ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ১৫ই মে ২০২৫, ২রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২


আলোচনায় এমপি সম্ভুর সঙ্গে মিন্নির আইনজীবীর গোপন বৈঠক


২৩ জুলাই ২০১৯ ০৩:৫৭

বরগুনার বহুল আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী ও তাঁর স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে আসামি করা, রিমান্ড শুনানিতে মিন্নির পক্ষে আইনজীবীদের দাঁড়াতে অপারগতা প্রকাশ, তড়িঘড়ি করে তাঁর স্বীকারোক্তি আদায় এবং সর্বশেষ মিন্নির জামিন শুনানির আগের দিন রাতে স্থানীয় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সঙ্গে তাঁর আইনজীবীর গোপন বৈঠক—এসব ঘটনা আলোচনা-সমালোচনা হওয়ার পাশাপাশি প্রশ্নও উঠেছে। এ আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অনেকেই এ বৈঠক নিয়ে অনেক রকম প্রশ্ন তুলছেন। এদিকে মিন্নির বাবার অভিযোগ এর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন শম্ভু। রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার পর মামলা দায়েরের বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া এবং এর পরের ঘটনার পেছনে কলকাঠি তিনিই নাড়ছেন। তাঁর ছেলে সুনাম দেবনাথ প্রকাশ্যে খুনের মামলাটি প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন বলে তিনি মনে করেন।

সংসদ সদস্য শম্ভুর বিরুদ্ধে শুরু থেকেই মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর মামলায় প্রভাব খাটানোর অভিযোগ করে আসছেন। মিন্নির জবানবন্দি দেওয়ার দিন আদালত চত্বরে চিৎকার করে তিনি বলেছিলেন, সবই শম্ভু বাবুর খেলা। তাঁর মাদক সম্রাট ছেলে সুনাম দেবনাথকে বাঁচাতেই আমার মেয়েকে ফাঁসানো হচ্ছে।

মোজাম্মেল হোসেন কারাগারে মিন্নির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসে দাবি করেন, রিমান্ডে তাঁর মেয়েকে নির্যাতন করে আদালতে জবানবন্দি দিতে বাধ্য করা হয়েছে। পুলিশ যা শিখিয়ে দিয়েছে তাই বলতে বাধ্য হয়েছেন মিন্নি। না হলে তাঁকে আরো ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল পুলিশ। মোজাম্মেল হোসেন মেয়ের জামিনের জন্য বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী আসলামকে নিয়োগ করেন। শনিবার ঢাকা থেকে যাওয়া আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিনিধিদল আসলামের সঙ্গে কথাও বলে। কিন্তু ওই দিন রাতেই বরগুনা সদর রোডে সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ব্যক্তিগত ল চেম্বারের পেছনের একটি কক্ষে শম্ভুর সঙ্গে আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলামের বৈঠক হয়। তাঁর সঙ্গে বরগুনা বারের সভাপতি আবদুর রহমান নান্টুও ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে, বরগুনা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুর রহমান নান্টু এবং সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী আসলাম রাত ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে সংসদ সদস্য শম্ভুর ল চেম্বারে প্রবেশ করেন। এমপিপুত্র সুনাম দেবনাথ ও বরগুনার অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আক্তারুজ্জামান বাহাদুরও সেখানে ছিলেন। তাঁরা কক্ষে প্রবেশের পর ভেতর থেকে সুনাম দরজা আটকে দেন। এ সময় কক্ষের বাইরে নিহত রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফও অপেক্ষমাণ ছিলেন। রাত ৯টা ৫৩ মিনিটের দিকে সুনাম দেবনাথ কক্ষ থেকে বের হয়ে দুলাল শরীফের সঙ্গে কানে কানে কথা বলেন। এরপর দুলাল শরীফ চেম্বার থেকে দ্রুত বের হয়ে যান। রাত ১০টা ১৫ মিনিটে মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম, সভাপতি আবদুর রহমান নান্টু ও এপিপি আক্তারুজ্জামান বাহাদুর সংসদ সদস্যের চেম্বার ত্যাগ করেন। তাঁরা ৩০ মিনিটের মতো সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে অবস্থান করেন।

মাহাবুবুল বারী আসলামকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এমপি শম্ভু একজন সিনিয়র আইনজীবী। তাঁর সঙ্গে দেখা করেছি। তবে রিফাত হত্যা মামলা নিয়ে কোনো কথা হয়নি। সংসদ সদস্য কি তাঁদের ডেকেছিলেন, নাকি তাঁরা ইচ্ছা করেই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেছেন—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আসলাম বলেন, এমপি বারের সভাপতিকে ফোন দিয়েছিলেন, তিনি আমাকে জানানোর পর আমি সভাপতির সঙ্গে গিয়েছিলাম।

মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর সংসদ সদস্য শম্ভুর বিরুদ্ধে মামলায় প্রভাব খাটানোর অভিযোগ করার পর তাঁর সঙ্গেই আইনজীবীর এ বৈঠক হলো। এর সমালোচনা করে মোজাম্মেল সাংবাদিকদের বলেন, রাতের সেই বৈঠকের পরেই বুঝেছিলাম, ন্যায়বিচার আমার মেয়ের কপালে নেই। যদি থাকত তাহলে আসামি শনাক্তের কথা বলে আমার মেয়েকে মামলায় জড়ানো হতো না। রিমান্ডের নামে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হতো না।

এ ব্যাপারে ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু সাংবাদিকদের বলেন, শনিবার রাতে আইনজীবীরা চা খেতে আমার ল চেম্বারে এসেছিলেন।

উল্লেখ্য, এমপিপুত্র সুনাম দেবনাথের বিরুদ্ধে এক বছর আগেই জেলা ছাত্রলীগ সংবাদ সম্মেলন করে মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ ও মাদক চোরাকারবারে জড়িত নয়ন বন্ডকে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ তুলেছিল।

নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর বরগুনার বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছিল। তারা বলছিল, নয়ন বন্ড নিহত হওয়ায় তার আশ্রয়দাতারা আড়াল হয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে।