মাদ্রাসা ছাত্র হত্যায় ৫ শিক্ষক আটক

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়রাডাঙ্গা গ্রামে মাদ্রাসা ছাত্র আবির হুসাইনকে (১১) বলাৎকারের পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার মাথা বিচ্ছিন্ন করে হত্যা করা হয়। নিহত আবির কয়রাডাঙ্গা গ্রামের নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র।
বুধবার সকালে গ্রামের একটি আমবাগান থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর জেলা পুলিশের কয়েকটি টিম অনুসন্ধানে মাঠে নামে। দিনভর অনুসন্ধানের পর হত্যার নেপথ্য উন্মোচনে অগ্রসর হয় পুলিশ।
এদিকে, র্যাব সদর দপ্তর থেকে বুধবার হেলিকপ্টারযোগে ডগস্কোয়াড নিয়ে র্যাবের একটি বিশেষ দল হত্যা রহস্য ও লাশের মাথা উদ্ধার করতে চুয়াডাঙ্গায় অভিযান শুরু করেছে।
চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান জানান, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) সদর দপ্তর থেকে বুধবার বিকালে হেলিকপ্টারযোগে ডগস্কোয়াড নিয়ে র্যাবের একটি বিশেষ দল হত্যা রহস্য ও লাশের মাথা উদ্ধার করতে চুয়াডাঙ্গা এসেছে। র্যাবের এই বিশেষ টিম বুধবার দিবাগত রাত ১১টা পর্যন্ত ঘটনাস্থলসহ আশপাশের কয়েক কিলোমিটার অনুসন্ধান চালিয়েও নিহত মাদ্রাসাছাত্রের মাথা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়নি।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, মাদ্রাসাছাত্র হত্যার নেপথ্যে আমরা বেশ কিছু তথ্য উদঘাটনে সক্ষম হয়েছি। সাম্প্রতিক গুজবের সঙ্গে এ হত্যার কোনো যোগ নেই। সুকৌশলে হত্যার ঘটনাটি ভিন্নখাতে দিতেই নিহত ওই ছাত্রের মাথা কেটে গুম করা হয়েছে।
এ ঘটনার পর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল মাদ্রাসার পাঁচ শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। আটকদের হাতের ছাপ সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে ঢাকায়। পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়রাডাঙ্গা গ্রামে কয়েক বছর আগে স্থানীয় বিত্তশালীদের আর্থিক সহযোগিতায় গড়ে তোলা হয় একটি মাদ্রাসা ও এতিমখানা। মাদ্রাসাটির নাম দেওয়া হয় নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা। বর্তমানে মাদ্রাসাটি অধ্যায়নরত রয়েছে প্রায় ৭১ শিক্ষার্থী। চুয়াডাঙ্গা ছাড়াও আশপাশের জেলা থেকে অধ্যায়নরত আছেন বেশ কিছু ছাত্র।
মাদ্রাসাটির মুহতামিম মুফতি আবু হানিফ জানান, ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে আবির হুসাইন প্রায় এক বছর আগে এই মাদ্রাসায় ভর্তি হয়। তার মা কমেলা খাতুন তাকে ভর্তি করান। আবির হুসাইন মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়াশুনা করত। মুফতি আবু হানিফের মতে মঙ্গলবার এশার নামাজের একটু আগে আবির হুসাইন নিখোঁজ হয়।
স্থানীয়দের সহযোগিতায় গ্রামের বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি করেও আমরা তার সন্ধান মেলাতে পারেনি। এরপর সকালে গ্রামবাসী মাদ্রাসার অদূরে একটি আমবাগানে আবিরের মাথাবিহীন লাশ পড়ে থাকতে দেখে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে লাশের ময়নাতদন্তকারী এক চিকিৎসকের বর্ণনা দিয়ে মো.কলিমুল্লা গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ওই ছাত্রকে দীর্ঘদিন ধরে যৌন নির্যাতন চালানো হতো। নির্যাতনের ঘটনাটি ধামাচাপি দিতেই তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি।
মাদ্রাসাছাত্রকে যৌন নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া গেছে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. শামীম কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে সে রকমই মনে হয়েছে। বিষয়টি আরো নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমরা ডিএনএ টেস্ট ও নিহতের শরীরের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকাতে পাঠিয়েছি।