ধরে ফাতেমাকে মাঠের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে সন্দেহভাজন ওই খুনি।
প্রথম ফুটেজটি গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটের। ১৯ সেকেন্ডের ওই ফুটেজে দেখা যায় সন্দেহভাজন ওই খুনি মেলার শিশু কর্ণারের দিকে একটি স্টলের পেছন দিক দিয়ে বের হয়ে বাশের খুঁটির নিকট এসে উকিঝুঁকি দিচ্ছে। সেখানে তার গতিবিধিই ছিল সন্দেহজনক।
এরপরের ১১ সেকেন্ডের আরেকটি ফুটেজে দেখা যায়, ফাতেমার হাত ধরে মেলার বাইরে নিয়ে যাচ্ছে সন্দেহভাজন ওই খুনি। ফুটেজে শনাক্ত ওই সন্দেহভাজন খুনির বয়স আনুমানিক ২৫ থেকে ৩০ বছর। তার পরণে অফ হোয়াইট রঙের কালো স্টেপের ফুলহাতা জামা ও একটি ফেড করা জিন্স প্যান্ট। আর ফাতেমার পরণে ছিল কমলা রঙের একটি পায়জামা। এই পায়জামাটি পুলিশ ফাতেমার লাশের সাথে জব্দ করে।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে নিখোঁজ হন বাক ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী কিশোরী ফাতেমা বেগম (১৪)। এর পরেরদিন শুক্রবার সন্ধ্যার একটু পর সাড়ে ৬টার দিকে রাজেন্দ্র কলেজের পাশে টেলিগ্রাম কার্যালয়ের চত্ত্বর থেকে ফাতেমার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় ফাতেমার মুখ থেতলানো ছিল। রক্ত জমাট বাঁধা। বিবস্ত্র ফাতেমার গলায় ফাঁস দেয়া ছিল। ফাতেমাকে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। এখনও ফাতেমার লাশের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ফাতেমার বাবার নাম এলাহি শরিফ। তিনি রিক্সা চালানোর পাশাপাশি সোনালী ব্যাংকের এটিএম বুথের গার্ড হিসেবে কাজ করেন। তিন মেয়ের মধ্যে ফাতেমা বড়। ফাতেমা জন্ম থেকেই বুদ্ধি প্রতিবন্ধী (অটিস্টিক)। ওই কিশোরী বাবার সাথে শহরের রাজেন্দ্র কলেজ সংলগ্ন এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতো।
নতুনসময়/আইকে